ফাইল ছবি।
৫ মাসের ব্যবধানে দু’টি বড় ভোট বৈতরণী পেরতে গিয়ে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) বড় একটা শিক্ষাও নিলেন। টের পেলেন, ৫ মাসের ব্যবধানেই গণদেবতার মন কী ভাবে বদলে যায়! দেখলেন, মাসকয়েক আগেও যাদের ধর্তব্যের মধ্যে ধরেননি়, মূল লড়াইটা এ বার সেই বিজেপির সঙ্গেই তাঁকে লড়তে হল। কারণ, তাঁর মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাল কংগ্রেস। যা তেলঙ্গানায় কপাল ফেরাল বিজেপির!
গত ডিসেম্বরে তেলঙ্গানার বিধানসভা ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল কেসিআরের দল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)। ৫ মাস বাদে মে মাসে সেই তেলঙ্গানাতেই লোকসভা ভোটে নিজেদের জমি ধরে রাখতে বিজেপির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়তে হয়েছে টিআরএসকে।
রাজ্যের ১৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে টিআরএস ৯টি আসন পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু পছন্দের নিজামাবাদ আসনেই বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যেতে হয়েছে কেসিআর-কন্যা কবিতা কালভাকুন্তলাকে।
আরও লক্ষ্যণীয়, আগে যিনি নিজামাবাদের সাংসদ ছিলেন, কংগ্রেসের সেই মধু গৌড়ের কাছে কিন্তু হারেননি কেসিআর-কন্যা। হেরেছেন বিজেপি প্রার্থী অরবিন্দ ধর্মপুরীর কাছে। লড়াইয়ে কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানটি পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তেলঙ্গানার ১৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে টিআরএস ৯টি পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেসিআরের উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিজেপি। জিতেছে চারটি আসনে। নিজামাবাদ, করিমনগর, সেকেন্দরাবাদ ও আদিলাবাদ। চারটি আসনেই সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু সেই ভোট কংগ্রেস আর টিআরএসের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। ওই চারটি আসনেই হিন্দু ভোট একজোট হয়েছে বিজেপির পক্ষে। কংগ্রেস পেয়েছে সাকুল্যে তিনটি আসন।
আরও পড়ুন- সকালেই আডবাণী, জোশীর বাড়িতে মোদী, বললেন, ‘আপনাদের জন্যই সাফল্য’
আরও দেখুন- মোদী ঝড়ে বিধ্বস্ত বিরোধী শিবির, হারলেন যে হেভিওয়েটরা
তেলঙ্গানায় লোকসভা নির্বাচনের এই ফলাফল যে শুধুই টিআরএস বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলিকে চমকে দিয়েছে, তা নয়; বিস্মিত করেছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও। কারণ, লোকসভা হোক বা বিধানসভা ভোট, এর আগে কখনওই বিজেপি নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি তেলঙ্গানায়। বরাবরই থেকেছে ‘প্রান্তিক দল’ হয়ে। এর আগে কোনও জোটে না ভিড়ে তেলঙ্গানায় কোনও লোকসভা আসন পায়নি বিজেপি। এমনকী, এর আগে যত বার বিধানসভা ভোট হয়েছে তেলঙ্গানায়, তার কোনও বারই বিজেপির ঝুলিতে যায়নি কোনও আসন। ভোটপ্রাপ্তির হারেও বিজেপি বরাবরই থেকছে টিআরএস এবং কংগ্রেসের পিছনে। ‘ডিসট্যান্ট থার্ড’।
তেলঙ্গানায় বিজেপির উত্থানের কারণ কী কী?
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত নানা রকমের। তাঁদের বক্তব্য থেকে মোটামুটি ভাবে দু’টি কারণ বেরিয়ে এসেছে।
প্রথমত, তেলঙ্গানার ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের একটি বড় অংশই টিআরএস এবং কংগ্রেসের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। ফলে, হিন্দু ভোট একজোট হয়ে গিয়েছে বিজেপির দিকে।
দ্বিতীয়ত, তেলঙ্গানার ভোটাররা সম্ভবত একটি বার্তা দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন। সেটা হল- টিআরএস রাজ্যেই থাকুক। কিন্তু লোকসভায় পাঠানোর জন্য তাঁরা একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দলের প্রতিনিধিদের বেছে নেওয়ার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছেন।
রাজ্যে ভোটারদের মধ্যে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি এখন এতটাই তলানিতে যে, তেলঙ্গানায় বিরোধী দলের তকমাটা ধরে রাখার জন্যও এখন ‘ধর্তব্যের মধ্যে না থাকা’ বিজেপির সঙ্গে কঠিন লড়াইটা কংগ্রেসকে লড়তে হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, হিন্দু ভোট তেলঙ্গানায় কতটা একজোট হয়েছে, তার বড় প্রমাণ, কয়েক দশক ধরে মুসলিম প্রধান যে হায়দরাবাদ আসনটি ছিল আসাদুদ্দিন ওয়াইসির পরিবারের সদস্যদের হাতে, সেখানেও এ বার বিজেপি রীতিমতো উদ্বেগে ফেলে দিয়েছিল ওয়াইসিকে। ওয়াইসিকে বেশ লড়াই করেই জিততে হয়েছে। গণনার সময় কয়েক বার পিছিয়েও পড়েছিলেন তিনি। ঘটনা হল, যাদের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে, সেই কংগ্রেস কিন্তু টক্কর দিতে পারেনি ওয়াইসির সঙ্গে। টক্কর দিয়েছে ‘ধর্তব্যের মধ্যে না থাকা’ বিজেপিই। তার ফলে আগামী দিনে বিজেপিই তেলঙ্গানায় বিরোধী দল হয়ে উঠতে চলেছে।
কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময়েই নতুন রাজ্য হিসেবে তেলঙ্গানার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তেলঙ্গানায় কংগ্রেস সেই ভাবে নিজের ঘর গুছিয়ে তুলতে পারেনি। প্রদেশ কংগ্রেসে এমন কোনও বড় নেতা নেই, যিনি তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের হাল ধরতে পারেন। চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল তেলুগু দেশ পার্টির (টিডিপি) সঙ্গে জোটও তেলঙ্গানায় কংগ্রেসকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। কারণ, তেলঙ্গানার আলাদা রাজ্য হয়ে ওঠার মূল বাধা ছিল টিডিপিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy