Advertisement
E-Paper

ছোট থেকেই কী ভাবে সামলাবেন বাচ্চার বায়নাক্কা?

বাচ্চার বায়না পরিণত হয় জেদে। প্রত্যেক দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে কুড়চিকে চিপস বা চকলেট— কিছু কিনেই দেন ঠাকুমা। এক দিন টাকার ব্যাগ বাড়িতে ফেলে এসেছিলেন। রাস্তাতেই কুড়চি জুড়েছিল চিৎকার। ঠাকুমা অবাক হয়েছেন নিজেরই নাতনির জেদ দেখে।

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রত্যেক দিন স্কুল থেকে ফেরার পথে কুড়চিকে চিপস বা চকলেট— কিছু কিনেই দেন ঠাকুমা। এক দিন টাকার ব্যাগ বাড়িতে ফেলে এসেছিলেন। রাস্তাতেই কুড়চি জুড়েছিল চিৎকার। ঠাকুমা অবাক হয়েছেন নিজেরই নাতনির জেদ দেখে।

আবীর-মৌলি দু’জনেই চাকুরিরত। সপ্তাহান্তের কেনাকাটায় সঙ্গে নিয়ে বেরোন ছেলে মেঘকে। কিন্তু শপিং মলে ঢোকা মাত্রই ‘এটা কিনে দাও’, ‘ওটা নেব’ বলে শুরু হয় মেঘের বায়নাক্কা। প্রত্যেক মুহূর্তে ছেলের সব আবদার মেটানো সম্ভব হয় না বাবা-মায়ের। শুরু হয় টানাপড়েন, অশান্তি, হতাশার পর্ব।

আসলে বাচ্চার অবুঝ বায়না, আবদার বা জেদের মুখোমুখি পড়তে হয় কমবেশি সকল অভিভাবককেই। তার মোকাবিলাও করার চেষ্টা করেন তাঁরা নিজেদের মতো করে। কখনও সফল হন, কখনও বিরক্তি বাড়তে থাকে। ফলে যেমন অভিভাবকের মনে অশান্তি বাড়ে, শিশুটির জন্যও তা ক্ষতিকর।

প্রথমেই বোঝা দরকার যে, বায়না এবং আবদার একই রকম শোনালেও তার অর্থ আলাদা। যে শিশুটি আদুরে গলায় মা-বাবাকে কিছু কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করছে, তার সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে বায়নার। কোনও কিছু কিনে দিতেই হবে— এই মনোভাব থেকে বাচ্চা বায়না জোড়ে। আর বায়না পরিণত হয় জেদে। তখন শিশুর মনোভাব ‘ওটা আমি নিয়েই ছাড়ব’। আপনার বাচ্চার চাহিদা কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, সেটা বুঝবেন আপনিই।

শিশুর যখন বয়স মোটামুটি বছর দুই, তখন থেকেই তারা চিৎকার, কান্নাকাটির মাধ্যমে নিজেদের রাগ ও চাহিদা প্রকাশ করতে থাকে। তাই এই বছরটিকেই বাচ্চাদের জীবনে বলা হয় ‘টেরিবল টু’। বায়না ও জেদ নিয়ন্ত্রণ করার সময় কিন্তু শুরু হয় এই পর্যায়েই। ‘এখন ছোট, ওকে দিয়ে দেওয়া হোক। পরে না হয় ঠিক বুঝে যাবে’— এই মনোভাবটাই ভুল। শান্ত মাথায়, নরম সুরে বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন। তবে তার প্রত্যেক বায়নায় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে। বহু বায়নার মাঝে হাতে গোনা কয়েকটা আপনি শুনতেই পারেন।

আবার হতেই পারে আপনি মারাত্মক ব্যস্ত। আপনার ব্যস্ততা ঢাকার জন্য বাচ্চাকে হরেক জিনিস কিনে দিয়ে প্রশ্রয় বাড়াবেন না। এই অভ্যেস সন্তানকে বিপথে চালিত করতে পারে। তাকে বোঝান, কোনটা তার দরকার, কোনটা নয়। তার বন্ধুর বিশেষ খেলনা আছে বলেই যে তারও সেটা জরুরি— এই মনোভাব যেন তৈরি না হয়। আবার সন্তানকে আপনি অপশন দিতে পারেন। হয়তো সে বার্বি সেটের জন্য বায়না জুড়েছে। পাশাপাশি তার আবার কবিতার বইও ভারি পছন্দের। তা হলে তাকে জিজ্ঞেস করুন, ‘বার্বি না কি বই?’ অথবা সৃজনশীল ও গঠনমূলক জাতীয় খেলনা কিনে তাকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। কোনও বাচ্চার বায়নার মোড় পজ়িটিভ দিকে ঘোরাতে পারলে তারই ভাল।

বাচ্চাকে জিনিসের গুরুত্ব বোঝাতে শেখানো জরুরি। বোঝান, অনেক পেনসিল থাকা সত্ত্বেও বাজারের নতুন পেনসিল কেনার দরকার নেই। তাই বাড়ির পেনসিল শেষ হলেই নতুন ডিজ়াইনের পেনসিল কেনা যেতে পারে।

আর একটা কাজও করতে পারেন। কোনও বাচ্চা গাড়ির জন্য বায়না করছেই। তার অপছন্দের খাবার নিয়ে আপনিও তাকে খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করুন। এতে সে নিজেই বুঝবে, অতিরিক্ত বায়না বিরক্তিকর ও খারাপ লাগে।

এমনও হতে পারে বাচ্চা ভীষণ দামি রিমোট কন্ট্রোল্‌ড গা়ড়ির জন্য বায়না করেছে। সেই মুহূর্তে আপনার কাছে অত টাকা নেই। তাই ‘গাড়ি পরে কিনে দেব’ বলে তার পরিবর্তে অন্য ছোট জিনিস কিনে বায়না সামলানোর কাজ কক্ষনও করবেন না। এতে বাচ্চার এই ধারণা তৈরি হবে যে, একটা কিছু না পেলে অন্য কিছু নিশ্চয়ই পেয়ে যাব।

বাচ্চা যত বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেশে, তত আগ্রহ বাড়তে থাকে। ফলে প্রতিনিয়ত আসে নতুন কিছু কিনে দেওয়ার জেদ। কিন্তু কতটা দেবেন আর কোথায় থামবেন, সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। একে বলা হয় ‘লিমিট সেটিং’। দশটা জিনিস চাইলে দুটো দেবেন না কি চারটে জিনিসে থামবেন, সেটা আপনার দায়িত্ব। সন্তানকে লক্ষ্যে এগিয়ে দিতে সাহায্য করুন তার জেদকে কেন্দ্র করেই। অর্থাৎ সে যদি দামি কোনও খেলনা বা মোবাইল চায়, তাকে বোঝান যে, সেই বিশেষ জিনিসটি পেতে গেলে নিজেকেই অর্জন করতে হবে। এবং তা জেদের মাধ্যমে নয়। নিজে একটা চার্ট বা তালিকা তৈরি করতে পারেন। সেখানে নিজের প্রয়োজনেই লিখে রাখুন প্রত্যেক দিন কত বার জেদ করে সে। তাকে বোঝাতে পারেন যে, তিন-চার ঘণ্টা বায়না না করলে একটি করে টিক পাবে সে। প্রতি টিকের একটি মূল্য আছে। সে যত টিক পাবে, তত মূল্য বাড়বে। মাসের শেষে সেই মূল্য দিয়েই বাচ্চা কিনতে পারবে নিজের পছন্দের জিনিস। এবং তার জন্য বাবা-মায়ের মুখাপেক্ষী হয়েও থাকতে হবে না। নিজের পছন্দের জিনিস নিজেই অর্জন করতে পারবে সে। খেয়াল রাখুন এই গোটা পর্বে সমস্ত কার্যকলাপ যেন বাচ্চার তরফ থেকেই আসে। উৎসাহ দেওয়া ছাড়া যেন আপনাকে কিছু করতে না হয়।

একটা বয়সের পরে সন্তানের বোঝা দরকার, অর্থগত দিক দিয়ে সে মা-বাবার উপরে নির্ভরশীল। যতই বায়না থাকুক, শেষ পর্যন্ত সে মা-বাবার সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য। তবে আদর করে বুঝিয়ে বলা দরকার। অল্প বয়সেই বাচ্চার বায়না মোকাবিলা করলে কৈশোরের কাজ সহজ হয়ে যায়। তাই বায়না নিয়ন্ত্রণ শুরু হোক শুরুতেই।

রূম্পা দাস

তথ্য সহায়তা: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অভিরুচি চট্টোপাধ্যায়

মডেল: শ্রীলগ্না, আরিয়ানা ছবি: দেবর্ষি সরকার; মেকআপ: কাজু গুহ; পোশাক: নীল সাহা লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা কনক্লেভ, চকগড়িয়া

Child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy