Advertisement
E-Paper

ব্রহ্মাণ্ডে তলিয়ে যাচ্ছে বড় একটা গ্যালাক্সি! শরীর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে গ্যাস, নক্ষত্ররা

কোটি কোটি তারা, লক্ষ কোটি নক্ষত্রমণ্ডল খুইয়ে, তার প্রাণবায়ু ছিল যে পরিমাণ গ্যাস, প্রায় তার সবটুকুই খুইয়ে ফেলে ওই বিশাল গ্যালাক্সি ‘ডি-১০০’ সর্বস্বান্ত হয়ে ঝাঁপ দিয়েছে কোমা গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে। পৃথিবী থেকে গ্যালাক্সিদের সেই ঝাঁক বা ক্লাস্টারটি রয়েছে মাত্র ৩৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:৫৭
সেই সব খোয়ানো ‘ডি-১০০’ গ্যালাক্সি। ছবি: নাসা

সেই সব খোয়ানো ‘ডি-১০০’ গ্যালাক্সি। ছবি: নাসা

বিশাল একটা গ্যালাক্সিকে এই ব্রহ্মাণ্ডের অতলে তলিয়ে যেতে দেখল নাসার হাব্‌ল স্পেস টেলিস্কোপ। এই প্রথম সরাসরি দেখা গেল, এক হাজারেরও বেশি গ্যালাক্সির ঝাঁক বা ‘সমুদ্রে’ ডুবে যাচ্ছে আস্ত একটা গ্যালাক্সি। ঝাঁপ মারছে মরবে বলে। যেন গভীর মহাসাগরে তলিয়ে যাচ্ছে ‘আটলান্টিক’ জাহাজ!

কোটি কোটি তারা, লক্ষ কোটি নক্ষত্রমণ্ডল খুইয়ে, তার প্রাণবায়ু ছিল যে পরিমাণ গ্যাস, প্রায় তার সবটুকুই খুইয়ে ফেলে ওই বিশাল গ্যালাক্সি ‘ডি-১০০’ সর্বস্বান্ত হয়ে ঝাঁপ দিয়েছে কোমা গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে। পৃথিবী থেকে গ্যালাক্সিদের সেই ঝাঁক বা ক্লাস্টারটি রয়েছে মাত্র ৩৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে।

গবেষকদলে রয়েছেন এক অনাবাসী ভারতীয়

হাব্‌ল টেলিস্কোপের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে কোনও গ্যালাক্সির ‘ঝাঁপ মারা’র ওই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আমেরিকার কানেক্টিকাটে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম ক্র্যামার ও জেফ্রি কেনির নেতৃত্বে একটি গবেষকদল। যে গবেষকদলে রয়েছেন এক অনাবাসী ভারতীয়ও। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়েরই গবেষক অদিতি রামচন্দ্রন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এর ৮ জানুয়ারি সংখ্যায়।

সেই সব খোয়ানো গ্যালাক্সি ‘ডি-১০০’ (উপরে বাঁ দিকে)

মস্ত বড় লেজ, গ্যালাক্সির চেহারাটা সরু পেন্সিলের মতো!

ই-মেলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজার ডিজিটালকে মূল দুই গবেষকের অন্যতম উইলিয়াম ক্র্যামার বলেছেন, ‘‘আমরা দেখেছি, প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া ‘ডি-১০০’ গ্যালাক্সি ছিঁড়ে ছিটকে বেরিয়ে আসছে একটি জমাট বাঁধা গ্যাসের স্রোত (জেট)। আর তার ফলে, ধূমকেতুর মতো সেই বিশাল গ্যালাক্সিরও একটা বিশাল লেজ তৈরি হয়েছে। কতটা বিশাল সেই লেজটা, জানেন? লম্বায় ২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্ব জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে সেই সর্বস্বান্ত গ্যালাক্সির লেজ।’’

আরও দুই গবেষক অদিতি রামচন্দ্রন ও জেফ্রি কেনি ই-মেল জবাবে জানিয়েছেন, সেই গ্যালাক্সির সব খোয়ানোর পালা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৩০ কোটি বছর আগে। শরীরের প্রায় সব হাড়, মাংস বেরিয়ে গেলে যা দশা হয় চেহারার, সেটাই হয়েছে অসম্ভব রোগাটে হয়ে পড়া গ্যালাক্সি ‘ডি-১০০’-র। সে শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকিয়ে যেতে যেতে তার চেহারাটা হয়েছে অনেকটা পেন্সিলের মতো। গ্যালাক্সি সাধারণত হয় গায়েগতরে মোটাসোটা। চেহারায় দৈত্যের মতো। কিন্তু ৩০ কোটি বছর ধরে তার শরীরের সব হাড়, মজ্জা, মাংস খোয়াতে খোয়াতে ‘ডি-১০০’ গ্যালাক্সির চেহারাটা যে পেন্সিলের মতো হয়েছে, সেটাও খুব মোটা নয়। বলা যায় ‘সরু পেন্সিল’। চওড়ায় যা মেরেকেটে ছড়িয়ে রয়েছে ৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরত্ব জুড়ে।

কপাল ভাল আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির!

অদিতির কথায়, ‘‘কোনও গ্যালাক্সির ঝাঁক বা মহাঝাঁকের (সুপার ক্লাস্টার) জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে যে কোনও গ্যালাক্সিরই যে এমন দশা হতে পারে, তাত্ত্বিক ভাবে তা আগেই জানা ছিল। কিন্তু এর আগে এই ভাবে গ্যালাক্সিদের ঝাঁক বা মহাঝাঁকে কোনও গ্যালাক্সিকে ডুবে যেতে দেখা যায়নি, সর্বহারা হয়ে।’’

বেরিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের স্রোত। গ্যালাক্সি ‘ডি-১০০’-র চেহারাটা সরু পেন্সিলের মতো

কপাল ভালই বলতে হবে এই ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের পাড়া মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির। তার কাছেপিঠে নেই দৈত্যাকার কোনও গ্যালাক্সির ঝাঁক (ক্লাস্টার) বা মহাঝাঁক (সুপার ক্লাস্টার)। থাকলে তার হাড়, মাংস, মজ্জা, নাড়িভুড়ি কবেই উড়ে যেত কাছেপিঠে থাকা গ্যালাক্সি-ঝাঁকের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে।

কেমন হয় গ্যালাক্সির ঝাঁক? দেখুন ভিডিয়ো

আরও পডুন- মহাকাশে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, ৩ দিন ধরে দেখা গেল আলোর ছটা!

আরও পডুন- তিনটি গ্যালাক্সির ঝাঁক থেকে মহাঝাঁক, দেখল অ্যাস্ট্রোস্যাট​

আরও একটা মজার ঘটনা লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা। দেখেছেন, ‘ডি-১০০’ গ্যালাক্সি সব খুইয়ে গ্যালাক্সিদের ঝাঁকে তলিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার শরীর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা লেজটির বিভিন্ন অংশ জ্বলজ্বল করছে। সেই লেজে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য তারা। যার মানে, সেই লেজে ‘প্রাণ’ রয়েছে। কারণ, সেখানে নতুন নতুন তারার জন্ম হচ্ছে এখনও।

কী দশা হবে গ্যালাক্সিদের ঝাঁকে ডুবে যাওয়া ‘ডি-১০০’র?

মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক দেবেন্দ্র ওঝার কথায়, ‘‘তার সব গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে বলে ওই গ্যালাক্সিতে আর কোনও তারার জন্ম হবে না। জন্ম হবে না কোনও নক্ষত্রমণ্ডলের। তা টিমটিম করে জ্বলবে আরও বড়জোর ৫০ বা ১০০ কোটি বছর। টিমটিম করে জ্বলবে তার ভিতরে থাকা মৃত তারা বা ‘রেড স্টার’-এর ফুরিয়ে আসা যৎসামান্য আলোয়। তার পর তা নিভে গেলে কোমা গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের ‘সমুদ্রে’ একেবারেই তলিয়ে যাবে হতভাগ্য ‘ডি-১০০’ গ্যালাক্সিটি।’’

ছবি সৌজন্যে: ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়

ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

Coma Galaxy Cluster D100 Galaxy Hubble Space Telescope কোমা গ্যালাক্সি-ঝাঁক ডি-১০০ গ্যালাক্সি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy