চুলের স্বভাবটাই গোলমেলে। যতই তেল-শ্যাম্পুর রুটিন পরিচর্যা করে পরিপাটি রাখার চেষ্টা করুন, খানিক পরেই উদ্ভ্রান্ত আর উসকোখুসকো দেখাবে। হয়তো পার্টি বা অনুষ্ঠানের জন্য তাকে স্পেশ্যাল স্টাইলিং করেছেন। শখ করে ব্লোয়ার, ভলিউম মুজ়, ক্রিস্পার, শিমার বা স্ট্রেটনার দিয়ে ফিল্মে দেখা রাজকন্যের মতো কেতাদুরস্ত বানালেও ঘণ্টাখানেক পরেই সে আপনাকে ফাঁকি দিল! এই সব স্টাইলিংয়ের গয়না খানিক পরেই যেন টান দিয়ে খুলে ফেলল চুল নিজেই! আর যে-কে-সেই এলোমেলো হয়ে গেল! এত সাধের স্টাইলিং প্রডাক্ট আপনার চুলে ঠিক টিকছে না মনে করে ঠোঁট ফোলাবেন না। বরং একটা প্রাইমার জোগাড় করে ফেলুন।
প্রাইমার কী, জানেন কি?
যাঁরা চুল হাইলাইট করেন, তাঁরা হেয়ার প্রাইমারের সঙ্গে পরিচিত। এর কাজ হল স্টাইলিংয়ের আগে চুলকে মসৃণ ও নিখুঁত করে তোলা। এতটাই নরম করে রাখা যে, কোনও অংশ রুক্ষ বা অগোছালো থাকবে না। ঠিক যে কাজটা মেকআপের ক্ষেত্রে স্কিন প্রাইমার করে। ব্রণয় বিধ্বস্ত বা এবড়োখেবড়ো ত্বক মোলায়েম রাখে, যাতে তার উপরে মেকআপ করলে তা ভাল বসে। ত্বক অনেকক্ষণ ধরে মেকআপ রাখতে পারে। হেয়ার প্রাইমারও একই ভাবে যে কোনও হেয়ার স্টাইলকে দীর্ঘস্থায়ী রাখার কৌশল জানে।
স্টাইলিস্টদের কথায়, চুলে হেয়ার প্রাইমারের আস্তরণ থাকলে তা পরিবেশের আর্দ্রতা, শুষ্কতা এবং ধুলোকণার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে। এদেরই ক্ষতিকর প্রভাবে চুলের ময়শ্চার বা সৌন্দর্যরস নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্যই চুল স্টাইলিং সামলে রাখতে পারে না। মাথার চামড়ার গ্রন্থি থেকেও তেল বেরোয়। সেই তেলও সুন্দর ভাবে সাজানো রেশমি চুলের পরম শত্রু। প্রাইমার লাগানো থাকলে এই তেলও চুলের কিচ্ছুটি করতে পারবে না।
প্রথমেই চুল ভাগ করতে হবে
কোন চুলে কোন প্রাইমার?
এখন বাজারে দু’রকমের প্রাইমার মেলে। এক রকম প্রাইমার নির্জীব চুলে চটপট চেকনাই আনে। অন্য রকম প্রাইমার চুলের জট ছাড়িয়ে রাখে। চুলের ঘনত্ব বুঝে প্রাইমার বেছে নিন। ফিনফিনে চুলে স্প্রে প্রাইমার এবং মাঝারি থেকে ঘন চুলের জন্য ক্রিম প্রাইমার ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহার করবেন কী ভাবে?
প্রাইমার ব্যবহার প্রণালী সহজ।
• স্নান করা ভিজে চুলে কন্ডিশনার মাখানোর পরেই অল্প পরিমাণ প্রাইমার লাগিয়ে ফেলুন। তার পরে শুরু করুন চুলের স্টাইলিং।
• হঠাৎ কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের প্ল্যানিং হয়েছে? তবে চুলের স্টাইলিং শুরু করার আগে প্রাইমার লাগিয়ে নিলেও চলবে। আসলে ব্লোয়ার, ড্রায়ার, কার্লিং আয়রন বা পার্মার বেশির ভাগ স্টাইলার কেরামতি করতে হিটিংয়ের সাহায্য নেয়। এই কৃত্রিম তাপ প্রয়োগে চুলের ক্ষতি হয় বলেই স্টাইলারের সঙ্গে একই কিটে প্রোটেক্ট স্প্রে দিয়ে দেওয়া হয়। এই স্প্রেতে চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
আঁচড়ে সমান করে নিন
• অনেকক্ষণ ধরে ভাল দেখাতে প্রোটেক্ট স্প্রে যথেষ্ট নয়। কারণ এমন হিটিংয়ের প্রভাব সাময়িক। উত্তাপ উধাও হলেই চুল নেতিয়ে পড়বে। স্টাইল তক্ষুনি শেষ। এখানেই বাজিমাত করে প্রাইমার। প্রোটেক্ট স্প্রের কাজের সঙ্গেই স্টাইলও ধরে রাখে অনেকক্ষণ।
• কিছু হেয়ারস্টাইলের বৈশিষ্ট্যই হল তা বেশিক্ষণ থাকে না। যেমন ব্লো আউটস (ঢেউ খেলানো চুল) বা কার্লার দিয়ে সেট করা ম্যাগির মতো কোঁকড়ানো চুল। ক্রিস্পার দিয়ে টাচ আপ করা চুল কিছুক্ষণ পরেই রুক্ষ হয়ে যায়।
সব ধরনের হেয়ারস্টাইলকে দীর্ঘস্থায়ী করবেই প্রাইমার। পরের বার শ্যাম্পু না করা পর্যন্ত হেয়ারস্টাইল থাকবে পারফেক্ট। স্টাইল অনুযায়ী চিরুনি চালালেও কোনও অসুবিধে নেই।
এ বার প্রাইমারের পালা
কখন চাই প্রাইমার?
বাইরের রোদ, জল, ধুলো বা ঘরের ভিতরের কনকনে এসি— সব আবহাওয়াতেই চুলের স্টাইল ধরে রাখতে সক্ষম। শীতে পিকনিক, লং ড্রাইভ থাকলে প্রাইমার লাগিয়ে নিশ্চিন্তে চুল সেট করুন। সারাটা দিন স্টে করবে ওই স্টাইল। অফিস থেকে বেরিয়ে সন্ধেয় বিয়েবাড়ি বা পার্টিতে যেতে হবে? তখনও কাজে আসবে প্রাইমার। কাকভোরে কেয়ারি করা চুল মাঝরাত পর্যন্ত ক্লান্তিহীন ভাবে ডিউটি দেবে।
প্রাইমারের সুবিধে
সবচেেয় বড় গুণ হল এই প্রডাক্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। চুলের স্বাভাবিক জৌলুসকে রক্ষা করে। আবার নিজের উপস্থিতিটুকু বুঝতেও দেয় না। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে চুল আবার আঁচড়াতে গেলেই প্রাইমার লাগানোর সুবিধেগুলো বুঝতে পারবেন। চুল তুলতুলে ঝলমলে থাকবে, জট পড়বে না বা শক্ত কাঠও হয়ে যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যে কোনও স্টাইলিং প্রডাক্ট চুলে লাগালে পরে সেটা ভাল ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। কিন্তু রোজ জলের তোড়ে চুল ধুলেও ডগা ফাটে। প্রাইমার লাগানো থাকলে এমনিই তা চুলের বর্ম হয়। তাই অনুষ্ঠানের পরদিন চুলে শ্যাম্পু দিতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না। চুলে জল দিন যখন খুশি। পাহারায় আছে প্রাইমার।
মডেল: শ্রীময়ী, ছবি: তন্ময় সেন, লোকেশন: ল্যাকমে সালঁ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy