Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘পৃথিবীর চাঁদ’ একটা নয়, তিনটে!

কিন্তু এদের কি আদৌ ‘চাঁদ’ বলা চলে? মহামূল্যবান প্রশ্ন। বিজ্ঞানের কথা আলাদা, কিন্তু পৃথিবীর ‘একমাত্র উপগ্রহ’ হিসেবে চাঁদের মৌরসি পাট্টা খোয়া গেলে মানুষের ‘কথার কথা’ থেকে পুঁথিপত্র— চতুর্দিকেই হোঁচট অবশ্যম্ভাবী!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭
Share: Save:

এ সংসারের ‘হিরো’ প্রেমে পড়লে কথায় কথায় চাঁদ পেড়ে আনে। আর ‘জ়িরো’ আজকাল শাহরুখ খান হয়ে ফিল্মি ডায়লগে বলে, ‘‘মহব্বত মে আশিক চাঁদ তক লে আতে হ্যায়। হাম নে ইস বাত কো সিরিয়াসলি লে লিয়া!’’

তবে হাঙ্গেরির কোনও এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী হয়তো বলবেন, ‘‘সিরিয়াসলিই নাও হে! ঠিক কোন চাঁদটা পাড়তে হবে, জেনে এসো!’’

কারণ ‘পৃথিবীর চাঁদ’ নাকি একটা নয়, তিনটে! একটা চিরকালীন ‘চাঁদমামা’। অন্য দু’টো ধুলোর তৈরি। ধুলোর মেঘ— যাদের দেখা পাওয়াই দুঃসাধ্য। ‘মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটি’ পত্রিকায় হাঙ্গেরির একদল বিজ্ঞানীর দাবি, চাঁদ যত দূরে, সেই প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বেই পৃথিবীর চারধারে ঘুরছে ধুলোর মেঘগুলো। কক্ষপথে চাঁদের আগে-পরেই তাদের যাতায়াত। পোলিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কিজিমিশ কর্দিলেভস্কি ১৯৬১-তে এই ধুলো-সমষ্টির একটা আভাস পান। কিন্তু এ বার গবেষকদের দাবি, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পোলারাইজড ফিল্টার সিস্টেম বসিয়ে তোলা ছবিতে তাদের অস্তিত্বের প্রায় নিশ্চিত প্রমাণ মিলেছে।

কিন্তু এদের কি আদৌ ‘চাঁদ’ বলা চলে? মহামূল্যবান প্রশ্ন। বিজ্ঞানের কথা আলাদা, কিন্তু পৃথিবীর ‘একমাত্র উপগ্রহ’ হিসেবে চাঁদের মৌরসি পাট্টা খোয়া গেলে মানুষের ‘কথার কথা’ থেকে পুঁথিপত্র— চতুর্দিকেই হোঁচট অবশ্যম্ভাবী!

প্রথমত, ‘একে চন্দ্র’ ঠিক, না ‘তিনে’, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। ভূগোল তো পাল্টাবেই, সাধারণ জ্ঞানেও হয়তো লেখা হবে, ‘‘নিল আর্মস্ট্রং একটি চাঁদে গিয়েছিলেন।’’ চাঁদ ঘিরে সব ধর্মেই উৎসবের ছড়াছড়ি। সেই চাঁদের একচ্ছত্র সাম্রাজ্য পড়বে সঙ্কটে।

পুরাণেই চাঁদ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ভারত— আমাদের দেশের নামের সঙ্গেও চন্দ্রের সম্পর্ক রয়েছে। রাম যেমন সৌরবংশীয়, মহাভারতের কুরু-পাণ্ডবেরা চন্দ্রবংশীয়। মহাকাব্য ও পুরাণে মনে করা হয়, চন্দ্র অত্রির পুত্র। অত্রির বাবা ব্রহ্মা। এই বংশেরই রাজা ভরত। এবং ভরত থেকেই ভারত। দেবতারা সবাই মিলে যখন দুর্গাকে নির্মাণ করছিলেন, তখন ডাক পড়েছিল চন্দ্রেরও। দুর্গার বক্ষ তার দান। দেবাদিদেব নিজেই চন্দ্রশেখর। শিবের নাম সোমনাথ বা সোমেশ্বরও। সংস্কৃত সাহিত্যে চন্দ্রেরই আর এক নাম সোম। সারা বিশ্বে যেখানে বহুদেববাদ রয়েছে, সেখানে চাঁদকে এক বা একাধিক দেবতা বা দেবী বলে ভাবা হয়েছে। তবে পুরাণ মতে চন্দ্রের ২৭ স্ত্রীয়ের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে কে কাকে পতি বলে মানবেন, তা নিয়েও চলছে রসিকতা!

সম্ভাব্য সঙ্কটে আশ্বাস দিচ্ছে বিজ্ঞানই। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক সুজন সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘এই দু’টিকে উপগ্রহ বলা উচিত নয়। এমনকি চাঁদের সঙ্গে এক গোত্রে ফেলাও ভুল হবে। ওই দু’টি কোনও কঠিন বস্তু নয়। সম্ভবত পৃথিবী তৈরির সময়ে গ্যাসীয় পিণ্ড ছিটকে তৈরি হয়েছিল।’’ বিদেশি বিজ্ঞানীরাও কেউ কেউ বলছেন, চাঁদ আর পৃথিবীর মাঝখানে সম্ভবত মহাকর্ষজ ভারসাম্যে আটকে রয়েছে ওই ধুলো-সমষ্টি। আগে তারা স্থিতাবস্থার প্রমাণ দিক। কিছুই চূড়ান্ত নয়।

তত দিন হয়তো ‘স্থিতাবস্থা’ চন্দ্রের সংসারেও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moon Earth Hungary Astrophysicist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE