Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Dance Show

অপূর্ব অভিব্যক্তিতে উজ্জ্বল এক নৃত্যসন্ধ্যা

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রাজীব ভট্টাচার্য এবং কত্থক নৃত্যশিল্পী পারমিতা মৈত্রের পরিবেশনা ও পরিচালনায় তাঁদের নৃত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ওড়িশি ও কত্থক নৃত্যের যুগলবন্দি ‘নৃত্যাঞ্জলি’ দিয়ে।

An image of dance

নৃত্য উপস্থাপনায় শিল্পীরা —ফাইল চিত্র।

শতাব্দী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ০৯:৩৩
Share: Save:

বর্তমানে প্রচলিত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীর আন্তর্জাতিক প্রচার ও প্রসারে যে সকল কিংবদন্তি শিল্পী মহতী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন, ক্ষণজন্মা পুরুষ ওড়িশি নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্র তাঁদের অন্যতম। গত ৭ এপ্রিল তাঁর উনিশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর শিষ্য রাজীব ভট্টাচার্যের পরিচালনায় কলকাতার সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে, আইসিসিআর-এর দিগন্ত পর্যায়ের অধীনে আয়োজিত হল ‘গুরু স্মরণম্’ শীর্ষক একটি শাস্ত্রীয় নৃত্যসন্ধ্যা।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রাজীব ভট্টাচার্য এবং কত্থক নৃত্যশিল্পী পারমিতা মৈত্রের পরিবেশনা ও পরিচালনায় তাঁদের নৃত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির ওড়িশি ও কত্থক নৃত্যের যুগলবন্দি ‘নৃত্যাঞ্জলি’ দিয়ে। পাখোয়াজ ও তবলায় যথাক্রমে খেমটা ও ত্রিতালের মিতালি দর্শকদের গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র ও গুরু বিরজু মহারাজের মিত্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। ওই দিন সন্দীপ মল্লিকের পরিচালনায় ছিল আর একটি কত্থক উপস্থাপনা ‘শাওন ও কৃষ্ণ ভজন’। বর্ষার রূপকল্প নির্মাণে সুরের সঙ্গে তালবাদ্য প্রয়োগের পরিবর্তে এখানে প্রযুক্ত হয় কেবল ঘুঙুরের ধ্বনি। ভাবনায় অভিনবত্ব থাকলেও নৃত্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে সন্দীপ মল্লিকের কাছে দর্শকদের প্রত্যাশা হয়তো আরও কিছুবেশি ছিল।

এই সন্ধ্যার কেন্দ্রীয় উপস্থাপনা ছিল মহাকবি কালিদাসের কালজয়ী সৃষ্টি ‘ঋতুসংহারম্’কে কেন্দ্র করে এক নৃত্য আলেখ্য। তাঁর রচনায় কবি এক ঋষি, এক দ্রষ্টা হয়ে মানব মননে-জীবনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন, উপলব্ধি করেছেন ও তাকে ললিত কাব্যরসে বাঙ্ময় করে তুলেছেন। তাঁর এ যাত্রায় তিনি যেন স্বয়ং প্রকৃতির মানবীকরণ করেছেন। এই প্রযোজনার সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষ্য রচনা করেছেন যথাক্রমে সায়ক মিত্র, মদনমোহন কুমার এবং অর্কদেব ভট্টাচার্য; নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন রাজীব ভট্টাচার্য। উপস্থাপনার প্রথম ভাগে দৃশ্য ও শ্রাব্যের মধ্যে কিঞ্চিৎ অসামঞ্জস্য বোধ হলেও পরবর্তীতে তা ক্রমে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এই সন্ধ্যার অন্যান্য উপস্থাপনাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল মণিপুরি নৃত্যশিল্পী পৌষালী চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় শ্রীজয়দেব বিরচিত গীতগোবিন্দ থেকে উজ্জ্বল-উদ্ধার দশাবতার, ‘হরি-সায়োল-তরা’। এই নৃত্যে সৃষ্টির যুগ-যুগান্তরে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতে শ্রীবিষ্ণুর দশটি অবতার গ্রহণের রূপকল্প নান্দনিকতার সঙ্গে উপস্থাপিত হয়। প্রথিতযশা ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী অনিতা মল্লিক একক পরিবেশন করেন শ্রীবিষ্ণুর লীলা পুরুষোত্তম রূপের আবাহন ‘স্বাগতম কৃষ্ণ’। মোহন রাগে আধারিত সুপরিচিত এই কৃতি ভেঙ্কট সুব্বা আইয়ার প্রণীত।

মহাকবি কালিদাস ও শ্রীজয়দেবের রচনার পাশাপাশি দর্শক প্রত্যক্ষ করেন সন্তকবি তুলসীদাসের ‘রামচরিত মানস’ থেকে উদ্ধৃত এই সন্ধ্যার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুই প্রযোজনা ‘শবরী’, পরিবেশনায় গুরু রতিকান্ত মহাপাত্র ও ‘মন্থরা’ উপস্থাপনায় রাজশ্রী প্রহরাজ। শ্রীবিষ্ণুর মর্যাদাময় পুরুষোত্তম রূপ হলেন শ্রীরামচন্দ্র। এক দিকে, শ্রীরামভক্ত শবরীর প্রতি ভগবানের করুণাকণা বর্ষণের অসামান্য এক আখ্যান গুরু রতিকান্ত মহাপাত্রের অপূর্ব অভিব্যক্তিতে ব্যঞ্জনা লাভ করে দর্শককে অভিভূত করে; অপর দিকে ভরতের প্রতি স্নেহান্ধ, ধূর্ত, কুব্জি, মন্থরার মন্ত্রণা দ্বারা শ্রীরাম এবং রামায়ণের গতি-নিয়তি নির্ধারণ করার কাহিনি ব্যক্ত হয় রাজশ্রী প্রহরাজের উপস্থাপনায়। স্বনামধন্য কত্থক নৃত্যশিল্পী উমা ডোগরার ভাষ্য ও রতিকান্ত মহাপাত্রের পরিচালনায় রাজ্যশ্রীর এই পরিবেশনা দর্শককে অভিভূত ও মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়। মঞ্চে তাঁর প্রথম পদসঞ্চালন জানিয়ে দেয় তাঁর প্রতিভা, নিষ্ঠা ও সম্ভাবনার কথা। অনুষ্ঠানের সুসঞ্চালনা করেন নীলাদ্যুতি চৌধুরী। আলোকসম্পাতে সৌমেন চক্রবর্তী ও দেবীপ্রসাদ মিশ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dance Show Cultural Program Dance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE