Advertisement
E-Paper

নৈপুণ্য, রসবোধ, সাবলীলতায় ভরপুর

আমেজ বজায় রইল উস্তাদ শওকত হুসেন খানের কণ্ঠসঙ্গীতে। লিখছেন বারীন মজুমদার।স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উস্তাদ শরাফত হুসেন খান ছিলেন উৎকৃষ্ট খেয়াল গায়কদের মধ্যে অগ্রগণ্য। আগরা আত্রৌলি ঘরানার এই শিল্পী প্রয়াত হন ১৯৮৫ সালে। অসম্পূর্ণ থেকে যায় এক বিশিষ্ট ঘরানার। কিন্তু কোনও কিছুই থেমে থাকে না। খুব শৈশব থেকে পিতা ও গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন উস্তাদ শওকত হুসেন খান—যিনি বর্তমানে ব্যস্ত খেয়াল গায়কদের মধ্যে অন্যতম। শরাফত হুসেন খান সাহেবের আর এক শিষ্যা ছিলেন পূর্ণিমা সেন।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:০৫
উস্তাদ শওকত হুসেন খান। ছবি: সুমন বল্লভ।

উস্তাদ শওকত হুসেন খান। ছবি: সুমন বল্লভ।

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে উস্তাদ শরাফত হুসেন খান ছিলেন উৎকৃষ্ট খেয়াল গায়কদের মধ্যে অগ্রগণ্য। আগরা আত্রৌলি ঘরানার এই শিল্পী প্রয়াত হন ১৯৮৫ সালে। অসম্পূর্ণ থেকে যায় এক বিশিষ্ট ঘরানার। কিন্তু কোনও কিছুই থেমে থাকে না। খুব শৈশব থেকে পিতা ও গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন উস্তাদ শওকত হুসেন খান—যিনি বর্তমানে ব্যস্ত খেয়াল গায়কদের মধ্যে অন্যতম। শরাফত হুসেন খান সাহেবের আর এক শিষ্যা ছিলেন পূর্ণিমা সেন। সম্প্রতি প্রয়াত শিল্পীর তিরিশতম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে পূর্ণিমা সেন ও প্রবীর সেন তাঁদের রাসবিহারী এভিনিউ-এর বাসভবনে এক স্মরণীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। উস্তাদ শওকত হুসেন খানের কণ্ঠসঙ্গীতের মাধুর্যে এই সান্ধ্য বৈঠকের মেজাজটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। গানে, কথায় কয়েকটি ঘণ্টা যে ভাবে অতিবাহিত হল সচরাচর তা পাওয়া যায় না।

উস্তাদ শরাফত হুসেন খান

শওকতের বৈচিত্রপূর্ণ সম্ভারের প্রথম নিবেদন ছিল রাগ শুদ্ধকল্যাণ। সুপরিকল্পিত ও মেজাজি পদবিস্তারে জমজমাট ছিল তাঁর আলাপ পর্বটি। তাঁর কণ্ঠস্বরও ছিল খুব ভালো এই বৈঠকে। বিশেষ করে মন্দ্রগ্রাম ও তারসপ্তকে গলা দারুণ শোনাচ্ছিল। সঙ্গীতানুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে তাঁর শ্রোতাদের সঙ্গে বাক্যালাপ বেশ অন্তরঙ্গ মুহূর্ত গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিলম্বিত খেয়ালের শেষ অংশে এবং দ্রুত খেয়ালের তানকারিতে আগরা আত্রৌলি ঘরানার যে বৈশিষ্ট্য সেই ছবিটি ফুটিয়ে তুললেন শওকত তাঁর নিজস্ব স্টাইলে। নৈপুণ্য, রসবোধ ও সাবলীলতার এক স্মরণীয় সমন্বয় ঘটল শুরু থেকে আর তা সম্পূর্ণরূপে বজায় থাকল শেষ ভৈরবী রাগে ‘বনাও বাতিয়া’ ঠুমরিটি পর্যন্ত। পরবর্তী যোগকোষ রাগে যে খেয়ালটি শোনালেন তাও সমমানের। দ্রুত খেয়ালের বাণীর অংশবিশেষ নিয়ে লয়কারিও ছিল চমৎকার। সুন্দরভাবে প্রস্তারিত তানকারিতে যেমন ছিল দাপট তেমনই ছিল ধ্বনি ও ছন্দবৈচিত্র। তাঁর বিভিন্ন রাগ ভিত্তিক ছোট ছোট খেয়াল ও তারানা খোলা স্বরক্ষেপণের মহিমায় ঘরের চতুর্দিক ছেয়ে ফেলছিল। ‘বাদর আয়ে চমকিত বিজুলি’ বন্দিশটি বা টপ্পা ‘এ মিঁয়া জানেবালে’ তো ভোলবার নয়। আবিষ্ট করে রাখলেন সকলকে। তাঁর পিতার ঘরানা এইভাবেই পরম্পরার মাধ্যমে বেঁচে থাকবে, এটাই আশার কথা।

শিল্পীর সঙ্গে হিরণ্ময় মিত্রর নিপুণ হারমোনিয়ম বাদন ও সুজিত সাহার বুদ্ধিদীপ্ত তবলাবাদন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তানপুরায় ছিলেন বুধাদিত্য মুখোপাধ্যায়।

তিন কবির গানে

দ্বিজেন্দ্রলাল থেকে রজনীকান্ত, আবার রজনীকান্ত থেকে অতুলপ্রসাদ। সঙ্গীতজগতেরএই তিন দিশারীর সুরের ধারায় কণ্ঠ মেলালেন নূপুরছন্দা ঘোষ। আয়োজক শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব কালচার। শিল্পীর নিবেদনে ছিল ‘হরি প্রেম গগনে’, ‘যেখানে সে দয়াল আমার’, ‘তুমি অরূপ-স্বরূপ’, ‘আজি এসেছি, এসেছি বঁধু হে’, ‘আজি নূতন রতনে’। শিল্পীর প্রতিটি গানই ছিল সু-নির্বাচিত। গানের রেশ বজায় ছিল অনুষ্ঠানের শেষ অবধি। তবে এ দিন উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল ‘মোরা নাচি ফুলে ফুলে’, ‘একবার গাল ভরা মা ডাকে’ প্রভৃতি গানে।

এছাড়াও তিনি ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’, ‘উঠ গো ভারতলক্ষ্মী’ ইত্যাদি স্বদেশ পর্যায়ের গানের একটি কোলাজ নিবেদন করলেন। যা দেশপ্রেমের অনুভব আরও একবার উপলব্ধি করলেন শ্রোতারা।

শিল্পীকে যাঁরা সহযোগিতা করলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিন্থেসাইজারে রানা দত্ত, শ্রীখোল ও তবলায় মলয় দাস এবং পারকাশনে অলোক রায়চৌধুরী।

ভাল-মন্দের অন্য নস্টালজিয়া

সম্প্রতি সঙ্গীত জীবনের পঁচিশ বছর উপলক্ষে রোটারি সদনে ‘একা এবং একা’ শীর্ষক একক অনুষ্ঠানের শিল্পী ছিলেন স্বরূপ পাল। প্রথমেই শিল্পী শোনালেন শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘মনের মাধুরী মিশায়ে’। পরে মান্না দে’র ‘ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’ গানটি শিল্পীর কণ্ঠে অন্য মাত্রা পায়। তবে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’ বেশ বেসুরো, বেতাল মনে হয়েছে। সংযোজনায় প্রবাল মল্লিকের কথা শুনতে ভাল লাগলেও, তিনি যথেষ্টই আড়ষ্ট ছিলেন।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে ‘তুমি কি এখন দেখিছো স্বপন’ গানটি শুনিয়ে শিল্পী সম্পূর্ণ নিজস্ব মেজাজে ফিরে আসেন। বড় দরদ দিয়ে গাইলেন ‘পল্লবিনী গো সঞ্চারিনী’। তবে নতুন গান ‘কখনো তোমার সময় হলে বোলো’ পরিবেশনায় শিল্পীর স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব লক্ষ করা যায়। ‘বধূয়া আমার চোখে জল এনেছে’ শিল্পীর কন্ঠে এই গান শুধু মানানসই নয়, সাবলীলও। অনুষ্ঠানটির শেষ নিবেদন ছিল মান্না দে’র গান ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’। শ্রোতাদের নস্টালজিয়া ফের জেগে ওঠে। কী-বোর্ডে ছিলেন শুভেন্দু দাস, গিটারে সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তবলায় সঙ্গত করেন দেবজ্যোতি গোস্বামী।

অনুষ্ঠানটির আয়োজক-‘ওপেন উইন্ডো’।

বেহাগ যদি...

পিনাকী চৌধুরী

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ঠাকুরপুকুর সৃজনছন্দ আয়োজন করেছিল ‘স্মরণে ও বরণে মান্না দে’। প্রথমেই তালবাদ্য ‘রাইস অফ স্পিরিট থ্রু দ্য রিদম্’। পরে শম্পা কুন্ডু শোনালেন তিনটি গান। ‘কেন নয়নে আবির ছড়ালে’ শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূরণ করে। তবলায় সঙ্গত করেন দীপঙ্কর আচার্য। শান্তনু পাল, লীনা মৈত্র-র গানের পরে দীপজ্যোতি আচার্য বেহালায় বাজিয়ে শোনালেন ‘বেহাগ যদি না হয় বাঁশি’ জনপ্রিয় গানটি। যা অপূর্ব। শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ‘চলতে চলতে মন বলছে’ এবং ‘আমায় তুমি যে ভালোবেসেছো।’ অনুষ্ঠান সংযোজনায় ছিলেন অমিত রায় এবং তমালী ঘোষ।

প্রাণবন্ত চতুরঙ্গ

তবলিয়া বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত কলাশ্রীর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠান শুরু হল রমা মুখোপাধ্যায়ের ইমন রাগে। শৈলেনপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ছড়া শোনায় রিতম এবং নীলেশ। বেহাগ রাগে খেয়াল শোনালেন তিয়াসা চট্টোপাধ্যায়। সৌমালি কাঁড়ার বাগেশ্রী, অমিতাভ ঘোষের খেয়াল, শান্তা নন্দীর (ঘোষ) রাগপ্রধান শ্রুতিমধুর। তবলায় শিবনাথ মুখোপাধ্যায়। শেষে তবলা বাদক মধু বর্মন, শ্রীখোলে গোপাল বর্মন, পাখোয়াজে গৌতম চক্রবর্তী, বাংলা ঢোলে রঞ্জন দে এবং হারমোনিয়ামে রতন ভট্টাচার্য-র চতুরঙ্গ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

গানের ভুবন

গানের ভুবন’ ও ‘পারুল’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে শোনা গেল দীপান্বিতা সেনের একক ‘রবীন্দ্রনাথের গানের ভুবন’। বিভিন্ন অঙ্গের বারোটি গানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নিবেদন ছিল ‘তবু মনে রেখো’। আবৃত্তিতে চন্দ্রা মহালনবিশ ও বিবেকানন্দ হাজরা যথাযথ। এ ছাড়াও ছিলেন সুখেন্দু দাশ, শিশির মজুমদার ও বংশীবদন চট্টোপাধ্যায়।

বয়ে গেল বসন্ত

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে বেলেঘাটা সুরলোক আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় প্রবীণ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায়কে। শুরুতেই অজয় ঘোষ ‘ও যে মানে না মানা’ গেয়ে অনুষ্ঠানটি আরও বর্ণময় করে তুললেন। এ ছাড়াও গান শোনালেন বেশ কয়েক জন শিল্পী। তবে গানগুলি আরও সু-নির্বাচিত হওয়া উচিত ছিল। আবৃত্তি শোনালেন তাপস নাগ।

ভিতর বাহিরে

বাউল, ঝুমুর, ভাটিয়ালি, সুফি গানের সংকলন ‘ভিতর বাহিরে’। এমনকী বাংলাদেশের লোকগীতি ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ শিল্পী মৈনাকের কণ্ঠে অন্য মাত্রা পেয়েছে। সাগরিকা থেকে প্রকাশিত ১০টি গানের সংকলন।

barin majumdar ustad shaukat hussain khan nupurchhanda ghosh manna dey
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy