Advertisement
E-Paper

চার দেওয়াল জুড়ে রং-রেখার অফুরন্ত স্বাধীনতা

প্রদর্শনীতে ছিল নানা মাধ্যমের কাজ। শুধু পেন্টিং বা ড্রয়িং আলাদা ভাবে প্রাধান্য পায়নি। ছোটরা কত রকম মাধ্যমেই যে কাজ শিখেছে!

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১

নেহরু চিলড্রেন্স মিউজ়িয়ামের পেন্টিং বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের আঁকা দু’দিনের প্রদর্শনীতে দেওয়াল জোড়া প্রচুর ছবির মধ্যে আলাদা করে ভাল কাজ খোঁজা অর্থহীন। হয়তো সবার কাজই প্রদর্শিত হয়েছে কমবেশি। একটু বাছাই দরকার ছিল অবশ্য। এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘকাল বার্ষিক প্রদর্শনী করে আসছে তাদের প্রশস্ত কক্ষে। তিনটি সপ্তাহের দু’দিন করে প্রদর্শনী সম্প্রতি শেষ হল।

প্রদর্শনীতে ছিল নানা মাধ্যমের কাজ। শুধু পেন্টিং বা ড্রয়িং আলাদা ভাবে প্রাধান্য পায়নি। ছোটরা কত রকম মাধ্যমেই যে কাজ শিখেছে! মনের আনন্দে ও স্বাধীন ভাবনাচিন্তায় তার প্রতিফলন ঘটেছে কাজগুলিতে। কিছু জায়গায় শিক্ষকদের ছোঁয়া চোখ এড়িয়ে যায় না। তা যদি অস্বাভাবিক নাও হয়, মাত্রা না ছাড়ানোই ভাল। এখানে পাঁচ থেকে উনিশ-কুড়ির শিক্ষানবিশদের কাজই দেখা গেল। ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন হলেও—প্রদর্শিত সামগ্রীর আধিক্যে রাশ টানার কিন্তু সুযোগ ছিল।

কক্ষের বাইরে ময়দানের প্রাচীরের গায়েও আয়োজন ছিল একটু বড় আকারে ছবি আঁকার। বিষয় ছিল ‘মা ও সন্তান’। এ ছাড়া ভারতীয় চিরন্তন লোকশিল্পকলা মনে রেখে প্রাচীরের গায়ে লোকচিত্রও আঁকা হয়েছিল।

অজিঙ্কা ঘোষ কলাই করা থালায় কালোর সাহায্যে লাল চওড়া বর্ডার রেখে বেশ ভাল কাজ করেছে। দারুণ সুন্দর নিসর্গে গাছ, জমি ইত্যাদি নিয়ে মেটালিক বর্ণে বাড়িঘর আঁকায় খুব খেটেছে অঙ্কিতাকুমারী সিংহ। কেটলি নিয়ে দারুণ কম্পোজিশন করেছে অর্চিষ্মান মাইতি। রূপকথার ছবির মতো অনেক সবুজ পাতার মাঝখানে ডালে বসা একলা পাখির ছবিতে অস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের মুনশিয়ানা চোখে পড়ে। অজিষ্ণু দে’র অন্য একটি পাখির ছবিও দৃষ্টিনন্দন। গুচ্ছ পাতার ডিজ়াইন সদৃশ থোকার মাঝে ডালে বসা সাদাকালো পাখি, রঙের শুকনো আবহে মনোগ্রাহী। বালির উপরে কালো পটভূমিতে প্যাস্টেল দিয়ে দুরন্ত কাজ করেছে দীপ্তাংশু দাস। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, সিডি, পেন্সিল, চামচ, বোতল, ভাঙা চুড়ি, ছোট্ট এক খেলনা গাড়ির চাকা, ব্যাটারি, কাঁচি, ব্রাশ, ভাঙা চশমার মতো নানান ফেলে দেওয়া পরিত্যক্ত সামগ্রীকে দ্বিমাত্রিক পটে বিন্যস্ত করে এবং তাতে শৈল্পিক এক পটভূমি নির্মাণ করে...অসাধারণ কম্পোজিশন ঈপ্সা বন্দ্যোপাধ্যায়ের! প্রীতম গলুইয়ের কলাবৌ স্নান করানোর ছবিটি বেশ, তবে হঠাৎ ওই ছোট্ট পরিসরের আকাশে দেবীর ত্রিনয়ন বড্ড চোখে লাগে। আঁকা গাছের মাঝে অরিগামির দুটি পাখির একটি উড়ে আসছে—প্রেমেশকান্তি বিশ্বাসের এই কাজটিও বেশ!

নানা খেলনা, টুথব্রাশ, এটা-ওটা টুকরোটাকরা প্লাস্টিকের খণ্ডিত ফর্ম, পেন্সিল, দড়ি, পুতুল কিংবা চশমার এক দিকের কালচে কাচ, পাখির প্লাস্টিক-ঠোঁটের ফর্ম, ভাঙা কাচের চুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে একটি অদ্ভুত সুন্দর মুখ, রঙিন লম্বা গাছ নিয়ে নিসর্গের কাজগুলি অনবদ্য। এগুলির শিল্পীরা হল শ্রেষ্ঠা সিংহ, নাসরিন নাহার জমাদার, শালবনি ঘোষ। দশ বছরের শিল্পী রুদ্রনীল মুখোপাধ্যায়ের আঁকা পড়ে থাকা নির্জন এক লেডিজ় ব্যাগ ভারী চমৎকার।

সূর্যাংশ দত্তের সবুজ পাতার মাঝে লম্বা শরীর নিয়ে গোল চোখ ও শুঁড় তোলা শামুকসদৃশ প্রাণীটি যথেষ্টই প্রাণবন্ত। গোটা কাজটিই নানা রকমের রঙিন কাপড় কেটে, কাগজে আটকে করা হয়েছে। প্রতিমা, বিগ্রহ, দেবী নিয়েও বেশ কিছু কাজ আছে প্রদর্শনীতে। সৃজা দাসের স্টিল লাইফটিতে মুনশিয়ানা আছে। স্বচ্ছ পেগ, পিছনে ভাস, আপেল, কমলালেবু...সব মিলিয়ে দৃষ্টি আটকে যায় পটের উপরে। ক্যানভাসে সাদাকালো রঙে একটি মাত্র পুরনো দিনের গাড়ির মডেল যত্নে ধরেছে শঙ্খশুভ্র মল্লিক।

ক্যানভাসের কিছু মাত্র কাজ। সব উতরে যাওয়ার মতো নয়। আট বছরের সৃষ্টি হাজরা এঁকেছে মইয়ে উঠে দেবীবরণ। দু’পাশে ছড়ানো দশভুজার নীচে সিংহ। বেশ অন্য রকম মজার উদ্রেক করে। স্বাগত রায়ের রাংতায় করা প্রেশার কুকার আর শুভ্রনীল পালের স্টিল লাইফ এক কথায় অসামান্য! এ ছাড়াও যারা চমৎকার কাজ করেছে, তাদের মধ্যে উর্যা, সৌজন্য রায়, সৌরভ রায়, প্রাঞ্জল দে, নিকিতা পান্ডে, সাদিয়া তাসনিম, ঋষিকা চৌধুরী, প্রিয়ম মল্লিক, সফিকুল ইসলাম, সাহিদুল ইসলাম, কৃত্যা পাল, সাগ্নিক ভট্টাচার্য, অস্মিতা প্রামাণিক, অনুষ্কা পাল, অরূপ মান্নার নাম উল্লেখযোগ্য।

Painting Exhibition Nehru Children's Museum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy