Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
চুপ থেকে রূপকথা

পাঁচ ঘণ্টার রোড শোয়ে রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে ঘিরে আবেগে ভাসল নবাবনগরী

গাছের পাতাটিও যেন বোনের মাথায় না লাগে, আগেই হাত বাড়িয়ে দিলেন। উপরে রেলের ব্রিজ, বোনের হাত টেনে ধরে বসিয়ে দিলেন। ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে শক্ত মুঠিতে আগলে রাখলেন বোনকে। 

জুটিতে: লখনউয়ে রোড শো রাহুল-প্রিয়ঙ্কার। সোমবার। পিটিআই

জুটিতে: লখনউয়ে রোড শো রাহুল-প্রিয়ঙ্কার। সোমবার। পিটিআই

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় 
লখনউ শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৮
Share: Save:

গাছের পাতাটিও যেন বোনের মাথায় না লাগে, আগেই হাত বাড়িয়ে দিলেন। উপরে রেলের ব্রিজ, বোনের হাত টেনে ধরে বসিয়ে দিলেন। ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে গিয়ে শক্ত মুঠিতে আগলে রাখলেন বোনকে।

এ সব দেখতে ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়ার জন্য তখন নাতনি-ঠাকুমার রেষারেষি। গলৌটি কাবাবের খুন্তি ছেড়ে মোবাইল হাতে ছুটছেন দোকানি। হাত নাড়ছে স্কুল ফেরত পড়ুয়ারা। দূর থেকে নজর রাখছেন রাজনীতির লোকেরা। দাঁড়িয়ে যাচ্ছে শাসক দলের পতাকা লাগানো গাড়ি।

নবাবের শহর লখনউয়ে আজ ছ’ঘণ্টা ধরে টুকরো টুকরো এমন কিছু ছবিই দেশের বৃহত্তম রাজ্যে কংগ্রেসকে ফের স্বপ্ন দেখাল। যে শহর প্রায় তিন দশক বিজেপিকে বিমুখ করেনি, প্রায় একই সময় ধরে রাজ্যে কংগ্রেসকে রেখেছে ক্ষমতার বাইরে, সেখানেই দলের প্রাণপ্রতিষ্ঠার ভার আজ বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার হাতে তুলে দিলেন রাহুল গাঁধী। প্রিয়ঙ্কাকে এক ঝলক দেখার জন্য লক্ষ লোকের ভিড়ে স্তব্ধ হয়ে রইল নবাব-নগরী। জনতার উন্মাদনায় ভেসে গেলেন ভাই-বোন। তবে প্রিয়ঙ্কা এ দিন বিশেষ কথা বলেননি। তিনি বিলক্ষণ জানেন, একদা গড় এই রাজ্যে কংগ্রেসের পুনর্জন্মের রূপকথা লেখার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধেই তুলে দিয়েছেন রাহুল।

পাঁচ ঘণ্টার ঠাসা রোড-শো। পুরো সময়টি ধরে নগর-কীর্তন হল: “গলি গলি মে শোর হ্যায়, চৌকিদার চোর হ্যায়।” একটু ঝিমিয়ে পড়তেই বাসের ছাদ থেকে রাহুল ফের তাতিয়ে দিচ্ছেন, “চৌকিদার?” আওয়াজ ফিরে আসছে দ্বিগুণ হয়ে, ‘‘চোর হ্যায়!’’ ভিড়ের মধ্যে থেকে ছুড়ে দেওয়া রাফালের একটি কাটআউট লুফে নিলেন রাহুল। সবুজ-সাদা চেক কাটা সালোয়ারে তখন হাসিমুখে ভিড়কে নমস্কার করছেন প্রিয়ঙ্কা। হাত নাড়াচ্ছেন। চেনা কাউকে ইশারায় বলছেন, “কী বলছ? শুনতে পাচ্ছি না। পরে কথা হবে।” তার মধ্যেই বোনের হাত ধরে বললেন, “এটা ধর।” ভাই-বোন একসঙ্গে মেলে ধরলেন ‘রাফাল’।

বাস্তবটা জানেন কংগ্রেস সভাপতি। বোনকে ঘিরে উন্মাদনার সঙ্গে সংগঠনের মিশেল হলে তবেই ফিরবে সুদিন। কর্মীরা চাঙ্গা হবেন, আর তখন পাশে আসবেন ভোটাররাও। প্রিয়ঙ্কার জন্য সাজানো বিশেষ রথে সাদা-কালো ইন্দিরার ছবির সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার ছবিও আঁকা হয়েছে। স্লোগান দেওয়া হয়েছে, ‘বদলাও কি আঁধি, রাহুল সঙ্গ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী।’ রাহুল নিজেও মায়াবতী-অখিলেশকে বার্তা দিলেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও কংগ্রেস ব্যাকফুটে খেলবে না।

রোড-শো শেষে উত্তরপ্রদেশের দুই সেনাপতি প্রিয়ঙ্কা আর জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে নিয়ে নেহরু ভবনে ঢুকে বুঝিয়ে দিলেন পরবর্তী লক্ষ্য। বললেন, “উত্তরপ্রদেশ থেকে কংগ্রেসের যাত্রা শুরু হয়েছে। আর এ রাজ্যে দল দুর্বল থাকতে পারে না। যাঁরা হেলিকপ্টারে চড়েন, তাঁদের দরকার নেই। যাঁরা মাঠে কাজ করেন, তাঁদের গুরুত্ব দাও। লোকসভায় ভাল তো করতেই হবে, বিধানসভায় সরকার গড়তে হবে। আর আমাকে যখন দরকার ডেকে নিয়ো। বেস্ট অব লাক।”

আরও পড়ুন: সনিয়া-কন্যার জন্য হিসেব এলোমেলো মায়া-অখিলেশের

লখনউ সফরে প্রিয়ঙ্কা একটি শব্দও বাইরে বললেন না। নেহরু ভবনে তাঁর জন্য ঘর তৈরি হয়েছে। সেখানে আগামিকাল থেকে শুরু হবে তাঁর কাজ। কিন্তু আজ সেখানে বসলেন না। বরং প্রদেশ সভাপতি রাজ বব্বরের ঘরে বসে সারলেন বৈঠক। তার পরেই বেরিয়ে পড়লেন রাহুলের সঙ্গে, কয়েক ঘণ্টা ধরে রোড-শো করলেন। রাতে প্রিয়ঙ্কা চলে গেলেন স্বামী রবার্ট বঢরার কাছে, জয়পুরে। কাল সেখানেই রবার্ট এবং তাঁর মাকে জেরা করবে ইডি।

পাছে নজর লাগে, তাই ভাইবোনের কপালে এ দিন ছিল কালো টিকা। চড়েছিলেন পয়া বাসে। ওই বাসে চেপেই অমরেন্দ্র সিংহ পঞ্জাবে ক্ষমতায় এসেছেন। ওয়েলিংটন চৌরাহাতে এসে মাকড়সার জালের মতো ইলেকট্রিক তারে মাথা ঠেকে যাওয়ায় চেপে বসেন ছোট গাড়িতে। লালবাগে এসে শর্মাজির দোকানে ভাঁড়ে চা-ও খেয়ে ফেললেন রাহুল। হজরতগঞ্জে গাঁধী-পটেল-অম্বেডকরের মূর্তিতে মালা দিয়ে চাপলেন রথের মতো সাজানো আর একটি খোলা বাসে। তার মধ্যেই কখনও প্রিয়ঙ্কা একটি বাচ্চাকে কোলে তুলে চুমু খেলেন। আদর করলেন আর একটি বাচ্চাকে। তাকে চকোলেট দিয়ে বললেন, ‘খুশ রহো।’ কখনও জনতার সঙ্গে হাত মেলালেন। কেউ কাগজে মুড়িয়ে চিঠিও দিলেন তাঁকে। সেটি দ্রুত পড়ে ঘাড়ও নাড়লেন। যোগীর মন্ত্রীরা সকাল থেকে মুখে বলেছেন, ‘চোর মাচায়ে শোর’। তাঁরাই কিন্তু রোড-শোয়ের ভিড় দেখেছেন খুঁটিয়ে। যোগীর রাজ্যে এমনিতেই চাপে থাকা বিজেপি নেতাদের কপালের ভাঁজ দিনের শেষে বাড়ল কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE