সম্প্রতি শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শিঞ্জন নৃত্যালয়ের ২৯তম বার্ষিক অনুষ্ঠান। সংস্থার কর্ণধার গুরু অলকা কানুনগোর পরিচালনায় এই অনুষ্ঠানটি হয়। তাঁকে পরিচালনায় সহায়তা করেন পৌলমী চক্রবর্তী এবং নিবেদিতা দাঁ। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বৈশালী ভুঁইয়া। সংবর্ধনা জানানো হয় রিনা জানা, কাকলি বসু, মায়া ভট্টাচার্য, দেবমিত্রা সেনগুপ্ত, রাজীব ভট্টাচার্য এবং সুবিকাশ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট ওড়িশি নৃত্যগুরুদের। সূচনায় সংস্থার শিশু শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে ‘পদ বন্দে গণনাথ’ শীর্ষক গণেশবন্দনা। গণেশের আশীর্বাদ নিয়ে সূচনাই এই নৃত্যাংশের মূল কথা।
শিশু ছাত্রীরা নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। এই অংশে আরাধ্যা গোস্বামীর পরিবেশনা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গণেশ বন্দনার কোরিয়োগ্রাফার পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র ও সুরকার পণ্ডিত ভুবনেশ্বর মিশ্র। পরবর্তী নিবেদন ‘দুর্গাস্তুতি’। ‘জটাজুট সমযুক্তম’ এই স্তোত্রের মাধ্যমে দেবী দুর্গার গুণাবলি, রূপমাধুর্য এবং দশভুজা দুর্গার মহিষাসুর বধের রূপটিকে সুন্দর ভঙ্গিমা দ্বারা সুচারু ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিথি দাস। তিথির পরিবেশনায় যথার্থ অনুশীলনের ছাপ সুস্পষ্ট ও মুদ্রার প্রয়োগ যথাযথ। কোরিয়োগ্রাফি করেছেন পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র, সঙ্গীত রচয়িতা দেবাশিস সরকার। এই নৃত্যাংশ তাল মালিকায় এবং রাগ মালিকায় নিবদ্ধ।
এর পর সমবেত পরিবেশনা বটু নৃত্য। আগাগোড়া যতিনিবদ্ধ নৃত্যশৈলীতে বীণা, বেণু, মঞ্জিরা, মর্দানা, দর্পণ এবং আলম এই মূর্তিগুলিকে সুন্দর ভঙ্গিমা দ্বারা প্রদর্শিত করা হয়েছে। এই নৃত্যাংশের কোরিয়োগ্রাফি পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের, যার পুনর্বিন্যাস করেন গুরু অলকা কানুনগো। সুরকার পণ্ডিত ভুবনেশ্বর মিশ্র। পরবর্তী একক শিল্পী স্বরলিপি রায়। ‘মো কৃষ্ণ পরি’ প্রচলিত এই সঙ্গীতের সঙ্গে যে নৃত্য প্রদর্শন করা হয়, তা মূলত অভিনয়প্রধান। এখানে মাতৃরূপী যশোদা বালক কৃষ্ণকে কী ভাবে খাওয়াচ্ছেন, সাজাচ্ছেন, বন্ধু সুদামার সঙ্গে খেলা করাচ্ছেন এবং পরিশেষে যমুনায় স্নানের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন... যশোদার এই নানাবিধ কাজের বর্ণনাকে সুন্দর মুদ্রা ও ভাব প্রয়োগ দ্বারা নিখুঁত ভাবে, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শিল্পী স্বরলিপি রায় ফুটিয়ে তুলেছেন। এই নৃত্যাংশের পদ রচয়িতা লোকনাথ পট্টনায়ক, সুরকার ধীরাজ মহাপাত্র এবং কোরিয়োগ্রাফার গুরু অলকা কানুনগো।
এর পরের নিবেদন সমবেত বসন্তপল্লবী নৃত্য। বসন্ত রাগ এবং একতালি তালে নিবদ্ধ এই সমবেত যতিপ্রধান নৃত্যাংশে সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী শালিনী সরকার। পরবর্তী শিল্পী দেবারতি গোস্বামীর একক পরিবেশনা ‘কে ডে ছন্দে’। প্রখ্যাত কবি বনমালী দাস রচিত এই নৃত্যাভিনয়টিতে মা যশোদাকে শ্রীকৃষ্ণ কী ভাবে বিশ্বরূপ দর্শন করিয়েছিলেন, তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। মিশ্র পিলু রাগ এবং রূপক তালে নিবদ্ধ নৃত্যাংশটিতে শিল্পীর নিপুণ অভিনয় ও স্পষ্ট মুদ্রা দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুমন মণ্ডল পরিবেশিত বিশুদ্ধ যতি দ্বারা নিবদ্ধ বসন্ত পল্লবী ছিল ওই সন্ধার পরবর্তী নিবেদন। সুন্দর নৃত্যভঙ্গিমা এবং বলিষ্ঠ পদচারণার মেলবন্ধন প্রদর্শিত হয় সুমনের উপস্থাপনায়। এই নৃত্যাংশের কোরিয়োগ্রাফি করেন গুরু অলকা কানুনগো। পরবর্তী নিবেদন ‘পথ ছাড়ি দে’— যেখানে রাধা কৃষ্ণের লীলার সুন্দর নৃত্যরূপ দিয়েছেন একক শিল্পী ঊর্য্যশ্রী বসাক। এটি একতালি তালে নিবদ্ধ। শ্রীরাধার সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন প্রেমলীলার রূপবর্ণনার যে নৃত্যাভিনয় শিল্পী পরিবেশন করেন, তা অত্যন্ত নজরকাড়া।
ওই সন্ধ্যার শেষ নিবেদন সমবেত নৃত্য ‘শঙ্কর বর্ণম পল্লবী’। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাঁর প্রতিভার দ্বারা নিখুঁত ভাবে একসঙ্গে যতিপ্রধান এই নৃত্য উপস্থাপনা করেন। দক্ষ তালিমের ছাপ সুস্পষ্ট ছিল পরিবেশনায়। যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অর্জমা কুণ্ডু, সৃজিতা ভট্টাচার্য, সমাদৃতা বসু প্রশংসার দাবি রাখেন। শঙ্কর বর্ণম রাগ ও একতালি তালে নিবদ্ধ নৃত্যাংশটির কোরিয়োগ্রাফার পদ্মবিভূষণ গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র, পুনর্বিন্যাসে গুরু অলকা কানুনগো। আলো এবং শব্দক্ষেপণের ব্যবহার আরও আকর্ষক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এই ধরনের অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেয় এবং ভবিষ্যৎ শিল্পী তৈরি করতে সহায়তা করে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)