ফাইল চিত্র।
কেরলের পুনর্গঠনে বিদেশি সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে চাপ বাড়ছে কেন্দ্রের উপরে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, তাইল্যান্ড, কাতার, মলদ্বীপের মতো দেশগুলি অর্থ সাহায্যের ইচ্ছার কথা ঘোষণা করলেও এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু এ ব্যাপারে চাপ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এ দিন তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ইউপিএ সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় বিদেশি অর্থ সাহায্য নিতে আপত্তি করেছে ঠিকই। তবে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা নীতি’তে বলা হয়েছে, কোনও দেশে এই ধরনের বিপদের সময়ে পাশে দাঁড়াতে চাইলে সেই সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে। ‘‘দু’টি দেশ পরস্পরকে সাহায্য করবে, সেটাই স্বাভাবিক’’— মন্তব্য করেছেন বিজয়ন। এই পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিদেশি সাহায্য গ্রহণে নিয়ম শিথিল করার ব্যাপারে সরকারের একটি অংশের মধ্যে ভাবনা-চিন্তাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাতে কেন্দ্রের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘‘কেরলের শোচনীয় বন্যার পরে যে ভাবে ভারতকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে বিভিন্ন দেশ, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের নীতি অনুসারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে ত্রাণের ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করি। তবে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা যদি কেরলের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান, দাঁড়াতেই পারেন। কোনও ভারতীয় সংগঠন যদি সাহায্য করতে চায়, করতে পারে। বিদেশি অনুদান সংক্রান্ত ছাড়পত্র রয়েছে, এমন কোনও ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও সাহায্য করা যেতে পারে।’’
কেরলের পুনর্গঠনে ৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন দুবাইয়ের শাসক শেখ মহম্মদ বিন রশিদ। কিন্তু তাতে এখনও পর্যন্ত সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি। অর্থ সাহায্য করতে চেয়ে মোদী সরকারকে চিঠি দেন ভারতে তাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত সি স্যাম গঙ্গসকডি। কিন্তু এর পরেই স্যাম টুইট করে জানান, ‘‘ভারতের তরফে বেসরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, তারা কোনও দেশের আর্থিক অনুদান গ্রহণ করছে না। তবে তাইল্যান্ডের হৃদয় ভারতবাসীর সঙ্গে রয়েছে।’’
কেরল জানিয়েছে, পুনর্গঠনের কাজে তাদের ২৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। অথচ এ যাবৎ কেন্দ্র ৬০০ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা উমেন চান্ডি দাবি করেছেন, বিদেশি অনুদান গ্রহণ করা নিয়ে সরকারের নীতি বদল করা হোক। কেরলের বন্যাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ ঘোষণার দাবিও তোলেন তিনি। তবে কেন্দ্রের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যর থেকে ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসেব আসার পরেই বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।
আরও পড়ুন: মন্দির-শুদ্ধিতে সত্যের সঙ্গী ফৈয়জ, ডেভিসরা
বিদেশি সাহায্য না নেওয়ার প্রশ্নে কেন্দ্রের একটি সূত্র যুক্তি দিয়েছে, ২০০৪ সালে সুনামির পরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তার পরে বড়সড় দুর্যোগেও বিদেশি সাহায্য নেওয়া হয়নি। সূত্রটির মতে, ভারত এখন বিশ্বের প্রথম পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে একটি। রাষ্ট্রপুঞ্জে স্থায়ী সদস্যপদ পেতেও প্রবল সক্রিয়। এই পরিস্থিতিতে বিপর্যয় মোকাবিলা ও পুনর্গঠনে ভারত অক্ষম, এমন বার্তা গেলে তা দেশের ভাবমূর্তির পক্ষে ভাল নয়। আর শক্তিশালী দেশগুলি যখন এমন সাহায্য নেয় না, ভারতই বা নেবে কেন? এ ছাড়া, বিদেশি রাষ্ট্রের সাহায্যের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িয়ে। ফলে সব দিক খতিয়ে দেখেই পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy