Advertisement
E-Paper

ছোট্ট শৈশব বড় আদরের

বাচ্চার দায়িত্বের ব্যাপারে প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই সমস্যা। চাকুরিজীবী মা-বাবারা কাজ ও বাড়ির মাঝে বাচ্চাদের নিয়ে বড় অসহায় বোধ করেন। রইল সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়বাচ্চার দায়িত্বের ব্যাপারে প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই সমস্যা। চাকুরিজীবী মা-বাবারা কাজ ও বাড়ির মাঝে বাচ্চাদের নিয়ে বড় অসহায় বোধ করেন। রইল সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩০

তিন বছরের ছোট্ট কাহনকে মা-বাবার কাছে রেখে রোজ অফিসে যায় সৃজিতা। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে কাহনের বাবা তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু ছুটিছাটায় সৃজিতা বাপের বাড়িতে এলে তাঁরা বিরক্ত হন। কাহনকে তাঁদের কাছে রাখা নিয়ে মা-বাবার অসন্তোষ চোখ এড়ায়নি সৃজিতার। কিন্তু তারও যে উপায় নেই। দিন দিন মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলেও, কথা বন্ধ রাখলেও মেয়ের স্বার্থে সব মেনে নিয়ে আবার তাঁদেরই শরণাপন্ন হতে হয়।

বাপের বাড়ি হোক বা শ্বশুরবাড়ি, বাচ্চাকে দেখা নিয়ে মনোমালিন্য চলতেই থাকে। অত্যন্ত আদরের নাতি বা নাতনিকে কাছে রাখতে গিয়ে আপত্তি ওঠে বাবা-মা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির তরফেও। এর সমাধান খুঁজে বার করার চেষ্টা করা যাক।

দায়িত্ব নিয়ে চাপানউতোর

বাচ্চার ভ্যাকসিন থাকলে মা ছুটি নেবে না কি বাবা? আবার দাদু-দিদিমা বা ঠাকুরদা-ঠাকুমাও নাতি-নাতনির দৌরাত্ম্যে অস্থির। বাচ্চার মা বা বাবার ফিরতে দেরি হলেই ঘন ঘন ফোন আর বাড়ি ফিরতেই বাক্যবাণে অস্থির করে তোলা। কিন্তু তার মানে এই নয় বাচ্চাটিকে তাঁরা ভালবাসেন না। প্রত্যেকেই বাড়ির খুদেটিকে ভালবাসেন। শুধু দায়িত্ব নেওয়ার মতো সময় বা ক্ষমতার অভাব। এখন সকলেই ওয়র্কিং। ফলে বাড়িতে বাচ্চার সঙ্গে কাটানোর মতো সময় নেই তার নিজের মা-বাবার। অন্য দিকে দাদু-দিদিমাদের বয়স বাড়ছে। ফলে শারীরিক অসুস্থতা ও অক্ষমতা থেকেই অধৈর্য হয়ে পড়েন তাঁরা। তা ছাড়া, তাঁরা তো নিজের সন্তানকে মানুষ করেছেন, তা হলে আবার নাতনি বা নাতির দায়িত্বও কেন নিতে হবে, এই বোধটাও হয়তো কাজ করে! আর দুই বাড়ির মধ্যেও চলতে থাকে একটা গোপন রেষারেষি। মেটারনিটি লিভের পরে বাচ্চার দায়িত্ব কার উপর বর্তাবে? মেয়ের বাড়ি না কি ছেলের বাড়ি? এই নিয়েও চলতে থাকে চাপানউতোর।

বুঝতে হবে

শিশুর চরিত্রগঠনের সময় তার বাল্য ও শৈশব। তাই তাকে নিয়ে বড়রা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করলে তা সন্তানের পক্ষে ভাল নয়। সন্তানকে পৃথিবীতে আনার আগে বরং ভেবে নিন, তার দায়িত্ব কে বা কারা নেবেন।

অন্য দিকে বাড়ির বড়দের সমস্যাও বুঝতে হবে। তাঁদের শরীরের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। হতে পারে, কোনও দিন সত্যিই তাঁদের খুব শরীর খারাপ। সে ক্ষেত্রে এক দিন মা-বাবার জন্যও না হয় ছুটি নিন। কারণ আপনিও তাঁদের সন্তান। মা-বাবার সমস্যা আপনাকেই বুঝতে হবে। আপনার সন্তানও এই বোঝাপড়া থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। আপনার ভূমিকা এখানে কিন্তু ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার দায়িত্ব

• মা-বাবার কথা শোনার চেষ্টা করুন। বয়স হলে তাঁরাও নিঃসঙ্গ বোধ করেন। নিজেদের কথা ভাগ করে নেওয়ার মতো কাউকে কাছে পান না। সেখান থেকেই তৈরি হয় অসন্তোষ। সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার সঙ্গেও সময় কাটান।

• বাড়ি ফিরেই আপনার সন্তানকে ঠিক করে খাইয়েছেন কি না, কেন একটা ভাল পোশাক পরাননি, বাচ্চার কোনও অবহেলা হয়েছে কি না... এ ধরনের নেতিবাচক প্রশ্ন করবেন না। এতে তারাও অসন্তুষ্ট হতে পারেন।

• সপ্তাহে আপনার এক দিন ছুটি মানে সে দিনও বাচ্চাকে মা-বাবার কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে সিনেমা দেখতে চলে যাবেন না। বরং সেই দিনটি বাচ্চাকে কাছে টেনে নিয়ে মা-বাবাকে একটু বিশ্রাম নিতে দিন। তাঁদের মতো করে থাকতে দিন।

• অনেকেই সন্তানকে দেখাশোনার জন্য কাউকে রাখেন, তাই তাঁকে ভাল করে যাচাই করে নিন। বাড়ির নিরাপত্তা তো তাঁর হাতে থাকছেই। তা ছাড়াও তাঁকে বোঝান যে, শুধু সন্তানের জন্য নয়, প্রয়োজনে আপনার মা-বাবারও যত্ন নিতে হবে।

• নিজের অফিসে লেট নাইট কাজ থাকলে বা কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে বেশ কিছু দিন থাকতে হলে, আগে থেকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলুন। বোঝান, আপনার চাকরি ও সন্তান দুই-ই আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এবং আপনার মা-বাবাও আপনার জীবনে সমান গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এই সময়টুকু আপনাদের সকলকে একটু মানিয়ে নিতে হবে।

কী করবেন না

• সন্তানের সামনে মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়া করবেন না। বাচ্চাকে কোথায় রাখা হবে বা তা নিয়ে তার সামনে ঝগড়া করলে সন্তানের উপরে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে।

• সব সময়ে সন্তানকে মা-বাবার কাছে রেখে নিজের কাজ সারবেন না। বরং সন্তানকেও আপনার কাজে ইনভল্‌ভ করুন। বাচ্চা যদি খুব ছোট হয়, তা হলে তাকে কোলে নিয়েও ছোটখাটো কাজ করতে পারেন।

• ছুটির দিনে বাইরে যাওয়া মানে সন্তানকে গৃহবন্দি রাখা নয়। মাঝেমধ্যে মা-বাবা, বাচ্চা সকলকে নিয়েই বেড়িয়ে পড়ুন।

দাদু-দিদিমা ও ঠাকুরদা-ঠাকুমারাও মনে রাখবেন...

• আপনার সন্তানকে (ছেলে বা মেয়ে) এমন ভাবে বড় করেছেন, যাতে সে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির পথে সন্তান যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রে আপনারও কিছু দায়িত্ব আছে। সন্তান মানুষ করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের চাকরি ছাড়তে হয়। পরে সন্তান বড় হয়ে গেলে তাঁরা কর্মজগতে ফিরে আসতে চাইলেও আগের মতো সুযোগ পান না। তাই মা-বাবা হিসেবে সেই দিকটাও আপনার কাছে বিবেচ্য।

• আশপাশে দেখুন, অনেকেই নাতি-নাতনির সঙ্গ থেকে বঞ্চিত। সেখানে আপনি ভাগ্যবান যে, পরিবারের খুদে সদস্যটি আপনার সঙ্গী।

• ছেলে-মেয়ের সমস্যাও বোঝার চেষ্টা করুন। সন্তান সমস্যায় পড়লে মা-বাবার কাছেই তো যায়! সেই অবলম্বন নষ্ট হতে দেবেন না।

• নিজের ধৈর্য হারিয়ে ফেলে বা রাগের চোটে খুদে সদস্যটিকে কোনও ভাবে আঘাত করবেন না। শিশুহৃদয়ে কোনও খারাপ স্মৃতি থেকে গেলে তা কিন্তু ওর চরিত্র গঠনে ও আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলবে। মনে রাখবেন, মা-বাবা যখন কাজে বাইরে রয়েছেন, তখন নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করে শিশুটিই। আর মা-বাবার অনুপস্থিতিতে আপনারাই তার কাছে সবচেয়ে বড় অবলম্বন। তাই স্মৃতি যেন সুখের হয়, সেই কথাটা মাথায় রাখবেন।

• অনেক বাড়িতেই দাদু-দিদিমা ও ঠাকুরদা-ঠাকুমার মধ্যে ঠেলাঠেলি চলে বাচ্চাকে নিয়ে। দু’জনেরই বক্তব্য অন্য পক্ষ কেন দায়িত্ব নেবে না? প্রশ্ন তুলে রেখে বরং নাতি বা নাতনির দিকে এগিয়ে আসুন। দুই বাড়ির লোকই দায়িত্ব ভাগ করে নিন। তা হলে কারও উপরেই বেশি চাপ সৃষ্টি হবে না।

মনে রাখবেন, সন্তান চিরকাল ছোট থাকবে না। তার বাল্য ও শৈশব খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাবে। তাই এই সময়টা টেনশন করে, ঝগড়া করে নষ্ট করবেন না। পরিবারের সকলে মিলে বরং ওর ছোটবেলাটা উপভোগ করুন।

মডেল: বন্দনা, অলিভিয়া, দীপ্তার্ক

মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত

ছবি: অমিত দাস

লোকেশন: লাহাবাড়ি

Parenthood Child Childhood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy