Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রিসভায় ছাড়পত্র পেলেও সংসদে কবে পেশ হবে নাগরিকত্ব বিল তা নিয়ে নাটক জারি

সিলেক্ট কমিটি ঘুরে গত জানুয়ারিতে লোকসভায় পেশ হয়েছিল সংশোধিত বিলটি। তাতে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ, যাঁরা ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে এ দেশে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ছাড়পত্র পেলেও কবে সেটি সংসদে পেশ হবে, তা নিয়ে নাটক চলল গভীর রাত পর্যন্ত।

আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছিলেন, কাল বা পরশু বিলটি সংসদে পেশ করা হবে। বিলটি কাল আসছে কি না, তা জানতে রাত পর্যন্ত সংসদের নোটিস দফতরে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন বিরোধী সাংসদেরা। অবশেষে রাত ৯টা নাগাদ জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় লোকসভার বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ফলে মনে করা হচ্ছে, শুক্রবার লোকসভায় বিলটি পেশ হতে পারে।

সিলেক্ট কমিটি ঘুরে গত জানুয়ারিতে লোকসভায় পেশ হয়েছিল সংশোধিত বিলটি। তাতে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ, যাঁরা ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে এ দেশে শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ভিত্তিবর্ষ ধরা হয় ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪। অর্থাৎ ওই দিনের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরাই নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়টি অনুচ্চারিত থাকে। স্পষ্ট হয়ে যায়, পার্শ্ববর্তী তিন মুসলিম দেশ থেকে আসা মুসলিমেরা এ দেশের নাগরিকত্ব পাবেন না।

আরও পড়ুন:

ধর্মের ভিত্তিতে এ ভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের চোখে সকলেই সমান। সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে কী ভাবে নাগরিকত্ব দেওয়া যায়? কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের কথায়, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন যাঁদের ভাবনা ছিল, তাঁরা পাকিস্তান গড়েছেন। এ দেশের মানুষ সর্বদাই মনে করে এসেছেন যে-ধর্ম কখনওই নাগরিকত্ব পাওয়ার মাপকাঠি হতে পারে না।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও আজ বলেন, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব অবৈধ ও অসংবিধানিক।’’

কিন্তু দেশভাগের সময়ে অপূর্ণ দ্বিজাতি তত্ত্বের লক্ষ্য পূরণে বিজেপি যে বদ্ধপরিকর, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের সাংসদ রবি কিষন। তিনি বলেন, ‘‘যে-দেশের ১০০ কোটি মানুষ হিন্দু, সেই দেশ হিন্দুরাষ্ট্র। পৃথিবীতে অনেক মুসলিম ও খ্রিস্টান দেশ রয়েছে। কিন্তু
ভারতে আমাদের (হিন্দুদের) সংস্কৃতি বজায় থাকবে।’’

সিলেক্ট কমিটির বৈঠকে বিরোধীরা ধর্মীয় বিভাজন রুখতে সরব হলেও আজ পাশ হওয়া বিলে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। সূত্রের মতে, বিলটিতে কেন্দ্র যে-সব পরিবর্তন করেছে, তার সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। পরিবর্তনে বলা হয়েছে, মিজোরাম, অরুণাচলপ্রদেশ ও নাগাল্যান্ডে ইনারলাইন পারমিট বহাল রয়েছে। এই তিন রাজ্য এবং অসম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরার মতো রাজ্যের যে-এলাকা ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত, সেখানে সংশোধিত আইন প্রযোজ্য হবে না।

আরও পড়ুন: অওর কুছ নাহি, ইনসাফ চাহিয়ে, বলছেন তবরেজের স্ত্রী শাহিস্তা

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে ওই আইন প্রযোজ্য হলে ভূমিপুত্ররাই একঘরে হয়ে পড়বেন, এই যুক্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে গত ক’দিন ধরেই প্রবল প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা ও রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলি। গত কাল গভীর রাত পর্যন্ত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্যের নেতা-মন্ত্রী। তার পরেই বিলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া নাগরিকত্ব বা অন্য কোনও আইন ভাঙলে অনাবাসী ভারতীয় (ওসিআই)-দের অন্তত এক বার শুনানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে নতুন সংশোধনীতে।

আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্বের ‘জোট’ ভাঙল নাগরিকত্ব বিল

গত জানুয়ারিতে লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ হলেও তা রাজ্যসভায় পেশ করা হয়নি। ফলে লোকসভার মেয়াদ শেষ হতেই বিলটি বাতিল হয়ে যায়। সেটিতে আরও কিছু পরিবর্তন করে নতুন করে পেশ করার পক্ষে এ দিন মত দিল মন্ত্রিসভা। লোকসভায় বিজেপির যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা, তাতে বিল আটকানোর প্রশ্নই নেই। রাজ্যসভার সমীকরণও বিলের পক্ষে যাবে বলে আশাবাদী সরকার পক্ষ।

বিরোধীদের বক্তব্য, এনআরসির কারণে বিজেপির হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে যে ধস নেমেছে, তা রুখতে দ্রুত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। কারণ, অসমের এনআরসিতে ১২ লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ পড়েছে। গোটা দেশে এনআরসি হবে বলে শাহ যে ঘোষণা করেছেন, তাতে উপযুক্ত নথি হাতে না থাকা হিন্দুরা আতঙ্কিত। এর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসমাপ্ত তিনটি বিধানসভা ভোটের উপনির্বাচনে পড়েছে বলে ধারণা। উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও হেরেছে বিজেপি। হেরে গিয়েছে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ছেড়ে আসা খড়্গপুর সদর আসনটিও।

অ-মুসলিমদের এই আতঙ্ক দূর করতেই বিজেপি তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে চায় বলে দাবি বিরোধীদের। কারণ, এই বিল পাশ হলে নথিপত্র না-থাকা অ-মুসলিমদের আর দেশছাড়া হওয়ার ভয় থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Citizenship Amendment Bill Lok Sabha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE