Advertisement
E-Paper

রেখেছ বাঙালি করে ইলিশ খাওয়াচ্ছ না

খিচুড়ি-ঘি পাতে পড়েছে। মিসিং শুধু পাত্রী। ইলিশ। এই প্রথম জিভে জল আনা ব্লগ। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়-এর কলমেখিচুড়ি-ঘি পাতে পড়েছে। মিসিং শুধু পাত্রী। ইলিশ। এই প্রথম জিভে জল আনা ব্লগ। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়-এর কলমে

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০০:০১

পুরুতমশাই ঘন ঘন ঘড়ি দেখছেন। বরযাত্রীরা কাঁহাতক আর কফি, কোল্ড ড্রিঙ্ক খাবে, মেয়ের বাবা খুব ঘাবড়ে একটা সরবিট্রেট জিভের তলায় পাস করতেই কারা যেন উলুধ্বনি দেওয়া শুরু করল। পাত্র রেডি। পাত্রী কই?

এই হল গিয়ে এখন ইলিশের অবস্থা। সরষে বাটা তৈরি। পাতুরির কলাপাতাও এসে গেছে। শুধু তার দেখা নেই। মাছের রানি ইলিশ নিখোঁজ। পুলিশ বাদে সেই ইলিশকে খুঁজছে সবাই। খুঁজছি আমিও। এই লেখা পড়ে কোনও পাঠক-পাঠিকা যদি তার সন্ধান দিতে পারেন তো বর্তে যাই।

আমার এর মামা বলতেন, দেখি কেমন ইলিশ খেয়েছিস, হাতটা দে। শিকারির মতো হাতের গন্ধ শুঁকে তিনি বলে দিতে পারতেন সেটা কত কেজির মাছ। এমনকী কোলাঘাট না পদ্মাপার সেও ঢিল ছুড়তেন তিনি। আমরা আড়ালে হাসলেও মুখের উপর কিছু বলার সাহস ছিল না। তো আজ সেই মামাও নেই, সেই ইলিশও বা কোথায়?

কোথায়? কোথায়? গিরিশ ঘোষের ভঙ্গিমায় বলতে ইচ্ছে করছে: আমার সাধের ইলিশ হারিয়ে গেল! অফিসে লেট করলে ছুটি কাটা যায়, ইলিশ লেট করলে কার শাস্তি হবে? আর কারওর না হোক, আমার মতো হাজার হাজার ইলিশ প্রণয়ীর কপালে তো মহাশাস্তিযোগ। নিশ্চিত।

জুলাই মাস পড়ে গেল। কখনও ঝমঝম কখনও ঝিরঝির বৃষ্টি তো হয়েই যাচ্ছে। খিচুড়ি রান্না কমপ্লিট, গব্য ঘি পাত্রে পড়েছে, মিসিং শুধু পাত্রী— ইলিশ। আরে আটশো গ্রাম ওজনের ইলিশ আবার ইলিশ নাকি? কম সে কম দেড় কিলো না-হলে তো গৃহস্থের অপমান। শ্যামবাজার থেকে লেক মার্কেট। কলকাতা চষে ফেললেও সেই জাত-ইলিশ পাওয়া মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যায়। আক্ষেপ মানিকতলা বাজারের বিখ্যাত ইলিশ মার্চেন্ট বাবলু দাসের গলায়ও। ‘কোথায় যে হারিয়ে গেল সেই কিলো কিলো ইলিশের জোগান! আজ যদি হঠাৎ করে একটা ২০০ কেজির বরাত পাই প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যাবে মশাই।’

খবর নিয়ে জানলাম, পদ্মাপারেও সেই একই হাহাকার। খোকা ইলিশ ধরা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও কে শোনে কার কথা। টাকার লোভও হারিয়ে দিচ্ছে প্রকৃত ইলিশ লোভীদের। দুই বাংলারই সেই জঘন্য চোরাশিকারিদের উদ্দেশে বলতে ইচ্ছে করে’ রেখেছ কাঙালি করে, বাঙালি করোনি।

অবশ্য লোভের শিকার শুধু যে বাঙালিরাই, তা নয়, এক ফরাসি ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কলকাতা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে। লাইঞ্জে বসে সবে আমার লাঞ্চ বক্সটা একটু ফাঁক করেছি কী করিনি সেই সাহেব আমার সামনে উড়ে এসে জুড়ে বসলেন ‘স্মেলিং হিলসা’? ইলিশের নামে অনেক বঙ্গসন্তানের জিভে জল গড়াতে দেখেছি, বিলেত-বাবুরাও যে কম যান না, সে দিন বুঝেছিলাম। ইলিশলোভ সীমানা মানে না।

একবার আমি নিজেও সুইডেনে একই রকম খ্যাপামো করেছিলাম। সে বার টানা দু’সপ্তাহ ধরে ঘুরছি আমার এক কট্টর অবাঙালি নিরামিষাহারী ক্লায়েন্টের সঙ্গে। মাছ মাংস নো নো। শেষ পনেরো দিনের মাথায় রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে পাক্কা ১০০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে এক আদ্যোপান্ত বাঙালি বন্ধুর বাড়িতে চুটিয়ে ইলিশ ভাপা খেয়ে তবে শান্তি।

হলফ করে বলতে পারি, এই ভরা বর্ষায় দাঁড়িয়ে আমার মতো রসনা-রসিক বাঙালিকে ১ কোজি সোনা আর ১ কোজি ইলিশের মধ্যে বেছে নিতে বললে তার পাল্লা ইলিশের দিকেই ভারী থাকবে।

তবে ইদানীং শোনা যাচ্ছে বাংলার ঘরে ঘরে অনেকেই ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা কোনও কুলকিনারা করে উঠতে পারছেন না।

কেন জানি না, আমার মনে হয়, এর কারণ একটাই। অভাব মাছের রানি ইলিশের!

ইলিশের গল্প শেষ হওয়ার নয়। মুড়ো থেকে ল্যাজা কিছুই ফেলে দেওয়ার জো নেই। তবু সেই অশেষ উপাখ্যান আজ বুঝি শেষ হওয়ার পথে। পাতে ইলিশ না-পেলে সত্যি বলুন তো আপনিই বা কী করে বলবেন...ওহ্,! ইলিশ।

hilsa hilsa menu anjan chattopadhyay mainland china ilish khichuri hilsa hotchpotch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy