Advertisement
E-Paper

আমরা চাই দর্শক সিন্দুক ভেঙে বাংলা ছবি দেখুক

আর হতাশা, অভিমান, খেয়োখেয়ি নয়! নতুন ইনিংস শুরুর আগে কী ভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়? ‘পত্রিকা’-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়আর হতাশা, অভিমান, খেয়োখেয়ি নয়! নতুন ইনিংস শুরুর আগে কী ভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়? ‘পত্রিকা’-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

পত্রিকা: ২০১৭-য় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায় নাকি বাঙালির প্ল্যাটার সাজাচ্ছেন?

শিবপ্রসাদ (হা হা হা): সে রকমটাই তো ইচ্ছে! এ বছর বাঙালি পোস্ত দিয়ে ভাত খাবে। শেষ পাতে রসগোল্লা। বিকেলে চায়ের সঙ্গে প্রজাপতি বিস্কুট।

পত্রিকা: তা হলে খোলসাই করুন!

শিবপ্রসাদ: ‘পোস্ত’ আমাদের ছবি। তার সঙ্গে আসছে অনিন্দ্যর (চট্টোপাধ্যায়) ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ আর পাভেলের ‘রসগোল্লা’। পরের দুটো ছবি আমি, নন্দিতাদি (রায়) আর অতনুদা (রায়চৌধুরী) মিলে উইন্ডোজ-এর হয়ে প্রোডিউস করছি। বাঙালির প্রিয় রসগোল্লা নিয়ে এমন ছবি ভাবা যায় না!

নন্দিতা: নবীনচন্দ্র তাঁর বৌকে খুশি করার জন্য রসগোল্লা তৈরি করেন! ছবির মোদ্দা বিষয় এটাই। তবে আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প।

পত্রিকা: হঠাৎ অন্য পরিচালকের ছবির দায়িত্বে এলেন?

শিবপ্রসাদ: শুনুন তবে, আমরা যখন প্রথম দিকে চ্যানেলের হয়ে কাজ করছি, তখন নন্দিতাদি টেলিফিল্ম করার কথা ভাবে। নিজের চাকরি বাঁধা রেখে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়ে নন্দিতাদি টেলিফিল্ম করিয়েছিলেন। চ্যানেল তখন চায়নি কৌশিকদা ছবিটা করুক।

নন্দিতা (হেসে): দেখুন নতুন ছেলেমেয়েরা এগিয়ে না এলে ইন্ডাস্ট্রি আটকে যাবে।

পত্রিকা: লড়াইটা তো তা হলে ইন্ডাস্ট্রির প্রোডিউসারদের সঙ্গে?

শিবপ্রসাদ: লড়াই কেন হবে? অনেক সময় আমরা ভুলে যাই, এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের জার্নিটা অনেকটা খাড়াই পাহাড়ে চড়ার মতো। একটা দড়িতে সকলে বাঁধা। সেখানে কেউই কাউকে ঠেলে নামাতে পারবে না। তা হলে সকলে পড়ে যাবে। আমি, নন্দিতা রায় আর অতনু রায়চৌধুরী, প্রভাত রায় সব্বাই মিলে বেটার কিছু করতে চাইছি। অতনুদা হল এমন একজন প্রযোজক, যিনি ছবির ফাইনাল কপিটাই শুধু দেখেন। এর বাইরে কোনও প্রভাব খাটান না। ছবির স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ হলে আজও নন্দিতাদি বলেন, আমাদের নতুন সন্তানের জন্ম হল।

পত্রিকা: কিন্তু ফিনান্সাররা আপনাদের সঙ্গে কাজ করবেন কেন?

শিবপ্রসাদ: আসল কারণ সততা। আর সত্যি কথা বলতে কী, আমি চাই সকলের ছবিই হিট হোক!

পত্রিকা: পরিচালক শিবপ্রসাদ আর কোনও বাজারি প্রতিযোগিতায় নেই!

শিবপ্রসাদ: সত্যিই নেই। আজ গৌতম ঘোষ, সন্দীপ রায়, অঞ্জন দত্ত, অরিন্দম শীল, কৌশিকদা, সৃজিত, সুদেষ্ণাদি (রায়), রাণাদা (অভিজিৎ গুহ), বিরসা (দাশগুপ্ত) সকলের ছবি ব্লক বাস্টার হতে হবে। আমাদের সঙ্গে কারও হিংসে নেই। বিরসা যে রকম গানের পালস বোঝে, এই ইন্ডাস্ট্রিতে সে রকম পরিচালক কম আছে। সৃজিত যে কোনও দৃশ্যকে কী উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে, সেটা ভাবা যায় না! রবি কিনাগির মতো গল্প কেউ বলতে পারে না। এখানে একটা কথা আবার বলি।

পত্রিকা: কী?

শিবপ্রসাদ: আমাদের ছবি হিট করার পরে কিছু ফিনান্সার এসে বললেন, আপনাদের ওপর ভরসা আছে। বলুন কোন ছবির জন্য টাকা দিতে পারি? আমরা দেখলাম বছরে একটাই ছবি হবে আমাদের। ফিনান্সারদের সাহায্যে আরও দুটো যদি অন্য ছবি হয়, তা হলে ক্ষতি কী? কিন্তু একটাই শর্ত। টাকা ফেরত দিতেই হবে।

পত্রিকা: মনে হচ্ছে, নতুন শিবপ্রসাদ স্ট্র্যাটেজি সাজাচ্ছেন!

শিবপ্রসাদ: হলিউডে, মুম্বইতে প্রায়ই পরিচালকরা প্রযোজকের ভূমিকায় আসছেন। সুজিত সরকার, সুজয় ঘোষ, করণ জোহর, অনুরাগ কশ্যপ... কে না করছেন! আমি তো চাইব, কৌশিকদা, অরিন্দমদা, টনিদা (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) এগিয়ে আসুক। সমস্যাটা কোথায় জানেন?

পত্রিকা: কোথায়?

শিবপ্রসাদ: ধরুন অনিন্দ্যদার ‘ওপেনটি বায়োস্কোপ’। সুপারহিট। দেখে মনে হয়েছিল একটা কবিতা! তার পর থেকে দেখা হলেই বলতাম, পরের ছবি কবে? দেখতাম, বেশ দেরি হচ্ছে। মুশকিলটা এইখানেই। এর জন্যই তখন আমরা অনিন্দ্যদার সঙ্গে অতনুদাকে বসিয়ে দিলাম। দেখবেন, ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ পুজোয় কেমন হিট হয়ে যায়..! আরও একটা কথা।

পত্রিকা: বলুন।

শিবপ্রসাদ: সাধারণত কোনও নতুন পরিচালক ইন্ডাস্ট্রিতে যখন ছবি করতে আসেন, তখন তাঁকে সবচেয়ে কম বাজেটের ছবি করতে বলা হয়। পাভেলের ছবির যা বাজেট, সেই পরিমাণ বাজেট আমাদের নিজেদের ছবিতেও ছিল না। ‘রসগোল্লা’ একটা পিরিয়ড পিস। সেই মতো ভেবে নীতিশ রায়কে প্রোডাকশন ডিজাইন করতে বলেছি। নতুনদের এ ভাবেই এন্ট্রি দিতে হবে।

পত্রিকা: এই যে ছবির জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ নিজের হাতে করেন, এটাই কি নন্দিতা-শিবপ্রসাদের পাঞ্চলাইন!

শিবপ্রসাদ: অবশ্যই। গোটা ব্যাপারটা ৩৬০ ডিগ্রি আমাকে জানতে হয়। আজও ছবি রিলিজের পর হলে গিয়ে দর্শকদের রিঅ্যাকশন-এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। সব হল মালিক সেটা জানেন। শুনেছি, তরুণ মজুমদার তো এ ভাবেই কাজ করতেন।

পত্রিকা: বলা হয়, বাংলা ছবিতে আপনারা তরুণ মজুমদার, অজয় করের উত্তরসূরি।

নন্দিতা (অপ্রস্তুত): নাহ! এটা অনেক বড় কথা!

শিবপ্রসাদ: বাংলা ছবিতে বাঙালিয়ানা থাকতেই হবে। ফেলুদা, ব্যোমকেশ সকলেই কিন্তু বাঙালি। লোকে সেই কারণেই এই ছবিগুলো দেখে বা দেখছে...

পত্রিকা: এই গ্লোবাল-ভিলেজ, গ্লোবালাইজেশনের মধ্যে বাঙালি ভাত আর পোস্ত-য় আটকে থাকবে!

শিবপ্রসাদ: আটকে তো নেই। বাংলা ছবি তো পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবনের ডিভোর্স দেখিয়েছে। জেলের ভেতরে মুক্তধারার গল্প বলেছে। রোড অ্যাক্সিডেন্ট-ও জীবনের গল্প হতে পারে, সেটা ছবিতে এনেছে।

পত্রিকা: তা নয়, বলতে চাইছি, বাঙালিয়ানা যে ছবিগুলোতে থাকছে না, সেগুলো ছবি নয়!

শিবপ্রসাদ: এর উত্তর আমি দেব না। দর্শক দেবে। আমি আসগার ফারাদির ছবি দেখলে বুঝতে পারি ওটা ইরানিয়ান ছবি। ‘ব্যাঙ্গালোর ডেজ’, ‘সাইরাট’ দেখতে দেখতে কখন তা আমার ছবি হয়ে যাচ্ছে, ধরতেই পারি না। যে কোনও ছবিকে এই ‘আমারটা’ হয়ে যেতে হবে। যেমন, ‘গুপী গায়েন’, ‘সপ্তপদী’... সাবটাইটেল চালালেই আজও সব্বাই রিলেট করতে পারে।

পত্রিকা: তা হলে মৃণাল সেন?

শিবপ্রসাদ: অবশ্যই। যেমন ধরুন ‘খারিজ’। বাঙালিয়ানার গল্প।

পত্রিকা: শুধু ‘খারিজ’? ‘ভুবন সোম’, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘পরশুরাম’... সবই তো বাঙালিয়ানারই গল্প। কিন্তু ‘বক্স’ ছিল কি?

শিবপ্রসাদ: সব ছবি কি আর বক্স হবে? একটা ইন্ডাস্ট্রিতে যে রকম ‘হারানো সুর’ থাকবে। তেমনই ‘ভুবন সোম’ থাকবে। আসলে বাংলা ছবি চলে না এটা বললে খুব রাগ হয়।

পত্রিকা: কিন্তু ‘বেলাশেষে’ ‘প্রাক্তন’-এর পর আর একটা সুপারহিট ছবি বলুন তো!

শিবপ্রসাদ: উল্টে আমি বলি? পাইরেসি বন্ধ করা গেল? শুনুন, জীবনে কিন্তু একবারই ‘শব্দ’-র মতো ছবি হয়। তো সেটাও লোকের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার আগে পাইরেটেড হচ্ছে! ‘মিশর রহস্য’ করার পর সৃজিতের দ্বীপ কিনে ফেলা উচিত ছিল। রাজ চক্রবর্তী যা কাজ করেছে, তাতে ওর নিজের স্টুডিয়ো হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কই? সে সব না হয়ে কাউকে টিভি-তে যেতে হচ্ছে, কেউ দোকানে ফিতে কাটছেন।

পত্রিকা: তা হলে উপায়?

নন্দিতা: হলের সংখ্যা বাড়াতেই হবে। ‘স্পেশাল ডে’-তে মাল্টিপ্লেক্সে হিন্দির সঙ্গে বাংলা ছবির শো রাখতে হবে। সাহিত্যনির্ভর ছবির জন্য ঝুঁকি নিতে হবে। এই আমরা যেমন, রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘কাবুলিওয়ালা’ নিয়ে ভাবছি।

শিবপ্রসাদ: ভাল ছবিতে যাঁরা নিয়মিত টাকা ঢালতে চান, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে হবে।

পত্রিকা: ভাল ছবি মানে?

শিবপ্রসাদ: এই ধরুন, ‘বালিগঞ্জ কোর্ট’, ‘চ্যাপলিন’, ‘এগারো’, ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’...

পত্রিকা: অন্য কথা বলি, ‘প্রাক্তন’ দেখার পরে অনেকের মনে হয়েছে ছবিতে ‘মেল শভিনিজম’-এর গন্ধ আছে!

শিবপ্রসাদ: শুনুন, ‘পিঙ্ক’ নারীকেন্দ্রিক ছবি। তাতেও সমালোচনা শুনতে হয়েছে পরিচালককে। ‘দঙ্গল’-এর ক্ষেত্রেও তাই। ও সব ভেবে লাভ নেই। দর্শক ‘দঙ্গল’ দেখতে দেখতে কখনও ভাববে না, আমির খান লোকটা পুরুষতান্ত্রিক! কিংবা ‘প্রাক্তন’ দেখে হল থেকে বেরিয়ে ‘তুমি যাকে ভালবাসো’ই গাইবে, কখনওই মেল শভিনিস্টের গন্ধ খুঁজবে না। সেটাই সিনেমা! আর এত যে ডিমনিটাইজেশন নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি, আমরা বলব, দরকার হলে মানুষ সিন্দুক ভেঙে টাকা নিয়ে ছবি দেখবে। তেমন ছবি বানাতে হবে। ছবি কোনও বাঁধ মানবে না! এটাই জীবনের দাবি!

তাঁকে মনে রেখে

আইসিসিআর-এ ‘শ্রাবণের গান’ অনুষ্ঠানে

শৈলজারঞ্জন মজুমদারের জন্মদিনে আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল ‘সুনন্দন’ আয়োজিত ‘শ্রাবণের গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। শৈলজারঞ্জনের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ রচিত বর্ষামঙ্গলের বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশিত হয় এ দিনের অনুষ্ঠানে। এনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সমবেত এবং একক রবীন্দ্রসঙ্গীতও পরিবেশিত হয়।

সমবেত সঙ্গীতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে’, ‘হৃদয় মন্দ্রিল ডমরু’, ‘নীল অঞ্জন ঘন’ প্রমুখ। সোমা রায়ের কণ্ঠে ‘মম মন উপবনে চলে অভিসারে’, আয়ুশী কুণ্ডু’র ‘আমি কী গান গাব যে ভেবে না পাই’, উর্মিলা বসু’র গাওয়া ‘পুব হাওয়াতে দেয় দোলা’— এই একক গানগুলি বেশ মনোগ্রাহী। মন ছুঁয়ে যায় এনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের পরিণত কণ্ঠে পরিবেশিত— ‘আজি ঝড়ের রাতে’, ‘ওই মালতীলতা দোলে’, ‘সখী আঁধারে একেলা ঘরে’ এবং ‘তোমার মনের একটি কথা আমায় বল’ রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলি। ভাষ্যপাঠে ছিলেন শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় এবং অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়। নৃত্য পরিবেশনে ছিলেন পূর্ণিমা ঘোষ এবং তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা। শিল্পীকে সহযোগিতা করেছিলেন এষা গোস্বামী।

Shiboprosad Mukherjee Nandita Roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy