Advertisement
E-Paper

শাল-ডুলুংয়ের মায়ামাখা পথে

শীত, বর্ষায় তো বটেই, সবুজ পাতা দোলানো ঠান্ডা হাওয়ায় হালকা গরমও বড় মনোহারী ঝাড়গ্রামের জঙ্গলবাসে... শীত, বর্ষায় তো বটেই, সবুজ পাতা দোলানো ঠান্ডা হাওয়ায় হালকা গরমও বড় মনোহারী ঝাড়গ্রামের জঙ্গলবাসে...

পারমিতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
ময়ূরঝর্নার পথ

ময়ূরঝর্নার পথ

“এই মোড়ের মাথায়...ঠিক এইখানে খুন হয়েছিলেন বসুবাবু...ঠিক ওইখানটায়....’’ গাড়ি এগিয়ে গিয়েছে কিছুটা। তখনও গল্প লেগে ড্রাইভারের মুখে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখে নিতে চাইছি সেই মোড়টা। বছর কয়েক আগের একটা খুন আর আজকের কালো ঝরঝরে রাস্তায় আমি— ঝাড়গ্রামে।

আগের দিন ভোরে হাওড়া থেকে চড়েছিলাম স্টিল এক্সপ্রেসে। চেনা-আধাচেনা কয়েকটা স্টেশন পার হয়ে ট্রেন থেমেছে লালচে ধুলো-নিকোনো এক প্ল্যাটফর্মে। নামলেই ঠান্ডা হাওয়ায় উড়ে আসা শুকনো পাতা জানাবে স্বাগত। হোক না সে বোশেখ কি জষ্ঠি... রোদ চড়লেও হাওয়ার আদরে টান পড়ে না। স্টেশন রোড ধরে যেতে যেতে হালকা পাখার বাতাস দোলায় শালের বন।

জঙ্গলের ভিতর দিনযাপন আর রাত্রিবাস— বড় মোহময়। শহর ছেড়ে একটু এগিয়ে বাঁদরভুলায় বন দফতরের বাংলো। পায়ের তলায় খড়খড়ে শালফুল, মাথার উপর সবুজ ঢাকা আকাশ। চোখের লাগাম হেঁচকা টানে খুলে দিলে কত কী রহস্যের ঠিকানা মেলে জঙ্গলে।

ঘাগরা

প্রথম দুপুরে টোটো জুটিয়ে সোজা ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি। সেখান থেকে চিল্কিগড়। হাজার হাজার গাছ দাঁড়িয়ে সেখানে, অশেষ তাদের ওষধি গুণ। পিছনে ডুলুং নদী— বর্ষায় ভাসায় সে। শীত-গ্রীষ্মে তার ছলছলে শরীরে গোড়ালি-জল। নদীপাড়ে দেবী কনকদুর্গার অধিষ্ঠান। পুরনো মন্দিরটি জীর্ণ, তবে ঐতিহ্য হারায়নি। পাশেই নতুন আটচালায় দেবীর নিত্যপূজা। চাইলে মেলে ভোগ। সরকারি উদ্যোগে প্রমোদ উদ্যান, জঙ্গলের ভিতর খালে বোটিং— নিয়ে যাবে অন্য জগতে।

বনবাংলো থেকে কয়েক পা এগিয়েই সাবিত্রীদেবীর মন্দির। রাজকুলদেবী। মাটিতে প্রোথিতা দেবীর মুখমণ্ডল দেখা যায় শুধু। জনশ্রুতি— মল্লদেব পরিবারের কোনও রাজাকে দেখা দিয়ে দেবী তাঁর বাড়ি যেতে চান। কিন্তু রাজা তাকাতে পারবেন না পিছনে। অনেক ক্ষণ সে শর্ত মানলেও একবার রাজা তাকিয়ে ফেলেন পিছনে, অমনি দেবী শুরু করলেন পাতাল প্রবেশ। উপায় না দেখে রাজা টেনে ধরলেন দেবীর চুল— কিছুতেই যেতে দেব না। ক্ষান্ত দিলেন দেবী। অর্ধপ্রোথিতা দেবী এখানে দুর্গারূপিণী।

ময়ূরের আনাগোনা

মন্দিরেই উঠল ঝড়— শেষ বিকেলে। রাঙা ধুলোয় জগৎ অন্ধকার, শালবনের মাথায় মাথায় নাচন। মাটিময় এমন আঁধার আগে দেখিনি কখনও। শুধু ওই নাচনের টানে গ্রীষ্মেও যাওয়া যায় ঝাড়গ্রামে।

পরদিন গাড়ি ভাড়া করে সোজা পথ গেল বেলপাহাড়ি। গন্তব্য গাডরাসিনি, ঘাগরা, লালজল, খাদারানি। যেতে যেতে চালক জানান খুন-খারাপির আঁধার দিনের কথা। কোথায় উড়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স, কোন পথের বাঁক মিশেছে সেই গোপন আস্তানায়, কুখ্যাত এনকাউন্টার...

রাজবাড়ি

হঠাৎ গাড়ি গিয়ে থামে এক আশ্চর্য জগতে। নাম তার ঘাগরা—পাথুরে রূপকথায় চঞ্চলমতী জলপ্রপাত। জঙ্গলের মাঝে এক টুকরো ঝর্না। সে রূপ ভোলায় সব।

সেখানে থেকে ফের আজগর রাস্তা এক সময় ধুলো মাখে। শুরু হয় পাহাড় চড়ার পালা। গ্রীষ্মে এলে গাডরাসিনি থাকবে অধরা। বাঁকা পাহাড়ি পথে চড়ে গাডরাসিনির মাথায় ওঠা যায় শীতেই। পাদদেশে এক ধর্মীয় আশ্রম। আর চূড়ায় মন্দির, সেখানেই সিদ্ধি লাভ করেছিলেন সন্ন্যাসী।

পাহাড়তলি থেকে পথ গিয়েছে অনেক দূরে। ডান দিকে বান্দোয়ান। আমরা যাব বাঁয়ে। পথে ময়ূরঝর্না। হাতিদের আনাগোনা— কপাল ভাল হলে দেখা মিলতে পারে। দেখা যায় ময়ূরও। যদি না-ও যায়, ক্ষতি নেই। পিছনে আবছায়া পাহাড় আর ঘন বনপথের সৌন্দর্যই যথেষ্ট।

কনকদুর্গার প্রাচীন মন্দির

শেষ পাতে তারাফেনি নদী। বাঁধ দিয়ে আটকেছে খাঁদারানি। নামখানি যত অদ্ভুত, রূপও তেমনই। বিস্তীর্ণ প্রান্তরে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিলে যতটা প্রাণবায়ু মেলে, তা দিয়ে অন্তত এক বছর কাটিয়ে দেওয়া যায় কর্পোরেট অফিসে, কৃত্রিম আলোয়।

ফেরার পথে গাড়ি হঠাৎ বাঁক নিল বাঁ দিকে। এক বছর আগেও এবড়োখেবড়ো ছিল পথ— লালজল। এখন পিচ পড়েছে। পাথরের ধাপে পা ফেলে তরতরিয়ে উঠে যাওয়া যায় ছোট্ট পাহাড়টিতে। মাথার উপরে গুহা। আদিম মানবের অস্তিত্ব সেখানে ছিল একদিন। এক সময় পুরাতত্ত্ব বিভাগের গবেষণায় মিলেছে নানা প্রত্নসামগ্রী।

এই খালেই হয় বোটিং

শেষ দিনে পথ গেল ওডিশার দিকে। দূরত্ব খানিক বেশি। রামেশ্বর মন্দির আর মাঝপথে তপোবন। সৌন্দর্যে কারও থেকে কম যায় না কেউ। সকালটা অবশ্য অন্য ভাবে কেটেছে। আদিবাসী মেয়ের মতো পাঞ্চি শাড়ি একখান না কিনলেই নয়! শহরের আদিবাসী বাজারে মিলে যায় সে শাড়ি। ফ্যাশনিস্তাদের সংগ্রহে ও শাড়ি একখানা না থাকলেই নয়। তিন সত্যি!

কীভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে স্টিল বা ইস্পাত এক্সপ্রেসই সব থেকে সুবিধাজনক। পথ ১৫২ কিলোমিটার। শীত বা বর্ষায় ঝাড়গ্রাম সবথেকে সুন্দর।

Travel and Tourism Jhargram Jungles ঝাড়গ্রাম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy