Advertisement
E-Paper

পাঁচ বছরে ৬ কোটি! নতুন চাকরির দাবি সামনে এনে বিতর্কে মোদী সরকার

লোকসভা ভোটের প্রচারের মধ্যে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা মাঠে নামায় ফের স্পষ্ট হল যে, নতুন চাকরির অভাব তথা বেকারত্ব নিয়ে মোদী সত্যিই চাপে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৭
পোশাকি: ভোট প্রচারে অরুণাচলপ্রদেশে স্থানীয় পোশাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। ছবি: এপি।

পোশাকি: ভোট প্রচারে অরুণাচলপ্রদেশে স্থানীয় পোশাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। ছবি: এপি।

গত লোকসভা ভোটের প্রচারের সময়ে নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে বছরে দু’কোটি নতুন চাকরি হবে।

তাঁর সরকারের মেয়াদ ফুরনোর মুখে প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় সেই চাকরি! এ নিয়ে মোদী সরকারকে নিত্যদিন বিঁধছে বিরোধীরা। সেই আক্রমণ সামাল দিতে এ বার আসরে নামলেন কেন্দ্রের নতুন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন। নানা সরকারি প্রকল্পের পরিসংখ্যান দেখিয়ে তাঁর দাবি, মোদী সরকারের পাঁচ বছরে অন্তত ৬ কোটি চাকরি হয়েছে। দেশে ৫০ কোটি কর্মী রয়েছেন ধরলে, পাঁচ বছরে চাকরির সংখ্যা ১২% বেড়েছে।

লোকসভা ভোটের প্রচারের মধ্যে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা মাঠে নামায় ফের স্পষ্ট হল যে, নতুন চাকরির অভাব তথা বেকারত্ব নিয়ে মোদী সত্যিই চাপে। তাঁর চাপ বাড়িয়ে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম এ দিন পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এনএসএসও বলছে, ৪ কোটি ৭০ লক্ষ চাকরি খোয়া গিয়েছে। বেকারত্বের হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। কেন? শ্রী মোদী জবাব দেবেন?’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কৃষ্ণমূর্তি তাঁর দাবি প্রমাণে ১০টি মন্ত্রকের কর্মসংস্থান তৈরির সরকারি প্রকল্পের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। যেমন, স্কিল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রকের প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা, ছোট-মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান তৈরি প্রকল্প, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনা। ২০১৪-১৫ থেকে এই ১০টি প্রকল্পে ৬ কোটির বেশি চাকরি হয়েছে বলে তাঁর হিসেব। তবে তিনি এটাও মেনে নিয়েছেন যে শুধু নতুন চাকরি নয়, ভাল মানের চাকরি তৈরিটাও গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক বৃদ্ধির ফলে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাল চাকরির প্রত্যাশা বেড়েছে। তারা যে চাকরি খুঁজছে, আর যা মিলছে, তার মধ্যে ফারাক রয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র শামা মহম্মদ বলেন, ‘‘মোদী সরকার তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে। তাই ৩,৭০০ পিএইচডি ডিগ্রিধারী পিওনের চাকরি চেয়ে আবেদন করেছে। ১৪টি ঝাড়ুদার পদের জন্য ৪ হাজার এমবিএ-ইঞ্জিনিয়ার দরখাস্ত করেছে। ৮২ লক্ষ স্নাতকোত্তর ও ইঞ্জিনিয়ার হেল্পারের চাকরি চাইছে।’’

কৃষ্ণমূর্তির দাবি, সরকারি প্রকল্পে ৬ কোটি চাকরির পাশাপাশি ২০১৭-র সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯-এর জানুয়ারির মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের খাতায় নতুন ৭৬.৪৮ লক্ষ নাম উঠেছে। অর্থাৎ এঁরা চাকরি পেয়েছেন। এর বাইরেও ২০ জনের কম কাজ করেন, এমন সংস্থা ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে বহু চাকরি হয়েছে। যার হিসেব নেই।
কৃষ্ণমূর্তি যুক্তি দিয়েছেন, শিল্প সংস্থাগুলির বার্ষিক সমীক্ষা এবং এনএসএস প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৬-র মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি বাদ দিয়ে প্রকৃত বেতন ৫.৫% হারে বেড়েছে। চাকরি বেড়েছে বছরে ৩.৭% হারে। সেই হিসেবে পাঁচ বছরে চাকরির সংখ্যা ১২% বাড়ায় কোনও ভুল নেই। তাঁর যুক্তি, চাকরিপ্রার্থীদের থেকে চাকরির সংখ্যা বেশি বলেই প্রকৃত বেতন বেড়েছে।

কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, সমস্যা তো শুরু হয়েছে ২০১৬-র পরে, নোট বাতিল এবং তার পরে জিএসটি চালু করা থেকে। এই জোড়া ধাক্কায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে বহু চাকরি গিয়েছে। আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসেব দিয়েও চাকরির সংখ্যা বোঝা সম্ভব নয়। কারণ অসংগঠিত ক্ষেত্রে থাকা বহু সংস্থা এখন সংগঠিত ক্ষেত্রে এসেছে।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী কর্মসংস্থানকেই লোকসভা ভোটের প্রধান ইস্যু করতে চাইছেন। সরকার সন্ত্রাস মোকাবিলা থেকে মিশন শক্তি— নানা দিকে নজর ঘোরাতে চাইলেও, চাকরি-রোজগার নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজের শক্তি প্রদর্শন করছেন, মানুষের আবেগ নিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা কোনও ভাবেই তরুণদের চাকরির মতো বাস্তব সমস্যা থেকে তাঁকে নজর ঘোরাতে দেব না।’’ মোদীর ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’-এর স্লোগানের বদলে টুইটারে ‘#ম্যায় ভি বেরোজগার’ স্লোগান তুলেছে কংগ্রেস।

সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘এত চাকরি হয়ে থাকলে মোদী সরকারকে এনএসএসও-র সমীক্ষা লুকোতে হচ্ছে কেন!’’

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Krishnamurthy Subramanian Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy