কংগ্রেসের ডাকা বিরোধী দলগুলির বৈঠকে থাকছেন না মায়াবতী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
ছাত্র বিক্ষোভ, নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-এনপিআর নিয়ে আন্দোলনের আবহে আগামিকাল রাজধানীতে বসছে কংগ্রেসের ডাকা বিরোধী দলগুলির বৈঠক। উদ্দেশ্য, বর্তমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে দেশজুড়ে বিরোধিতায় সমন্বয় তৈরি করা। যাতে সুর না কাটে, সে জন্য সব বিরোধী দলের উপস্থিতি চেয়েছিল এই বৈঠকের প্রধান আয়োজক দল কংগ্রেস। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অধরাই রয়ে গেল বিরোধী ঐক্য। সোমবারের বৈঠকে যোগ দিচ্ছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল, মায়াবতীর বিএসপি এবং অরবিন্দ কেজরীবালের আপ। প্রাথমিক ভাবে উৎসাহ না দেখালেও শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারেন এসপি-র কোনও সাংসদ। থাকার সম্ভাবনা কম এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবের। অন্য দিকে, এই বৈঠকের আগের দিন জবলপুরের বিজেপি সমাবেশ থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কোনও ভারতীয়ের থেকে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা নয়া নাগরিকত্ব আইনে কোথায় বলা রয়েছে, তা পারলে খুঁজে দেখান তাঁরা।
মমতা এবং রাহুলকে একই বন্ধনীতে রেখে আজ অমিত শাহ আক্রমণ করলেও এই মুহূর্তে অন্তত এক মঞ্চে দু’পক্ষকে দেখা যাচ্ছে না। গত বুধবার বিজেপির বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির শ্রমিক-ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকা সর্বভারতীয় ধর্মঘটের পরেই মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিরোধী-বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন না। বিজেপির বিরুদ্ধে ডাকা ওই ধর্মঘটের দিন বিভিন্ন জায়গায় পাথরবৃষ্টি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং অশান্তির অভিযোগ ওঠে বিরোধীদের বিরুদ্ধে। তার পরেই বিধানসভায় মমতা জানিয়ে দেন যে, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন না। আবার রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে দাঁড়ানো আপ কংগ্রেসের সঙ্গে একমঞ্চে বসে বৈঠকের পক্ষপাতী নয়। ৮ ফেব্রুয়ারি বিজেপি-র পাশাপাশি কংগ্রেসের সঙ্গেও লড়বেন কেজরীবাল। এই সময়ে কংগ্রেস ঘনিষ্ঠতা দেখানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তৃতীয় অনুপস্থিত শক্তি অর্থাৎ বিএসপি যে এই ধরনের কোনও মঞ্চে আপাতত আর আসবেন না, তা গোড়া থেকেই স্পষ্ট কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে। গত বছর লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে তৈরি করা বিরোধী জোট ভেঙে যাওয়ার পরে মায়াবতী একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে কার্যত বিজেপি-র ‘বি দল’ হিসেবে কাজ করছেন বলেই মনে করছেন অন্যান্য বিরোধী নেতারা। অভিযোগ, মায়াবতীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুরনো একটি দুর্নীতির মামলা নতুন করে খুঁচিয়ে তুলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তাঁকে চাপ দিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, জয়ের বিন্দুমাত্র আশা নেই জেনেও দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সবক’টি আসনে প্রার্থী দিয়ে বিরোধী ভোট কাটার মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মায়াবতী। একই ভাবে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসপি। তবে সূত্রের খবর, নেতা অখিলেশ না এলেও এসপি-র পক্ষ থেকে অন্য ও নেতাকে পাঠানো হতে পারে বৈঠকে যোগ দিতে।
ডিএমকে, এনসিপি, আরজেডি-র পাশাপাশি কংগ্রেস আগামিকাল পাশে পাচ্ছে সিপিএম-সহ বাম দলগুলিকে। সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, বিজেপি বিরোধী এই আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে নিম্ন মধ্যবিত্ত, শ্রমিক, কৃষক, হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে প্রচার অব্যাহত রাখতে হবে। এই আন্দোলনে সংখ্যালঘুরা পুরোপুরি অংশ নিলেও দেখা যাচ্ছে যে, হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনগুলি থেকে শুধু ছাত্র ও উচ্চ মধ্যবিত্তরাই এগিয়ে আসছেন। আগামিকালের আলোচনায় এই লক্ষ্যে কাজ করার পরামর্শ দেবেন বামেরা।
আরও পড়ুন: সংবিধান রক্ষার দাবিতে খোলা চিঠি শর্মিলা শর্মিলা ঠাকুরদের
কাল ওই বিরোধী বৈঠকের আগে আজ অমিত শাহ সুর চড়ান বিরোধীদের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল বাবাকে চ্যালেঞ্জ করছি, এই নয়া নাগরিকত্ব আইন থেকে একটিও ধারা তাঁরা দেখান, যার মাধ্যমে কোনও ভারতীয়ের নাগরিকত্ব হরণ করা সম্ভব।’’ কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দেশভাগের সময় কংগ্রেস গোটা দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে ভেঙেছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy