তাঁ রা চাননি যে, গ্যালারি বুক করা সত্ত্বেও অতিমারির কারণে প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যাক। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সাইট খুলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ১৯তম ‘নন্দন শান্তিনিকেতন’-এর আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীটি তাঁরা অনলাইনেই দেখাবেন। ষাট জন শিল্পী-ভাস্করের একশো কুড়িটি কাজ ছিল প্রদর্শনীতে। সকলেই শান্তিনিকেতন কলাভবনের প্রাক্তনী। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নবীন-প্রবীণের এ এক শৈল্পিক মেলবন্ধন। ভারতখ্যাত শিল্পী থেকে অতি নবীনদের কাজের বৈচিত্র যেমন ছিল, পাশাপাশি বহু পুরনো, এমনকি দায়সারা কাজও দেখিয়েছেন কেউ কেউ, যা কাম্য ছিল না তাঁদের কাছ থেকে।
রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় কালো একটি রেখায় অসম্পূর্ণতাকেও সম্পূর্ণ করেছেন নারীর শরীরী অবস্থানে। তাঁর চিরাচরিত কাব্যিক রেখা ও দু’-তিন স্বল্পবর্ণের মিশ্রলাবণ্যে স্পেস ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে চমৎকার এক সংগঠনের প্রক্রিয়া অচিরেই তৈরি হয়ে যায়। এই গভীরতর অভিজ্ঞতায় প্রাঞ্জল হয় সেই অনির্বচনীয় অথচ প্রয়োজনীয় এক-একটি অধ্যায়। তাঁর দু’টি কাজেই এই ধারণা বাস্তবায়িত। কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভারতীয় ঐতিহ্যানুসারী লাবণ্যময় দুটি জলরং করেছেন বর্ণোচ্ছ্বাসহীন নমনীয় রচনায়।
পার্থপ্রতিম দেব কালচে সবুজ মানবের ম্যাজিক-মুহূর্তকে প্রতীকায়িত করেছেন অ্যাক্রিলিকে। সদ্যপ্রয়াত শুচিব্রত দেবের নৈঃশব্দ্যের নিসর্গটি দৃষ্টিনন্দন। সরার প্যাটার্নে অ্যাক্রিলিকের রঙিন দু’টি গোলাকার রচনায় শান্তনু ভট্টাচার্য লোকশিল্পের অনুষঙ্গে পুরাণকেই যেন প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। বহুবর্ণের রূপ ও রূপবন্ধে মশারির জালির মতো টেক্সচার, নানা জ্যামিতিক ফর্মের জমাট রচনায় মনোজ সরকারের অ্যাক্রিলিকের কাজ দু’টিও বেশ। রেখার ছন্দ ও সংযত বর্ণের সমন্বয়ে ভারতী চৌধুরীর দু’টি ক্যানভাসই কাব্যিক রচনায় সম্পৃক্ত। লাল, নীলের সহাবস্থানে অন্য হালকা ও গাঢ় বর্ণের মধ্যেও একরৈখিক ব্যঞ্জনায় নারীমুখ ও শরীরী বিভাজনে নাটকীয়তা এনেছেন প্রবীর বিশ্বাস। আলপনা দাঁ-র এচিংয়ের তুলনায় টেরাকোটার চমৎকার কাজটি স্টাইল ও রচনার বিভাজনে অনেক বেশি অর্থবহ। প্রত্ন-ভাস্কর্যের সঙ্গে আধুনিকতার ডিজ়াইন মিলেমিশে বেশ অন্য আবহ তৈরি করেছে।