Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নির্ভয়া-তথ্যচিত্র ছড়াচ্ছে ইউটিউবে, চিন্তায় কেন্দ্র

নির্ভয়া-কাণ্ডের বিতর্কিত তথ্যচিত্র সম্প্রচার করায় বিবিসি-কে আইনি নোটিস দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতে ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেন্দ্রের আর্জি উড়িয়ে ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই তা দেখিয়ে দিয়েছে বিবিসি। কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হচ্ছে, চ্যানেল ফোর-এ ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের আগেই বিবিসি-কে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, তথ্যচিত্রটি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হবে না, এই শর্তেই তাদের তিহাড় জেলে শুটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই শর্ত ভঙ্গ করেছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিবিসি কর্তৃপক্ষ নোটিসের কোনও জবাব দেননি বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৫ ০১:৩২
Share: Save:

নির্ভয়া-কাণ্ডের বিতর্কিত তথ্যচিত্র সম্প্রচার করায় বিবিসি-কে আইনি নোটিস দিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতে ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেন্দ্রের আর্জি উড়িয়ে ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই তা দেখিয়ে দিয়েছে বিবিসি। কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হচ্ছে, চ্যানেল ফোর-এ ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের আগেই বিবিসি-কে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, তথ্যচিত্রটি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হবে না, এই শর্তেই তাদের তিহাড় জেলে শুটিং করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই শর্ত ভঙ্গ করেছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিবিসি কর্তৃপক্ষ নোটিসের কোনও জবাব দেননি বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে।

তবে বিবিসি-কে ঠেকাতে না পারলেও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে লেসসি উডউইনের তথ্যচিত্রটির লিংক সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি। বস্তুত, বিবিসি-র সম্প্রচারের চেয়ে ইউটিউবে তথ্যচিত্রটি এসে যাওয়াটাই কেন্দ্রের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়েছিল। বিবিসি-র সম্প্রচার এ দেশে কেউ দেখতে পাননি। কিন্তু ইউটিউবের কল্যাণে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ছড়িয়ে যায় ‘ইন্ডিয়াজ ডটার’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার সেল বলছে, গত কাল রাত থেকেই ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়েছে তথ্যচিত্রটি। ইতিমধ্যেই অন্তত কয়েক লক্ষ হিট হয়ে গিয়েছে লিংকটিতে। এর পরেই ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বোঝানো হয়, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এ ব্যাপারে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। রাতে লিংকটি সরিয়ে নেয় ইউটিউব। কিন্তু এতে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয়ী মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশই। কারণ, লিংক সরানোর আগে তথ্যচিত্রটি বেশ কয়েক হাজার বার ডাউনলোড করা হয়েছে। যা পরে হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে আরও অনেকের মধ্যে।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পর প্রবল ভাবে মুখ পুড়েছিল তৎকালীন মনমোহন সিংহ সরকারের। সেই অস্বস্তির জের এ বার ফিরে আসছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ঘাড়ে। গত কাল রাজ্যসভায় ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া-কাণ্ডের উপর তথ্যচিত্র ভারতে সম্প্রচার করতে দেওয়া হবে না। এমনকী ব্রিটেন তথা বিশ্বের কোনও প্রান্তেই ওই তথ্যচিত্রটি দিনের আলো দেখবে না। ভারতীয় চ্যানেলগুলির মতো বিবিসি-কেও মোদী সরকার অনুরোধ জানিয়েছিল যাতে তা দেখানো না-হয়। কিন্তু বিবিসি জানিয়ে দেয়, তারা একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম। তারা সম্প্রচার বন্ধ রাখবে না।

কেন সরকারের কাছে এই তথ্যচিত্রটি অস্বস্তিকর? ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে, গোটা ঘটনাটি দীর্ঘ সময় ধরে বিস্তারিত ভাবে বিবৃত করা হয়েছে ফাঁসির আসামী মুকেশ সিংহের বয়ানে। তিহাড় জেলে বসে চোয়াল শক্ত করে আত্মপক্ষ সমর্থন করে গিয়েছে সে। শুধু তাই নয়, আরও এক পা এগিয়ে সে বলেছে, “ভাল ঘরের মহিলারা রাতের বেলায় বেরোয় না। সেই জন্যই নির্ভয়া ধর্ষিতা হয়েছে। আমাদের যদি ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তা হলে এর পর কেউ ধর্ষণ করলে আর নির্যাতিতাকে বাঁচিয়ে রাখবে না। একেবারে প্রাণে মেরে ফেলবে! ”

সরকারের বক্তব্য, দিল্লি হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিচারের জন্য আবার আবেদন করেছে শাস্তিপ্রাপ্তরা। অর্থাৎ মামলাটি এখনও বিচারাধীন। এমন সময়ে ধর্ষকরা যে ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের জগৎজোড়া মঞ্চ পেয়ে যাচ্ছে তা ভবিষ্যৎ বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে। দ্বিতীয়ত, নৈতিকতার নিরিখেও এমন বর্বরোচিত আচরণের পর তার ভাষ্য পরিস্থিতিকে আরও দূষিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। যে দেশে শিক্ষা এখনও সর্বস্তরে পৌঁছয়নি, সেখানে এই ধরনের প্রচার আখেরে সামাজিক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE