এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। কিন্তু কৃতিত্ব চাইলেন না।এমনকি, প্রকাশ করলেন না নিজের পরিচয়ও। কাজ সেরে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলেন এক আইএএস অফিসার। বানভাসি কেরল এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল।
কেরলের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তখন চরমে।কাদের ত্রাণ দেওয়া হবে, আর কাদের নয়, তাই নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সময়,গত ২৬ অগস্ট রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমে হাজির হন কানন গোপীনাথন।
পেশায় আইএএস অফিসার।২০১২র ব্যাচের। কেন্দ্রশাসিত দাদরা ও নগর হাভেলির জেলাশাসক।নিজের অঞ্চলের তরফে মু্খ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১ কোটি টাকা দিতে এসেছিলেন।কিন্তু বন্যা পরিস্থিতি দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি।
চেক জমা দিয়ে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তা না করে তিরুঅনন্তপুরম থেকে বাস ধরে সোজা চেঙ্গান্নুর চলে আসেন। লাগাতার বৃষ্টিতে কেরলের যে জায়গাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম চেঙ্গান্নুর।
টানা আটদিন সেখানে ছিলেন ৩২ বছর বয়সী গোপীনাথন।বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন। কোচি বন্দর থেকে ত্রাণ সামগ্রী নামিয়েছেন। মাথায় করে তা বয়ে নিয়ে গিয়েছেন ত্রাণ শিবিরেও। কিন্তু সবটাই পরিচয় লুকিয়ে। আশপাশের কাউকে ঘুণাক্ষরেও নিজের পরিচয় জানাতে দেননি।
আরও পড়ুন- লেপ্টোস্পাইরোসিস ছড়াচ্ছে কেরলে, তিন দিনে মৃত ১২
আরও পড়ুন- পরিবেশ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব?
নবমদিনে সবকিছু সামনে আসে। কিন্তু কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেরিয়ে যান তিনি। কাউকে কিছু না বলেই। বিপদের সময় ঠিক যেমন ভাবে সেখানে সকলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন।
বিষয়টি চাউর হতে তাঁর নাগাল মেলে অবশ্য। তবে প্রচারের আলোয় আসতে রাজি হননি গোপীনাথন। তাঁর যুক্তি,‘‘এমন কিছু মহান কাজ করিনি।শুধুমাত্র একজন আগন্তুক হিসাবেই গিয়েছিলাম। বন্যার শুরু থেকে বহু অফিসার ওখানে রয়েছেন, কাজ করছেন।ওঁরাই আসল হিরো। আপনারা বরং ওঁদের সঙ্গে কথা বলুন।’’
কিন্তু কাউকে কিছু না বলে ওভাবে চলে এলেন কেন? গোপীনাথনের জবাব, ‘‘কেরল বুকস অ্যান্ড পাবলিকেশনস সোসাইটি অফিস -এ কাজ করছিলাম।সেখানে এক সিনিয়র আমাকে দেখে চিনতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে যায়। নিজস্বী তোলার দাবি জানাতে শুরু করেন অনেকে। তাই বেরিয়ে যেতে বাধ্য হই।’’
গোপীনাথন জানিয়েছেন, পরে অনেকেই ক্ষমা চেয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, ওঁদের আচরণে তিনি আহত হয়েছেন কিনা। তবে সেই সময় তাঁর মনে হয়েছিল, ওখানে থাকলে কাজে বিঘ্ন ঘটবে। তাই আর দেরি করেননি। তবে উত্তর-পূর্ব সহ রাজ্যের সমস্ত জলমগ্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের যোগদানে আপ্লুত তিনি।
তাঁকে নিয়ে খবর করাতেও আপত্তি আইএএস গোপীনাথনের। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হোক চাই না। এতে অন্যদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়।যাঁরা কিনা আসল হিরো। নিঃস্বার্থভাবে দিবারাত্র খেটে চলেছেন। এই উদ্দীপনা বজায় থাকলে কেরল খুব শিগগির বিপদ কাটিয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।’’ দাদরা ও নগর হাভেলিতে ফিরে কয়েকদিনের ছুটির জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। তবে তা গৃহীত হয়নি।
লাগাতার বৃষ্টির জেরে অগস্টে কেরলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। তাতে ৪০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন ১৩ লক্ষ মানুষ। তবে তাঁদের জন্য দুর্যোগ মাথায় নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন কানন গোপীনাথনের মতো কিছু তরুণ আধিকারিক। কেউ উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন, তো কেউ আবার ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। কেরলের খাদ্য নিরাপত্তা কমিশনার রাজামাণিক্যমকে দেখা গিয়েছে চালের বস্তা বয়ে নিয়ে যেতে। দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে ত্রাণ শিবির পরিদর্শনে গিয়েছেন ত্রিশূরের জেলাশাসক টিভি অনুপমা। স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে তিরুঅনন্তপুরমের জেলাশাসক কে বাসুকিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy