Advertisement
E-Paper

আরও নরম, মোদীত্ব ভুলে কবুল ব্যর্থতাই

‘অচ্ছে দিন’-এর খোয়াব দেখিয়ে ভোটে জিতেছিলেন। মাঝপথে সেই স্লোগান উধাও হয়ে গিয়েছিল তাঁর মুখ থেকে। এ বার নরেন্দ্র মোদী আরও নরম। বিনম্রতার সঙ্গে কবুল করছেন, চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি ঠিকই। কিন্তু সব কাজ করে ফেলেছেন, এমন দাবি নেই। 

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৬
রামলীলা ময়দানে লীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

রামলীলা ময়দানে লীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

‘অচ্ছে দিন’-এর খোয়াব দেখিয়ে ভোটে জিতেছিলেন। মাঝপথে সেই স্লোগান উধাও হয়ে গিয়েছিল তাঁর মুখ থেকে। এ বার নরেন্দ্র মোদী আরও নরম। বিনম্রতার সঙ্গে কবুল করছেন, চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি ঠিকই। কিন্তু সব কাজ করে ফেলেছেন, এমন দাবি নেই।

এক-আধ বার নয়, কম করে তিন বার এই স্বীকারোক্তি শোনা গেল শনিবার মোদীর নিজের মুখে। সেই সঙ্গে আরও একটি কথা বলে ফেললেন তিনি, যা-ও একেবারেই ‘মোদীসুলভ’ নয় বলে মানছেন বিজেপি নেতারাই। ভরা ময়দানে দাঁড়িয়ে মোদী বলে দিলেন, দলের সামগ্রিক নেতৃত্বেই ভোটে যাবেন। অর্থাৎ তথাকথিত মোদী-ম্যাজিকে যে মোদীরই আর ভরসা নেই, সেটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল।

দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিজেপির মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ব্যর্থতা কবুল করে তার আগাম দায়টি সকলের ঘাড়ে সুকৌশলে ঠেলে দিলেন মোদী?

অথচ গোটা দেশ থেকে হাজার দশেক নেতা-কর্মীকে জড়ো করে মোদীকেই তো আবার ক্ষমতায় ফেরানোর স্লোগান তোলা হচ্ছিল। বিদ্রোহী নেতা নিতিন গডকড়ীকে দিয়ে ‘অবকি বার ফির মোদী সরকার’ বলানো হচ্ছিল। নির্মলা সীতারামনকে দিয়ে ‘রাফালে কোনও দুর্নীতি নেই, দেশে কোনও সন্ত্রাসের ঘটনা নেই’ বলানো হল। হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে দিয়ে রাহুল গাঁধীকে ‘গদ্দার’, ‘গব্বর সিংহ’, ‘বহুরূপী’ বলিয়ে তাঁর পোষা কুকুর ‘পিডি’কে নিয়ে কটাক্ষ করানো হল। আর সেনাপতি অরুণ জেটলিকে দিয়ে বলানো হল, কোনও ‘শাহজাদা-দিদি-বাবু-বহেনজি’র ক্ষমতা নেই মোদীকে হারানোর। দলের কর্মীরা যদি মোদীর নেতৃত্বকে আরও এক বার জনতার সামনে তুলে ধরতে পারেন, তা হলে বিজেপির আসন কমে যাওয়ার জল্পনাটাও স্রেফ উড়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ঘুম ছোটাব, টিপুকে নিয়ে হুঙ্কার মায়ার

কিন্তু একই সঙ্গে মোদীর জন্য সাজানো মঞ্চ থেকেই আজ প্রথম বার হিন্দি বলয়ে দলের হারের কথা কার্যত কবুল করলেন অমিত শাহ। কিছুটা মোড়ক দিয়ে বললেন, বিরোধীরা জিতলেও বিজেপি হারেনি। কারণ, দলের ভোট অটুট আছে। কিন্তু যাঁকে সামনে রেখে এত প্রস্তুতি, সেই নরেন্দ্র মোদীই যে ব্যাকফুটে। গোটা দেশ থেকে আসা কর্মীদের আগের মতো তাতাতেই পারলেন না। তিন দফায় বললেন, ‘‘আমি বলব না, সব সমস্যা দূর করে ফেলেছি। এখনও অনেক কিছু করা বাকি। সব হাসিল হয়ে গেলে মোদীর কী দরকার?’’

শুধু এই? যে মোদী-হাওয়া, যে মোদী-ম্যাজিকের কথা এত দিন নাগাড়ে বলা হত, আজ মোদী নিজেই সেই বেলুন চুপসে দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘হাওয়া তোলা হয় যে, মোদী এলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মোদী এলেই জিতে যাবে। এমন মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে আমি পিছলে যেতে পারতাম। কিন্তু আজ আমি বলতে চাই, মোদীও সংগঠন করেই উঠে আসা লোক। অটল-আডবাণীর সময় থেকে দল সামগ্রিক নেতৃত্বে চলে। সকলে মিলেই দিন বদলাব।’’

শুনে রামলীলায় আসা বিজেপি কর্মীদের অনেকেই বিভ্রান্ত। বললেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে এই মোদীই তো বুক ঠুকে ‘অচ্ছে দিন’ আনার কথা বলতেন। সব সমস্যা দূর করার কথা বলতেন। মোদী-ঝড়ের কথা আমাদের শোনানো হত। এখন তিনিই যদি অসহায়তা দেখান, আমরা নিজেদের কেন্দ্রে কী জবাব দেব?’’

আর একটা কাজও এ দিন করেছেন মোদী। দলের কর্মীদের বুঝিয়েই দিয়েছেন, প্রধান প্রতিপক্ষ রাহুল। বলেছেন, ‘‘যে সেবক— পরিবারে কোন্দল বাধান, ঘরের পয়সা চুরি করে পরিবারে বিলি করেন, ঘরের কথা পড়শিকে বলেন, কাউকে না জানিয়ে দু’-তিন মাস ছুটিতে চলে যান— দেশ ঠিক করুক এমন ‘প্রধান সেবক’ চাই? নাকি ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করা, ইমানদারির সঙ্গে কাজ করা, সকলকে একজোট রাখতে পারা সেবক চাই?’’

পরিষ্কার হয়ে গেল, রাহুল আর বিরোধী জোটকে আক্রমণ করা ছাড়া দলীয় কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার মতো আর কোনও অস্ত্রই মোদীর নেই। ‘মজবুত বনাম মজবুর’ সরকার, ‘সালতানাত বনাম সংবিধান’, ‘রাজশাহি বনাম লোকশাহি’, এমন নানা তুলনা টেনে বিরোধীদের বিঁধলেন। মহাজোটকেই এখনই ‘ব্যর্থ পরীক্ষানিরীক্ষা’ বলে দেগে দিলেন। আর দাবি করলেন, তাঁর সরকারের আমলে নাকি একটিও দুর্নীতির অভিযোগ নেই।

জবাবে কংগ্রেসের তরফে অবশ্য মোদী জমানার অজস্র ‘দুর্নীতি’র তালিকাই প্রকাশ করা হয়েছে। আর মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘‘পরের ভোট ‘জুমলা বনাম কাজ’-এর লড়াই। কাল অমিত শাহ পানিপথের যুদ্ধের কথা বলে হার মেনেছিলেন। আজ মানলেন নরেন্দ্র মোদীও।’’

BJP Narendra Modi Amit Shah Arun Jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy