Advertisement
E-Paper

মোদীকে ট্যাবলো-বার্তা মমতা ও কেজরীবালের

কলকাতার হায়দরি মঞ্জিল। গোটা দেশ ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট যখন স্বাধীনতা উদ্‌যাপনে ব্যস্ত, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী সে সময় বেলেঘাটার এই বাড়িতে অনশনে। একটাই উদ্দেশ্য— হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা থামানো। 

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪০

কলকাতার হায়দরি মঞ্জিল। গোটা দেশ ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট যখন স্বাধীনতা উদ্‌যাপনে ব্যস্ত, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী সে সময় বেলেঘাটার এই বাড়িতে অনশনে। একটাই উদ্দেশ্য— হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা থামানো।

দিল্লির বিড়লা হাউস। এখন যার নাম গাঁধী স্মৃতি। ১৯৪৮-র ৩০ জানুয়ারি এই বাড়ির উঠোনেই নাথুরাম গডসের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন গাঁধী। যে গডসেকে আরএসএস পুজো করে বলে রাহুল গাঁধীর অভিযোগ।

দিল্লির রাজপথে দুই বাড়ির দৃশ্যই উঠে আসছে ২৬ জানুয়ারির সকালে। প্রজাতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রায়। একটি দৃশ্য তুলে ধরছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ সরকার। দ্বিতীয়টি অরবিন্দ কেজরীবালের দিল্লি সরকার। প্রশ্ন উঠেছে, নরেন্দ্র মোদীকে কি ট্যাবলোর মাধ্যমে ‘বিশেষ বার্তা’ দিলেন মমতা-কেজরীবাল?

কর্মচন্দ গাঁধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষে প্রজাতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রায় সব রাজ্যের ট্যাবলোরই বিষয় ‘গাঁধী’ হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মমতা-কেজরীবাল কি সুকৌশলে মনে করিয়ে দিলেন, গাঁধীর আদর্শ আর বিজেপি-আরএসএসের আদর্শ সম্পূর্ণ বিপরীত?

গত পাঁচ বছরে গাঁধীর প্রতি নরেন্দ্র মোদীর শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকা বেশ লম্বা। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই তিনি ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ শিল্প সম্মেলনের আয়োজনে যে প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করেন, তার নাম রেখেছিলেন ‘মহাত্মা মন্দির’। সম্প্রতি তার সামনে ‘ডান্ডি কুটির’ নামের সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে। রাজকোটে গাঁধীর ছোটবেলার স্কুলেও জাদুঘর খুলেছেন। বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের নিয়ে সাবরমতীর আশ্রমে গিয়েছেন। চরকা কেটেছেন। স্বচ্ছ ভারতের ‘লোগো’ হিসেবেও বেছে নিয়েছেন গাঁধীর গোল চশমা— যা দেখে রাজনীতিকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, মোদী কি কংগ্রেসের কাছ থেকে গাঁধীর দখল ছিনিয়ে নিচ্ছেন?

ইতিহাসবিদ ও তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী গাঁধী-গাঁধী করছেন বটে। কিন্তু কাজটা খুবই কঠিন। ১৯৪৭-এ দেশ যখন স্বাধীন হচ্ছে, সে সময় গাঁধীজি হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা থামানোর চেষ্টা করছেন। দাঙ্গা থামিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ে উনি একের পর এক বক্তৃতায় বলেছেন— সাম্প্রদায়িক তিক্ততা থেকে হৃদয়কে মুক্ত করতে হবে।’’

পশ্চিমবঙ্গ-দিল্লি বাদে এ বছর শোভাযাত্রায় কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র পঞ্জাবের ট্যাবলো নামছে। সেই ট্যাবলোয় জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, জালিয়ানওয়ালা বাগ জাতীয় স্মারক পরিচালনার ট্রাস্ট থেকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকে সরিয়ে দিতে সংসদে বিল এনেছে মোদী সরকার।

কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএস মুখেই গাঁধীর কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে সেই ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতি করে। কংগ্রেস মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর যুক্তি, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর গদিতে টিকে থাকার বাসনা তাঁকে গাঁধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাধ্য করে। কে ভুলতে পারে, মোদীজি এমন এক আদর্শ অনুসরণ করেন যা গাঁধীজির আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। সে কারণেই গাঁধী নিহত হন। গাঁধীজি যে সত্য ও অহিংসার কথা বলতেন, তার বিপরীত নীতি নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন মোদী।’’ তাই দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে চতুর্বেদীর অভিযোগ।

সুগতবাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘স্বাধীনতার পরে এআইসিসি-র অধিবেশনে গাঁধী বলেছিলেন, কোনও মুসলমান যেন এ দেশে নিরাপত্তার অভাব বোধ না করেন। মৃত্যুর আগে ওনার শেষ অনশনও সংখ্যালঘুদের জন্য। পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো যে সে কথা মনে করাচ্ছে, শুনে খুশি হচ্ছি।’’

Republic Day Mamata Banerjee Tableau
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy