Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
science news

জিন কাটার ‘কাঁচি’ আবিষ্কার করে রসায়নে নোবেল দুই নারীর

এই কাঁচি দিয়ে জিনে থাকা ডিঅক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডকে কেটে ফেলা যায়। ফলে ইচ্ছেমতো বদলে দেওয়া যায় জীবনের কোড।

এমান্যুয়েল শার্পেন্টার (বাঁ দিকে) ও জেনিফার দৌদনা। ছবি সৌজন্যে: নোবেল ফাউন্ডেশন।

এমান্যুয়েল শার্পেন্টার (বাঁ দিকে) ও জেনিফার দৌদনা। ছবি সৌজন্যে: নোবেল ফাউন্ডেশন।

সংবাদ সংস্থা
স্টকহোম শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ১৫:১১
Share: Save:

জীবনের সংকেত যাঁরা বদলে দিতে পারেন তাঁদের স্রষ্টা ছাড়া আর কীই বা বলা যায়।

সেটা যাঁরা পেরেছেন, এমন দুই মহিলার নেতৃত্বেই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে পা দিল রসায়নশাস্ত্র। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জীবনের সংকেত তাঁরা বদলে দেওয়ার পথ দেখিয়েছেন বিশেষ ধরনের একটি ‘কাঁচি’ আবিষ্কার করে।

এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য রসায়নে এ বছরের নোবেল পুরস্কার পেলেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইউনিট ফর দ্য সায়েন্স অব প্যাথোজেন্স-এর অধ্যাপক এমানুয়েল শার্পেন্টার ও বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেনিফার এ দৌদনা।

আরও পড়ুন- আইনস্টাইনের তত্ত্বকে এগিয়ে নিয়েই পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল রজার পেনরোজের

বুধবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এই দু’জনের নাম ঘোষণা করেছে। ১৯০১ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে রসায়নে এই নিয়ে মোট ৭ জন মহিলা বিজ্ঞানী সম্মানিত হলেন। কোনও একটি বিভাগে একসঙ্গে দুই মহিলার নোবেলপ্রাপ্তিও এই প্রথম।

আবিষ্কৃত এই কাঁচি দিয়ে জিনে থাকা ডিঅক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডকে (ডিএনএ) কেটে ফেলা যায়। ফলে আমাদের ইচ্ছেমতোই বদলে দেওয়া যায় জীবনের সংকেত (কোড)। সেই সংকেত আমাদের ইচ্ছেমতো নতুন করে লিখে ফেলা যায়। জিনের কাটাছেঁড়ায় এত ধারালো কাঁচি আমরা আর তৈরি করে উঠতে পারিনি।

মোট পুরস্কার-মূল্য (১০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনার) সমান ভাবে ভাগাভাগি হবে শার্পেন্টার ও দৌদনার মধ্যে। শার্পেন্টার ও দৌদনা যে বিশেষ ধরনের কাঁচি আবিষ্কার করেছেন, বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম- ‘ক্রিসপার/ক্যাস-৯ জেনেটিক সিজার’।

নোবেল কমিটির রসায়নশাস্ত্র বিভাগের চেয়ার ক্লায়েস গুস্তাফসন বুধবার পুরস্কার জয়ীদের গবেষণার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘জিন কাটাছেঁড়ার এই কাঁচি অসম্ভব ধারালো। আর নিখুঁতও। ডিএনএ-র ঠিক যে অংশটুকু আমরা কাটতে চাইছি, এই কাঁচি অব্যর্থ ভাবে ঠিক সেই অংশটুকুই কাটতে পারে। আশপাশের এলাকাগুলি কেটে ফেলে না। এই আবিষ্কার যে শুধুই মৌলবিজ্ঞানের গবেষণায় বিপ্লব ঘটিয়েছে, তা-ই নয়; ক্যানসার-সহ নানা দুরারোগ্য অসুখের চমকপ্রদ চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন ও নানা ধরনের নতুন শস্যাদির জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। নিয়ে চলেছে।’’

এই কাঁচি দিয়ে প্রাণী, উদ্ভিদ এমনকী, অণুজীবদেরও জিনের সংকেত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বদলে ফেলা যায়। আমাদের ইচ্ছেমতো জিনের নতুন সংকেত বানিয়ে নেওয়া যায়। একেবারে নিখুঁত ভাবে।

আরও পড়ুন- স্নায়ুবিদ্যায় মনোনিবেশ দেখে অভিভূত হয়েছিলাম

যেহেতু আমাদের জিনের কাটাছেঁড়া আমরা এই পদ্ধতিতে করতে পারি আমাদের ইচ্ছে মতোই, তাই অনেক বংশানুক্রমিক রোগও এই প্রযুক্তিতে আগামী দিনে সারানো সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস বিজ্ঞানী মহলের।

বহু আবিষ্কারের মতো এই আবিষ্কারও হয়েছিল অপ্রত্যাশিত ভাবে। শার্পেন্টার তখন গবেষণা করছিলেন এমন একটি ব্যাক্টিরিয়া নিয়ে যা মানুষের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। সেই ব্যাক্টিরিয়ার নাম ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস পায়োজিনস্‌’। সেটা করতে গিয়ে একটি অণু আবিষ্কার করে ফেলেন শার্পেন্টার। যার নাম ‘টিআরএসিআর- আরএনএ’। শার্পেন্টার দেখালেন এই আরএনএ-টি ওই ব্যাক্টিরিয়ায় নিজস্ব প্রতিরোধী ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটাই ওই ব্যাক্টিরিয়ার রক্ষাকবচ। এটি থাকলে ব্যাক্টিরিয়াকে বধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার কাটাছেঁড়া সম্ভব হলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে ওই ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া। শার্পেন্টারের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে।

ওই বছরই আরএনএ নিয়ে গবেষণার জন্য খ্যাত এক বায়োকেমিস্টের সঙ্গে যৌথ ভাবে গবেষণা শুরু করেছিলেন শার্পেন্টার। তাঁর নাম জেনিফার দৌদনা। ওঁরা দু’জনে মিলে পরে একটি টেস্ট টিউবের মধ্যে ব্যাক্টিরিয়ার জিন কাটাছেঁড়ার কাঁচির প্রথম সফল প্রয়োগ করেছিলেন। সেই কাঁচি যাতে সহজে ব্যবহার করা সম্ভব হয়, পরে সেই প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেন দু’জনে। কোন ডিএনএ-কে কোথায় কাটতে হবে তা আগেভাগেই এই কাঁচি বুঝে ফেলতে পারে। আবার এদের আমাদের ইচ্ছেমতোও ব্যবহার করতে পারি। যে ডিএনএ-কে আমরা কাটতে চাইছি, এই কাঁচি দিয়ে আমরা তাকে বা তার কোনও একটি অংশকে কেটে ফেলতে পারি। এই আবিষ্কারটি হয় ৮ বছর আগে। ২০১২-য়।

এই কাঁচি আমাদের জীবনকে অনেকটাই আমাদের মুঠোয় এনে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE