Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Covaxin

বায়োটেক বনাম সিরাম: বাক্যবাণে তুঙ্গে উঠছে টিকা-টক্কর

প্রথম পক্ষ যদি প্রতিদ্বন্দ্বীর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে, তবে দ্বিতীয় পক্ষ জবাব দিল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে জিজ্ঞাসায়!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১৯
Share: Save:

কথার লড়াই তো বটেই। ভারতের বিপুল বাজার ধরার টক্করে নেমে কার্যত কাদা ছোড়াছুড়িতে জড়িয়ে পড়ল এ দেশে সদ্য ছাড়পত্র পাওয়া দুই কোভিড প্রতিষেধকের উৎপাদক সংস্থা। কোভিশিল্ডের সিরাম ইনস্টিটিউট আর কোভ্যাক্সিনের ভারত বায়োটেক।

মানবদেহে তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল সামনে আসার আগেই কী ভাবে কোভ্যাক্সিনকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারে ছাড়পত্র দেওয়া হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব বিরোধীরা। কোনও সায়েন্টিফিক জার্নালে ফলাফল প্রকাশ না-করেই অনুমোদনের শিকে ছেঁড়া অবাক করেছে বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশকেও। এই পরিস্থিতিতে এ বার নিজেদের মধ্যেও দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপে জড়িয়ে পড়ল সিরাম এবং ভারত বায়োটেক। প্রথম পক্ষ যদি প্রতিদ্বন্দ্বীর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে, তবে দ্বিতীয় পক্ষ জবাব দিল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে জিজ্ঞাসায়!

রবিবার নিয়ন্ত্রক ডিসিজিআই ভারতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকা কোভিশিল্ডকে। প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতে যা তৈরির দায়িত্বে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। অনুমোদন পেয়েছে হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক এবং কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিএমআর জুটির কোভ্যাক্সিন-ও।

এ অবস্থায় গতকালই বায়োটেকের নাম না-করে সিরাম কর্ণধার আদার পুনাওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘ফাইজ়ার-বায়োএনটেক, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা— এই তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষেধকই শুধু কার্যকরী বলে প্রমাণিত। বাকি সবাই জলের মতো নিরাপদ।’’ এ প্রসঙ্গে সোমবার ক্ষুব্ধ ভারত বায়োটেক কর্ণধার কৃষ্ণ এম এল্লার জবাব, ‘‘একটি সংস্থার বক্তব্য, আমাদের প্রতিষেধক জল ছাড়া কিছু নয়। বিজ্ঞানী হিসাবে তা আমায় আঘাত করেছে। এমন কথা কাঙ্ক্ষিত নয়।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের প্রতিষেধকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার হার ১০ শতাংশ। সেখানে অক্সফোর্ডের টিকায় তা ৬০ শতাংশ।’’

এল্লার দাবি, ‘‘সমস্ত নিয়ম মেনেই কোভ্যাক্সিনকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’’ অনভিজ্ঞতার অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছেন, ১৬টি টিকা তৈরি করে ১২৩টি দেশে সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রকও

জানিয়েছে, ২০১৯ সালের নিউ ড্রাগ অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রুলস অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে কোনও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ছাড়াই ওষুধ ও প্রতিষেধক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। যে নিয়মকে হাতিয়ার করে ফাইজ়ার ভারতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ছাড়াই টিকা আনার অনুমতি চেয়েছে।

এল্লা উস্কে দিয়েছেন স্বদেশ বনাম বিদেশি বিতর্কও। বলেছেন, ‘‘কেন ব্রিটেনে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করছেন না? আসলে ভারতে তা নিয়ে সমালোচনা করা সোজা। অতীতে মার্কের তৈরি ইবোলা-ভ্যাকসিনের মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ হওয়ার আগেই লাইবেরিয়া-সহ দুই দেশে তা ব্যবহারে ছাড়পত্র দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।’’

বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে কোভিশিল্ড এক দিন আগে ছাড়পত্র পাওয়ার সময়ে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামী টুইট করেছিলেন, ‘‘ইংরেজদের প্রতিষেধক যেখানে ভারতে মাত্র ১,২০০ জনের উপরে পরীক্ষা করা হয়েছে, সেখানে কোভ্যাক্সিন পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজারের উপরে। তা সত্ত্বেও ভারতীয় প্রতিষেধককে ছুড়ে ফেলা হল।’’

শুধু স্বামী নন, কোভ্যাক্সিনকে দেশীয় টিকা হিসেবে তুলে ধরতে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা যে ভাবে উদ্‌গ্রীব, তাতে ভারত বায়োটেকের বিরুদ্ধে শাসক শিবিরের খাসনজরে থাকার অভিযোগ উঠেছে। আইসিএমআর ও পুণের এনআইভি-র মতো সরকারি সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকার সুবিধে তারা পেয়েছে বলেও অভিযোগ। এল্লার দাবি, ‘‘আমাদের পরিবারের সঙ্গে শাসক দলের কারও কোনও যোগাযোগ নেই।’’

ভারত বায়োটেকের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ, সম্পূর্ণ তথ্য জমা না-দেওয়ার। এল্লার জবাব, ‘‘তথ্যের বিষয়ে আমরা ২০০ শতাংশ সৎ থেকেছি। আমাদের গবেষণা সংক্রান্ত প্রবন্ধ ৭০টি আন্তর্জাতিক জার্নালে বেরিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা ফাইজ়ারের থেকে কম নই। টিকা সংক্রান্ত তাদের সম সংখ্যক পাঁচটি ‘পাবলিকেশন’ রয়েছে। কোভ্যাক্সিন ব্রিটেন, পাকিস্তান, নেপাল-সহ ১২টি দেশে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ হয়েছে। ফলাফল ইতিবাচক।’’

কিন্তু তেমনই দেখা দিয়েছে নতুন অস্বস্তিও। কমিটি কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দেওয়ার সময়ে দাবি করেছিল, তা ব্রিটেন থেকে আসা করোনার নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকর। কিন্তু আজ এল্লা জানান, ‘‘সংস্থার কাছে এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। দু’সপ্তাহ পরে তা পাওয়া যাবে।’’ ফলে বিপরীত বক্তব্যে অস্বস্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও।

ভারতে ছাড়পত্র পাওয়ার প্রশ্নে গোড়া থেকেই একে অপরের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে ছুটছিল দুই সংস্থা। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল প্রায় এক সঙ্গে জমা দেওয়াই হোক বা জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্রের আবেদন— এক ইঞ্চি জমিও কেউ কাউকে ছাড়েনি। ডিসিজিআইয়ের ঘর থেকে অনুমোদনও মিলেছে এক সঙ্গে। বাজার দখলের লক্ষ্যে এ বার কথার যুদ্ধেও একে অপরকে বিন্দুমাত্র রেয়াত করছে না তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covaxin Covishield
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE