ভারতী প্রতাপ
রাজেন্দ্র প্রসন্নর বংশীবাদন সামগ্রিক ভাবে সুন্দর ছিল। বাগেশ্রী রাগ দিয়ে শুরু করলেন শিল্পী। সংক্ষিপ্ত একটি সুরবিস্তারের পরই গৎ শুরু করেছেন। বিলম্বিত একতাল এবং দ্রুত তিনতালের গৎ দু’টি উপভোগ্য ছিল। পরিশেষে তিনি শোনালেন পিলু রাগ। সুমিষ্ট এই রাগটিকে যথাসাধ্য পরিপূর্ণতা দিয়েছেন শিল্পী।
শুভেন্দ্র রাও ও সাসকিয়া রাওয়ের সেতার এবং চেলোর যুগলবন্দি তেমন জমেনি। দু’টি বাদ্যযন্ত্রের ধরন একেবারেই আলাদা। পৃথক ভাবে শুনতে ভাল লাগছিল। কিন্তু সম্মিলিত বাদন ততটা ভাল লাগেনি। বিলাসখানি টোড়িতে আলাপ-জোড় এবং ঝালার পরে দ্রুত তিনতালে গৎ শুনিয়েছেন। এ ছাড়াও শোনালেন বৈরাগী এবং আহির ভৈরবের মিশ্রণে তৈরি চক্রনারায়ণী রাগ। শুভেন্দ্রর বাদন বেশ ভাল, তবে সাসকিয়ার চেলো ততটা ভাল লাগেনি। গতি ধরে রাখতে পারছিলেন না শিল্পী, তাল থেকে বিচ্যুত হচ্ছিলেন মাঝেমাঝেই।
সরোদবাদক দেবজ্যোতি বসু বেহাগে খুব সংক্ষিপ্ত আলাপ আর জোড় বাজিয়েছিলেন। ছোট ছোট পরিবেশনায় মন দিয়েছিলেন শিল্পী। দ্রুত ঝাঁপতাল, মধ্যলয়, দ্রুত এবং অতিদ্রুত তিনতালের কম্পোজ়িশনগুলি শুনতে খারাপ লাগেনি। তবে দ্রুতগতির একটি কম্পোজ়িশনে সুর থেকে বিচ্যুত হয়েছেন শিল্পী বেশ কয়েক বার।
সেতারবাদক কুশল দাসের হেমন্তের পরিবেশনা একটু প্রলম্বিত ছিল। আলাপ-জোড়-ঝালার পরে ঝাঁপতাল এবং তিনতালে গৎ শোনালেন শিল্পী। শিল্পীর সুরসঞ্চালনায় যত্নের ছাপ ছিল। তবে তবলার সঙ্গে কসরত দেখাতে গিয়ে দ্রুত লয়ের উপস্থাপনাকে অনর্থক দীর্ঘ করেছেন। দ্রুত লয়ে তবলা এবং সেতারবাদন উচ্চকিত লেগেছে।
কুমার বসু, তিরুবরুর ভক্তবৎসলম এবং গিরিধর উদুপা-র যৌথবাদন ছিল উপভোগ্য। তবলা, মৃদঙ্গম এবং ঘটমের এই সমন্বয় শ্রোতাদের সমাদর পেয়েছে। তাঁরা শোনালেন দক্ষিণী রাগ মোহনম (ভূপালি)-এ আদি তালে নিবদ্ধ একটি কম্পোজ়িশন। সামগ্রিক ভাবে তাঁদের বাদন ভাল লেগেছে।
দেবাশিস ভট্টাচার্য এবং প্রবীণ গোধকিন্ডি-র স্লাইড গিটার ও বাঁশির যৌথবাদন চমৎকার ছিল। মালকোশ রাগ পরিবেশন করলেন তাঁরা। মধ্যলয় রূপক এবং তিনতালের কম্পোজ়িশন শোনালেন শিল্পীদ্বয়। পৃথক ভাবে এবং একত্রে— উভয় ক্ষেত্রেই তাঁদের বাদন উপভোগ্য ছিল।
এ বারের অধিবেশনের সেরা যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনা ছিল মাইসোর মঞ্জুনাথ এবং মাইসোর নাগরাজের যৌথ বেহালাবাদন। উপস্থাপনার প্রতিটি মুহূর্ত শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রাখলেন তাঁরা। আনন্দভৈরবী, ষণ্মুখপ্রিয়া, সিন্ধু ভৈরবী প্রভৃতি রাগ শোনালেন শিল্পীদ্বয়। সুনিপুণ পরিবেশনায় মন ছুঁয়ে গেলেন তাঁরা।
চার রাত্রিব্যাপী এই সঙ্গীত সম্মেলনে শিল্পীদের তবলায় সহযোগিতা করেছেন যোগেশ সামসি, শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সমর সাহা, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, তন্ময় বসু, সঞ্জয় অধিকারী, বিভাস সাংহাই, স্বপন চৌধুরী, শুভাশিস ভট্টাচার্য প্রমুখ। হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেছেন জ্যোতি গোহো, রূপশ্রী ভট্টাচার্য, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ পালিত, হিরণ্ময় মিত্র, সনাতন গোস্বামী প্রমুখ।