Advertisement
E-Paper

‘ক্ষমা চাইব না’, বললেন প্রিয়ঙ্কা, কেন বাড়তি সময় হাজতে, রাজ্যের কৈফিয়ত চাইল সুপ্রিম কোর্ট

৫ দিনের হাজতবাসের পর বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া জামিনে মুক্তি পেয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রিয়ঙ্কা  বলেছেন, ‘‘৫ দিন ধরে হাজতে আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। এই রাজ্যের পুলিশের জন্যই আমাকে এই নির্যাতন সইতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আইন, শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।’’

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ১৪:৩৯
প্রিয়ঙ্কা শর্মা। - ফাইল ছবি।

প্রিয়ঙ্কা শর্মা। - ফাইল ছবি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করার জন্য কারও কাছে ক্ষমা চাইবেন না বলে জানালেন হাওড়ার বিজেপি নেত্রী প্রিয়ঙ্কা শর্মা। বললেন, ‘‘আমি কোনও ভুল করিনি।’’ ও দিকে, মুক্তির নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেন প্রিয়ঙ্কাকে আরও প্রায় এক দিন হাজতে পুরে রাখা হল, রাজ্য সরকারের কাছে সে ব্যাপারে কৈফিয়ত চাইল সুপ্রিম কোর্ট।

৫ দিনের হাজতবাসের পর বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া জামিনে মুক্তি পেয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, ‘‘৫ দিন ধরে হাজতে আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। এই রাজ্যের পুলিশের জন্যই আমাকে এই নির্যাতন সইতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আইন, শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।’’

গত কাল সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, মুক্তি পাওয়ার পর লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে প্রিয়ঙ্কাকে। কারণ, ‘‘কারও অধিকার খর্ব হলে বাক-স্বাধীনতার অধিকারও খর্ব হতে বাধ্য।’’

ও দিকে, গত কালই শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয় প্রিয়ঙ্কাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তার পরেও সারা রাত তাঁকে কেন জেলে রাখা হল, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কৈফিয়ত তলব করেছে শীর্ষ আদালত। কৈফিয়ত না দিতে পারলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ দেওয়া হবে বলেও শীর্ষ আদালতের ওই ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে।

গত শুক্রবার বিজেপি-র যুব মোর্চার নেত্রী হাওড়ার দাশনগরের বাসিন্দা প্রিয়ঙ্কা শর্মাকে হাওড়া কমিশনারেটের পুলিশ গ্রেফতার করে। হাওড়ার এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিযোগ করেছিলেন, প্রিয়ঙ্কা তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেই ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বিকৃত করা হয়েছে। মমতাকে দেখানো হয়েছে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সাম্প্রতিক মেটা-গালা অনুষ্ঠানের পোশাকে।

আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করে পোস্ট, বিজেপি নেত্রীকে ক্ষমা চাইতে বলে জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট​

আরও পড়ুন- দ্বিচারিতা করছে কেন্দ্র, মিম বিতর্কে বিজেপিকে তোপ দিব্যা স্পন্দনার​

সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রিয়ঙ্কাকে গ্রেফতার করে হাওড়া জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

সম্পন্ন ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে প্রিয়ঙ্কার বাবা রাজীব শর্মা এর পরই সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সোমবার প্রিয়ঙ্কার মামলা সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করে। মঙ্গলবার শুরু হয় শুনানি।

প্রিয়ঙ্কার আইনজীবী অমিত আগরওয়াল এবং এন কে কউলের সওয়াল শুনে দুই বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সঞ্জীব খন্না বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কাকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি কারও কোনও বক্তব্য অন্য কারও ভাবাবেগে আঘাত করে সেখানে তা অপরাধ।” বিচারপতিরা উল্লেখ করেন যে, প্রিয়ঙ্কা এক জন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির নেত্রী। সে ক্ষেত্রে তাঁর এ ধরনের পোষ্ট ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত যখন দেশে নির্বাচন চলছে। সুপ্রিম কোর্টের ওই ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন, বাকস্বাধীনতার অধিকার তত ক্ষণই থাকে যত ক্ষণ না তা অন্য কাউকে আঘাত করে। দুই বিচারপতি প্রথমে প্রিয়ঙ্কার জামিনের পূর্ব শর্ত হিসাবে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। অর্থাৎ ক্ষমা চাইলে তবেই মিলবে জামিন। বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাক্-স্বাধীনতার অধিকার প্রশ্নাতীত। কিন্তু তাকে কি অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করতে দেওয়া যায়? বাক্-স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার অন্য ব্যক্তি কী ভাবে তা গ্রহণ করছে, তার উপরও নির্ভর করছে। যদি অন্য ব্যক্তির খারাপ লাগে, তা হলে ক্ষমা চাইতে হবে, দুঃখপ্রকাশ করতে হবে, না হলে কয়েক দিন জেলে কাটাতে হবে।’’

পরে অবশ্য ফের তাঁরা প্রিয়ঙ্কার আইনজীবী এন কে কউলকে ডেকে পাঠিয়ে নির্দেশ বদল করে প্রিয়ঙ্কার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে সঙ্গে ক্ষমা চাওয়ারও নির্দেশ দেন।

প্রিয়াঙ্কার ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিতে অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ছবির মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা দেখিয়ে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনি কি এ ভাবে যে কারও ছবিতে যে কারও মুখ বসিয়ে দিতে পারেন?’’

প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী যুক্তি দেন, তিনি ওই ছবি তৈরি করেননি। সেটি পোস্ট করেছেন মাত্র। তার জন্য তাঁকে জেলে পোরা হয়েছে। এমন অনেকেই শেয়ার করছেন। বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কে তৈরি করেছে, আর কারা প্রচার করছে, তাতে কিছু এসে যায় না। আপনি ধরা পড়েছেন। আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’’ কউল বলেন, ২৫ বছরের একটি মেয়েকে যদি জামিনে মুক্তি পাওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতে হয়, তা হলে বাক্-স্বাধীনতার অধিকারে ধাক্কা লাগবে। তা ছাড়া গ্রেফতারের আগেই তিনি পোস্টটি মুছে দিয়েছিলেন। এটি শুধুমাত্র কার্টুন, রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক ছবি ছিল। বিজেপি নেতাদের নিয়েও কত রকম কার্টুন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের গ্রেফতারির ঘটনা আগে কোথাও ঘটেনি।

বিচারপতি সঞ্জীব খন্না বলেন, ‘‘নির্বাচন চলছে। উনি একজন বিজেপি নেত্রী। ফলে ওঁর পোস্ট বিপক্ষ শিবির অন্য ভাবে দেখতেই পারে। যদি আপনার কোনও নেতা হত, তা হলে আপনারও খারাপ লাগত। দুঃখপ্রকাশ করতে কি কোনও সমস্যা রয়েছে? আপনার কাজে অন্য কারও খারাপ লাগলে, ক্ষমা চেয়ে নিলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। এটা আইনত ভুলের প্রশ্ন নয়। উনি একজন রাজনৈতিক দলের নেত্রী। সাধারণ নাগরিক হলে কোনও সমস্যা হত না। রাজনৈতিক কর্মীদের ক্ষেত্রে বাক্-স্বাধীনতার সংজ্ঞা ভিন্ন।’’

কউল আপত্তি তুলে জানান, ‘‘কেন ওঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে? আগামিকাল যে কাউকে গ্রেফতার করা হবে একটা মিম শেয়ার করার জন্য। তার পর জামিনের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।’’ বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, তাঁরা শুধু এই ঘটনাতেই ক্ষমাপ্রার্থনার নির্দেশ দিচ্ছেন। আইনি বিষয়ের মধ্যেও ঢুকছেন না। প্রিয়াঙ্কাকে কোন আইনের কোন ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে বাক্-স্বাধীনতার অধিকারে হস্তক্ষেপ হয়েছে কি না, তার ফয়সালা পরে হবে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারি সূত্রের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট জামিনে মুক্তি দেওয়ার আগেই মামলা গুটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যার অর্থ, রাজ্যই বাক্-স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশের সাইবার সেল অবশ্য সোমবারই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই মামলার ক্লোজার রিপোর্ট পেশ করে রেখেছিল। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার আইনজীবী বা বিজেপি নেতাদের কাছে সেই তথ্য ছিল না।

আজ বিজেপি-র মঞ্চ থেকে যুব মোর্চার নেত্রী পুনম মহাজন বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে। তা চিন্তার বিষয়। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ প্রিয়াঙ্কাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু ক্ষমা চাইতে বলার ফলে বাক্-স্বাধীনতার উপরে প্রশ্নচিহ্ন এসে পড়বে।’’ দলের নেতা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কত কিছু হচ্ছে। আমাদের নেতাদের নিয়ে কত কিছু হচ্ছে।’’ কংগ্রেস নেতারা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি শেয়ার করার জন্য কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের নেত্রী দিব্যা স্পন্দনার উপরে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়েছিল। মণিপুরের সাংবাদিককে জেলে পোরা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী ছবি বিকৃত করা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিকর মন্তব্য করার অভিযোগে আগেও বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। কিছুদিন আগেই মেদিনীপুরের এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাছাড়া কয়েক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র গ্রেফতার হন একই কারণে। সেই ঘটনা নিয়ে তুমুল চাঞ্চল্য দেখা দেয়। বিভিন্ন মহল থেকে রাজ্য পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরে আইনি লড়াই লড়েন অম্বিকেশ। সেই ঘটনাতেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল আদালত।

Priyanka Sharma Supreme Court Lok Sabha Election 2019 প্রিয়ঙ্কা শর্মা সুপ্রিম কোর্ট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy