Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Arts

Paintings: মুক্তডানার চারপাশের বিচ্ছিন্নতা, বিশুদ্ধতা, বিকিরণ...

কোহিনুর কবিরাজ বেশ কিছু জলরঙে গ্রামবাংলার নিসর্গ এঁকেছেন। হঠাৎ কোনও ক্ষেত্রে খুব সামান্য হলেও একটা আলোকচিত্রের বিভ্রম হয়।

অতনু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১৩
Share: Save:

চার শিল্পীর ৬৬টি কাজ, দেখতে দেখতে ফের সেই ডিসপ্লে, নির্বাচন, পাশাপাশি ছবির উপর-নীচ সহাবস্থান, ইন-বিটুইন স্পেস, আই লেভেল উপেক্ষা করা চোখকে বড্ড পীড়া দিল। এই ধরনের একটি প্রদর্শনীর চারপাশটা সঙ্গত ভাবেই বিন্যস্ত হতে পারেনি। অথচ খুব সহজেই তাঁরা সবটা সুচারু ভাবে সম্পন্ন করতে পারতেন। ছবি কমিয়ে, শুধু প্রদর্শনীর কথা ভেবেই কাজগুলির নির্দিষ্ট নির্বাচন করে, ডিসপ্লে করার সময় আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি সম্পর্কে যদি সিরিয়াস হয়ে প্রদর্শনীটিকে উপস্থাপিত করতেন। পরবর্তী যৌথ যে কোনও প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি তাঁরা আশা করি, ঠিক ভাবে বন্দোবস্ত করবেন। ‘ফ্রি উইংস’-এর ‘চারপাশ’ প্রদর্শনীটি সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে শেষ হল।

কোহিনুর কবিরাজ বেশ কিছু জলরঙে গ্রামবাংলার নিসর্গ এঁকেছেন। হঠাৎ কোনও ক্ষেত্রে খুব সামান্য হলেও একটা আলোকচিত্রের বিভ্রম হয়। তিনি প্রধানত তীব্র ঝোড়ো হাওয়ায় বর্ষার আভাস ও গাছের বেঁকে দুলে ওঠা ভাব, আকাশে আষাঢ়ের সাদা-কালো উচ্ছ্বাস, মেঘেরই বিভিন্ন চরিত্রের বিন্যাস, একাকী মানুষ, সরু দূরে চলে যাওয়া রাস্তা, নদীর ধার, বৃষ্টিস্নাত জলাশয়ে তালগাছের আলো-আঁধারি প্রকৃতি, ঝর্না, সূর্যালোক ভেদ করা মেঘ-বিচ্ছুরিত আলোর ফোকাস... এই রকম সব ছবি এঁকেছেন। তবে তাঁকে কাঠিন্যের জায়গাগুলো বুঝতে হবে। এর মধ্যেও যে রিজিডিটি ও মোনোটোনি এসে গিয়েছে তাঁর ট্রিটমেন্ট ও স্টাইলে, সেটুকুও তাঁকে বুঝতে হবে। ছবিতে লাবণ্যের রেশ রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ হয়ে যাচ্ছে কি না, আলোছায়ার, অন্ধকারের প্রয়োজনীয় আবহের বিন্যাস ভারসাম্যহীন হয়ে যাচ্ছে কি না, কতটুকু কাজ দরকার, কোথায় স্পেস ও অনুষঙ্গের ব্যবহারের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রাখা উচিত, এগুলো অচিরেই কোহিনুরকে বুঝতে হবে। তাঁর হাত ভাল, তবে স্পটে বসে স্টাডি আর স্মৃতির ছবিতে অনেক রকম বাধ্যবাধকতা ও ‘পার্সোনাল ইমেজারি’-র নির্দিষ্টতাকেও মাথায় রাখতে হয়। ‘বিউটি অব নেচার’, ‘মনসুন’ ভাল কাজ।

শুভঙ্কর সিংহ কোনও বিষয়-নির্ভরতার উপর ভিত্তি করে কাজ করেননি। তাঁরও একটি টেকনিক আছে, কিন্তু ছবিতে নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্যমাত্রা প্রতিফলিত নয়। ‘হার্ট আন্ডার রিপেয়ার’ বা ‘ইম্প্রেশন’ কিংবা ‘দ্য শেডস অব স্মাইল উইথ কনস্ট্যান্ট টিয়ারস’ ও ‘ক্রুসিফিকশন অব ট্রুথ’ বা ‘ট্র্যাপ উইদিন ইনফাইনাইট’ কাজগুলির মূল প্রতিপাদ্য কী? একটা কোনও অতীত বা সাম্প্রতিক ঘটনাবিন্যাসের সূত্রে কোনও মুহূর্তকে চয়ন করে একটি সৃষ্টিপর্বে শিল্পীর মুনশিয়ানা হয়তো স্টাইলাইজ়েশন বা টেকনিককে প্রতীকায়িত করে, কিন্তু পেন্টিংয়ের মূল জায়গার কতকগুলি প্রাথমিক দিকের সঙ্গে যে সব পরম্পরাগত সম্পর্ক, সেগুলো কি শুভঙ্কর বুঝেছেন? না কি শুধু মাত্র নির্দিষ্ট স্পেসনির্ভর একটি কম্পোজ়িশন— সেখানে রেখা, রং, জ্যামিতি, নকশা, প্রতিচ্ছায়া ইত্যাদির মাধ্যমে এক-একটি ছবি তৈরি করতে চেয়েছেন? ছবিকেও বুঝতে হবে, সচিত্রকরণের ধারণাকেও জানতে হবে। কিছু জায়গায় ইলাস্ট্রেশনেও পেন্টিংয়ের বিভ্রম জাগে। ইলিনা ওলেনিয়াক, শোফো আর ফ্রাঙ্ক, নোরা শেপলের কিছু কাজে এমনই অনুভূতি কাজ করে। শুভঙ্করকে কম্পোজ়িশন, অ্যারেঞ্জমেন্ট, ফর্ম, স্পেস ও তার বাস্তবতা নিয়েও ভাবতে হবে।

প্রতীক মল্লিকের ক্ষেত্রেও অনেকটা ওই কথাই বলা চলে। তবে তাঁর হাতে জোর আছে, মুনশিয়ানাও। কিন্তু ছবি তৈরির কতকগুলি ক্ষেত্রে মনে হয়, তিনি কম্পোজ়িশন ও অ্যারেঞ্জমেন্ট সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না। কন্টিতে কাগজে ঘোড়া নিয়ে কয়েকটি ঝোড়ো ড্রয়িং করেছেন বেশ ভাল, স্পিড আছে, ফোর্সও। তাঁর ছবি প্রতীকী, তবে কিছু বর্ণলিপির ব্যবহার, অতি সংক্ষিপ্ততার আবহে রূপবন্ধের আংশিক ব্যবহার, শূন্যতায় বিন্যস্ত স্পেস, ভার্টিকাল ডিভাইসের মধ্যবর্তী অংশের অবয়বী বাস্তবতা ও নাটকীয়তা অনেক রকম প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। মুখমণ্ডলের হঠাৎ উপস্থিতি অন্ধকার ভেদ করা মোহময় আলোর মধ্যে ঘটে যাওয়া ওই ‘দ্য টাইম লর্ড’ বা ‘পরশুরাম অরা’-তে তিনি ঠিক কী বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন? ‘দ্য স্পেসটাইম মেমরি’ সম্পর্কেও একই কথা বলা চলে। তাঁর ট্রিটমেন্ট মন্দ নয়। পটভূমি ও রূপবন্ধ, অনুষঙ্গ ও বিন্যাস, ন্যারেশন ও ডায়মেনশন নিয়ে আরও পজ়িটিভ ও ডাইরেক্ট হতে হবে। কাজ ভাল।

সুদীপ্ত অধিকারীর ‘অ্যানাদার প্ল্যানেট’-এরই তো যেন নানা অংশ ওই অন্যান্য ছবিগুলো। ভীষণ মোনোটোনি-যুক্ত, যা অচিরেই কাটানো প্রয়োজন। যদি ল্যান্ডস্কেপ বলা যায় তা এক রকম, যদি প্ল্যানেট বলা যায় তা-ও চলবে। নেচার, তা-ও। ‘অ্যারাইভাল পয়েন্ট’-ই হোক বা ‘ড্রিমার’, ‘এজ অব দ্য ওয়র্ল্ড’-ই হোক বা ‘ফায়ার অন আইস’ বা ‘দ্য থ্রোন’। অন্যান্যগুলিও সবই ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের উজ্জ্বলতম বর্ণ বিচ্ছুরণের তীব্রতা। রং ছিটোনোর (বিশেষত সাদা) এই নানা প্রয়াস মহাজাগতিক আলোর বিকিরণ বা রশ্মি যেন। কিন্তু ছবির মূল কাঠামোর অন্তঃসারশূন্যতা নিয়ে ভাবতে হবে। চোখের আরাম কিন্তু সব ক্ষেত্রে ছবির প্রকৃতি, লাবণ্য ও দারুণ নিসর্গের প্রশংসা করলেও পেন্টিং কোয়ালিটির অসম্পূর্ণতা থেকেই যায়। পোলোকের সারাৎসার এক গভীরতর শিক্ষা দেয় তার ধারাবাহিক জার্নির জন্য। সুদীপ্ত এগুলি নিয়ে ভাবলে ভাল। তাঁর ছবি বড্ড নৈসর্গিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arts Paintings India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE