গত ১০ মে কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে অনুষ্ঠিত হল ‘ওই আসনতলে’। শাশ্বতী গুহঠাকুরতা ও শ্রেয়া গুহঠাকুরতার যৌথ অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখ পেরিয়েছে তার ঠিক আগেই। তাই কবির জন্মদিন ছিল সে দিনের অনুষ্ঠানের প্রধান উপজীব্য। শান্তিনিকেতনে কখন কবির প্রথম জন্মদিন পালিত হল, কখনই বা লেখা হল ‘সুন্দর তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে’... সবই শাশ্বতীর পরিচ্ছন্ন কণ্ঠে পরিবেশিত হল। রবীন্দ্রনাথের অমোঘ বাণী ‘প্রকাশিত হও’ শিল্পীর জীবনের মন্ত্র। জন্মদিনে আবার আমরা পাই ‘ওই মহামানব আসে’ বা ‘সভ্যতার সঙ্কট’, যা সাধারণ মানুষের কাছে চিরকালীন সম্পদ। রবীন্দ্রনাথ শেখান ‘সংসারে বড় হল প্রীতি, খ্যাতি নয়’। শ্রেয়া গেয়ে ওঠেন, ‘শুভ্র প্রভাতে’। সুরেলা কণ্ঠ মিশে যায় সুরেলা এস্রাজের সঙ্গে।
শাশ্বতীর উপরে অনেক কম বয়স থেকেই ছায়া পড়ে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ দিনের অনুষ্ঠানে শাশ্বতী মনে করান তাঁর ‘অণিমা’ থেকে ‘কণিকা’ হওয়ার গল্প। শান্তিনিকেতনে প্রথম টেলিফোন এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্পও উঠে আসে কখনও। আর আসে এই সব ঘিরে নানা অনুষ্ঠান আর গানের কথা। কখনও শুনি ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে’, কখনও পরিবেশিত হয় ‘বিরহ মধুর হল আজি’। ‘বিরহ মধুর’ গানের লয় নির্বাচন অপূর্ব। শ্রেয়ার কণ্ঠে ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী’ বা ‘ও যে মানে না মানা’ বিপ্লব মণ্ডলের যন্ত্রানুষঙ্গে চমৎকার এক ছবি আঁকে দর্শকমনে। চোখের সামনে যেন তুলে ধরা হয় কণিকার খুব কম বয়সের ঘটনা, যেখানে ‘ছায়া ঘনাইছে’ গানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন। শাশ্বতী কথায় আঁকলেন ছবি, আর শ্রেয়া সেই ছবিতে সুর মেলালেন। শাশ্বতী তাঁর পাঠে পরিচয় করালেন পুরনো আশ্রমিকদের— কখনও প্রমথনাথ বিশী,কখনও রানী চন্দ প্রমুখ ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কত ঘটনা, কত স্মৃতি... এই অনুষ্ঠান সে দিনের শ্রোতাদের পুরনো শান্তিনিকেতন আশ্রমে যেন পৌঁছে দিল।
এই তো জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ প্রণাম। যন্ত্রশিল্পী বিপ্লব মণ্ডল, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও তথাগত মিশ্র সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণ করলেন তাঁদের যন্ত্রানুষঙ্গে। গান, পাঠ, যন্ত্রসঙ্গীত ও মঞ্চ... সবই যেন ছিল পরস্পরের পরিপূরক। কলকাতার বুকে শান্তিনিকেতনের ছোঁয়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য শাশ্বতী ও শ্রেয়ার।
অনুষ্ঠান
- গত ১ জুন সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার ত্রিগুণা সেন মঞ্চে এক সুরেলা সন্ধ্যায় সঙ্গীতের আসর হয়ে উঠল বাংলা গানের ইতিহাস রোমন্থন পর্ব। শৌরি মিয়াঁ থেকে নিধুবাবু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে উত্তমকুমার— এক প্রবীণ শিল্পীর কণ্ঠে উঠে এল সকলের গানই। বিরামহীন দু’ঘণ্টায় দুই শতকের বাংলা গান পরিবেশনের সঙ্গে তার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করলেন শিল্পী সুকুমার সেন। সত্তরোর্ধ্ব শিল্পীকে শ্রোতাদের সামনে হাজির করেছিল তানসেন অ্যাকাডেমি। এই প্রতিষ্ঠানের জনক প্রয়াত তবলাবাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠানের একটি অংশে অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থী দেবার্ঘ্য দাস, অদ্যয় গুপ্ত ও শুভম মল্লিক তবলা-লহরা পরিবেশন করেন। ‘গানের ঝর্ণাতলায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির পরবর্তী অংশে দু’দশকের বাংলা গান শোনান সুকুমার সেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য। শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী নিবেদিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্যোতি গোহ, শান্তনু ভট্টাচার্য-সহ উপস্থিত ছিলেন অনেকেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)