ছোট্ট বাগানে আম, লিচু, পেয়ারা, লেবুর ছোট ছোট গাছ। ফলের ভারে গাছগুলি নুইয়ে পড়ছে— স্বপ্ন নয়, বাস্তব! ছোট জায়গায় এমন ফলন সম্ভব একমাত্র কলমের জোরে। না, এ কলম লেখার কলম নয়! একই প্রজাতির দু’টি গাছকে বিভিন্ন ভাবে জোড়া দিয়ে বা কখনও গাছের কিছুটা বাকল কেটে অথবা স্রেফ ডাল পুঁতে গাছের চারা তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিকেই বলে কলম করা। এই ভাবে তৈরি গাছের ফল-ফুলের মান ভাল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। কলমের পদ্ধতি একাধিক। তবে তার মধ্যে চল বেশি জোড়, গুটি, শাখা কলমের। মে থেকে অগস্ট, কলম করার উপযুক্ত সময়। এই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ও গাছের কোষের কার্যকারিতা বেশি থাকে। কলমের গাছ সব নার্সারিতেই পাওয়া যায়। তবে নিজে হাতে করাও এমন কিছু কঠিন কাজ নয়।
জোড় কলম
জোড় কলমের জন্য দরকার একটি চারা গাছ বা রুটস্টক। চলতি বাংলায় বলে এলা। আর দরকার গাছের কাণ্ডের অংশ বা সিয়ন। একটি পরিণত ও সুস্থ গাছের ফলের বীজ থেকে প্রথমে স্টক তৈরি করে নিন। বীজ বপনের আগে আগাছা পরিষ্কার করে, মাটি ভাল করে কুপিয়ে, জৈব সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে নিতে হবে। স্টক কতটা বড় হলে কলমের জন্য নেওয়া হবে, সেটা নির্ভর করে গাছের উপরে। যেমন আমের জন্য প্রয়োজন ন’ থেকে বারো মাসের স্টক। সেখানে লেবু গাছের জন্য দরকার ছ’ থেকে আট এবং কুলের জন্য দেড় থেকে দু’মাস। এর পরে গাঢ় সবুজ পাতাওয়ালা উৎকৃষ্ট মানের গাছ থেকে সমব্যাস ও আকৃতির পরিণত অর্ধশক্ত ডাল বাছতে হবে। যাকে বলে সিয়ন। আম, জাম, পেয়ারা ইত্যাদি দ্বিবীজপত্রী গাছেই জোড় কলম হয়। একবীজপত্রীতে ক্যাম্বিয়ান কলা থাকে না। যা না থাকলে দু’টি গাছের কাণ্ড জোড়া যাবে না। জোড় কলম করা যায় একাধিক পদ্ধতিতে। তবে তার মধ্যে ফাটল জোড় সব চেয়ে জনপ্রিয়। সফলতার হার বেশি, খরচও কম। এই পদ্ধতিতে সাধারণত স্টকের গোড়া থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উপরে গ্রাফ্টিং করা হয়। স্টকের মাথা দু’-তিন সেন্টিমিটার লম্বালম্বি ভাবে চিরে নিতে হবে। এর পরে সিয়নের গোড়া দু’-তিন সেন্টিমিটার মাপে তেরছা করে কেটে নিন। স্টকের কাটা অংশে মাপ করে ঢুকিয়ে পলিথিনের ফিতে পেঁচিেয় শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। জোড়া স্থানটির নীচে অবশ্যই যেন কিছু পাতা থাকে।
গুটি কলম
ফলের মধ্যে জামরুল, বাতাবি লেবু, ডালিম, করমচা, গোলাপজাম, জলপাই আর ফুলের মধ্যে গোলাপ, কামিনী, ভেলভেট ভাল হয় গুটি কলমে। গুটি কলমের পদ্ধতি আরও সোজা। এর জন্য প্রয়োজন জৈব সার। তিন ভাগ এঁটেল মাটি ও এক ভাগ গোবর বা পচা পাতা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জৈব সার তৈরি করে নিন। গুটি কলমের জন্য প্রয়োজন এক থেকে দু’বছর বয়সের গাছের সতেজ, নীরোগ, পেনসিলের মতো মোটা ডাল। ওই ডালের আগা থেকে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার পরে, তিন থেকে চার সেন্টিমিটার মাপের ছাল ছুরি দিয়ে গোল করে কেটে উঠিয়ে নিতে হবে। পরে জৈব সারের সঙ্গে জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কাটা অংশে লাগাতে হবে। দেখাবে ঠিক গুটির মতো! পলিথিন দিয়ে গুটিটা বেঁধে দিন। দু’-তিন মাস পরে দেখবেন ওই ঢাকা অংশ থেকে শিকড় বার হচ্ছে। শিকড়ের রং খয়েরি হলে ডালটি গুটি-সহ কেটে পলিথিন সরিয়ে টবে পুঁতে দিন। গাছ ছায়ায় রাখবেন। এর চার-পাঁচ সপ্তাহ পরে মাটিতে লাগানোর উপযোগী হবে সেটি।
শাখা কলম
দেশি গোলাপের জন্য আদর্শ শাখা কলম। ভাল গোলাপ গাছের শক্ত ডাল তেরছা করে কেটে তাতে মধু বা দারচিনির পেস্ট কাটা অংশে লাগিয়ে পুঁতে দিন। রোদে রাখবেন না। ২০-২৫ দিনের মধ্যে শিকড় জন্মালে অন্য টবে বা মাটিতে পুঁতে দিন। এই পেস্ট ছত্রাক প্রতিরোধ করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy