Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

এ দিকে ফেরার ট্রেন, ও দিকে থমকে সুযোগ

নানা রাজ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এখন এমন উভয় সঙ্কট। তার মধ্যে কেরলে যে হেতু নির্মাণ শিল্পে বাংলার সব চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন, তাই সেখানে সমস্যা আরও তীব্র।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০৪:৩২
Share: Save:

না ফিরলে চলছে না। আবার ফিরলেও ক্ষতি। করোনা এবং লকডাউন পরিস্থিতিতে এমনই উভয় সঙ্কটের মুখোমুখি কেরলে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা!

বাংলা থেকে বিরাটসংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করতে যান কেরলে নির্মাণ শিল্পে। সরকারি সূত্র বলছে, অল্প কিছু কাজ বাকি— এই অবস্থায় আটকে যাচ্ছে দক্ষিণী ওই রাজ্যের একাধিক প্রকল্প। তার মধ্যে রয়েছে কোচির দু’টি উড়ালপুল, কোচি মেট্রোর সম্প্রসারণ, তিরুঅনন্তপুরমে জাতীয় সড়কের এবং কোল্লমে রাজ্য সড়কের একটি করে অংশ, ভিঝিনজাম সমুদ্র বন্দর প্রকল্প। এই সব প্রকল্পেই কর্মরত ছিলেন বাংলা ও ওড়িশার বেশ ভাল সংখ্যক শ্রমিক। লকডাউনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করার কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র যখন মিলছে, তখনই আবার নিজেদের রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ট্রেন ছাড়ছে শ্রমিকদের জন্য! সরকারি তথ্য বলছে, এমতাবস্থায় বেশির ভাগ শ্রমিকই ট্রেন ধরতে যাচ্ছেন।

বস্তুত, নানা রাজ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এখন এমন উভয় সঙ্কট। তার মধ্যে কেরলে যে হেতু নির্মাণ শিল্পে বাংলার সব চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন, তাই সেখানে সমস্যা আরও তীব্র। করোনা পরিস্থিতিতে ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকেরা ফিরে এলে সংক্রমণের আশঙ্কা যেমন সমস্যার এক দিক, তার উল্টো পিঠেই থাকছে আর্থিক সঙ্কটের ছবি। কেরল ও বাংলা, দুই রাজ্যের শ্রম দফতরের কর্তারাই বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই নিতে হচ্ছে। কোনও রাজ্যে রেখে তাঁদের কাজ করতে বাধ্য করা যায় না। আবার যে রাজ্যে তাঁরা কাজ করেন, জিএসটি এবং অন্যান্য কারণ বাবদ তাদের আর্থিক ক্ষতিও বেশি।

আরও পড়ুন: আজ মোদীর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরা ॥ টিকিট আজই, কাল চালু রেল

কোচির ভিটিল্লা ও কুন্ডানুর উড়ালপুল, পেট্টা পর্যন্ত কোচি মেট্রো সম্প্রসারণ, ভিঝিনজাম প্রকল্প, তিরুঅনন্তপুরমে কাঝাকুটাম-কারোড জাতীয় সড়কের অংশ, কোল্লমে পুনালুর-পোনকুনাম রাজ্য সড়কের অংশ— এই প্রকল্পগুলি প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। ভিঝিনজামে যেমন ‘সি ওয়াল’ নির্মাণ শেষ করে ফেলা দরকার বর্ষা নামার আগে, কারণ তখন কোভালামে সমুদ্রের ঢেউ বেড়ে যায়। কাঝাকুটাম কেন্দ্রের বিধায়ক কোডাকামপল্লি সুরেন্দ্রন সে রাজ্যের সমবায় ও পর্যটনমন্ত্রী। তিনি বলছেন, ‘‘কেরলে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকেই পুরোদস্তুর বর্ষা শুরু হয়ে যায়। তখন এই সব প্রকল্পের স্বাভাবিক গতি এমনিই থমকে যায়। তার আগে দ্রুত কাজ তুলে নেওয়ার যে সুযোগ ছিল, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরে যেতে শুরু করায় সেটাও ব্যাহত হবে।’’ সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, বর্ষায় নির্মাণ কাজ বন্ধ হলে পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের এলাকায় ফিরে সাধারণত চাষের কাজে হাত লাগান। তার পরে তাঁরা আবার কবে প্রকল্পের কাজে ফিরতে পারবেন, প্রকল্প-নির্মাতারাই বা তখন সকলকে কাজে নেওয়ার জায়গায় থাকবেন কি না— কোনও কিছুরই এখন নিশ্চয়তা নেই।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের কাছে শ্রমিক ট্রেনের সূচি চাইছে রাজ্য

কেরলে রাজমিস্ত্রি ও সহায়কের কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদের কিছু শ্রমিক অবশ্য জানাচ্ছেন, কাজ শুরু হওয়ার কোনও খবর তাঁরা পাননি। ঘরে ফেরার জন্য নাম নথিভুক্ত করে তাঁরা বরং পুলিশকে অনুরোধ করেছেন ট্রেনে তুলে দিতে। করোনা এবং লকডাউন তাঁদের কাছে শাঁখের করাত!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE