E-Paper

সার্থক প্রয়াস

পরবর্তী পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যগুরু রতিকান্ত মহাপাত্রকে এবং মাননীয় অতিথিদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। এর পর একে একে মঞ্চে উপস্থিত হন সংকল্প শিক্ষায়তনের শিক্ষার্থীরা।

বিপাশা মাইতি

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৪৬
নৃত্য পরিবেশনে শিল্পীরা।

নৃত্য পরিবেশনে শিল্পীরা। —নিজস্ব চিত্র।

গত ২৯ জুলাই সংকল্প নৃত্যায়ন আয়োজিত ‘রাভাস ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে। সমগ্র নৃত্যানুষ্ঠানের ভাবনা ও নির্দেশনায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী সুবিকাশ মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ‘বন্দে মাতরম’ নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। দেশ রাগ ও একতালি তালে নিবদ্ধ এই নৃত্যের ভাবনা ও কোরিয়োগ্রাফিতে ছিলেন স্বয়ং সুবিকাশ মুখোপাধ্যায়। সুমন সরকারের সুরে গেয়েছেন তৃষিত চৌধুরী। মর্দালা, বাঁশি, সেতার, কীবোর্ড এবং বেহালা বাদনে ছিলেন যথাক্রমে সৌম্যরঞ্জন নায়েক, ঋক মুখোপাধ্যায়, রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ দাস এবং অম্লান হালদার। এই নৃত্যাংশে ওড়িশি নৃত্যধারায় শিল্পীদের নৃত্যবিন্যাস সুন্দর। ভাবনাও যথেষ্ট বলিষ্ঠ। মাতৃরূপী মাটির বর্ণনাকে বিভিন্ন ভঙ্গির মাধ্যমে চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন নৃত্যশিল্পীরা। সুবিকাশ মুখোপাধ্যায় বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখেন।

পরবর্তী পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যগুরু রতিকান্ত মহাপাত্রকে এবং মাননীয় অতিথিদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। এর পর একে একে মঞ্চে উপস্থিত হন সংকল্প শিক্ষায়তনের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সমবেত নিবেদনে ছিল যথাক্রমে রাগভৈরবী, ভৈরব, বৈরাগী ও দরবারি এবং আদিতালে নিবদ্ধ ‘হরি ওম’, পটদীপ রাগ ও ত্রিপুর তালে নিবদ্ধ ‘পটদীপ পল্লবী’, বসন্ত রাগ ও একতালি তালে নিবদ্ধ ‘বসন্ত পল্লবী’। এই পর্বের শেষ উপস্থাপনা ‘নৃত্যের তালে তালে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে ওড়িশি নৃত্য আঙ্গিকে পরিবেশিত একটি নৃত্যছবি।

নৃত্য পরিবেশনে শিল্পীরা।

নৃত্য পরিবেশনে শিল্পীরা।

গুরু সুবিকাশ মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সংকল্প শিক্ষায়তনের ছাত্রীরা যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। এই পর্বে শিশুশিল্পীদের নৃত্য প্রদর্শনও সুন্দর। ওই সন্ধ্যার বিশেষ আকর্ষণ ছিল গুরু রতিকান্ত মহাপাত্রের একক নৃত্য পরিবেশনা। শিল্পীর নিবেদনে ছিল ওড়িয়া আবৃত্তিমূলক অভিনয় ‘দীনবন্ধু’। প্রভু জগন্নাথের চরণে আত্মসমর্পণই এই নৃত্যাংশের মূল কথা। ‘শ্রীরাঙা চরণ সেবনে মোর মন’ এই ভক্তিপূর্ণ পঙ্‌ক্তিটি সুন্দর ভাবে ভক্তিরসের মাধ্যমে শিল্পী ব্যাখ্যা করেন। রাজা বালি, বামনরূপী বিষ্ণু, দেবী অহল্যা, শ্রীরামচন্দ্র... এই সমস্ত চরিত্র গুরু রতিকান্তের অভিনয়গুণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। একটি চরিত্র থেকে অপর একটি চরিত্রে যাওয়ার সময়ে, ঘুরে গিয়ে চরিত্রের রূপটি বোঝানোর জন্য শিল্পীর নৃত্যভঙ্গিমা ছিল অসাধারণ। অভিনয়প্রধান এই নৃত্যাংশে শিল্পী তাঁর অনন্যসাধারণ নৃত্যাভিনয় দ্বারা দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন। শেষ দৃশ্যে ‘হরেকৃষ্ণ’ গীতের সঙ্গে এক অপূর্ব নৃত্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রভু জগন্নাথের চরণে সমর্পণ করার দৃশ্যটিও চমৎকার।

নৃত্য পরিবেশনে শিল্পীরা।

নৃত্য পরিবেশনে শিল্পীরা।

যোগিয়া রাগে এবং জ্যোতি ও একতালি তালে নিবদ্ধ নৃত্যালেখ্যটির পরিকল্পনা এবং ভাবনা গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের। ওই সন্ধ্যার শেষ উপস্থাপনা নৃত্যনাট্য ‘তুঁহু মম মাধব’-এ রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা ভক্তির এক অন্তরঙ্গ রূপে উঠে আসে। কবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ ও রবীন্দ্রনাথের ‘ভানুসিংহের পদাবলী’র মিলনে সৃষ্টি হয়েছে এই নতুন ভাষ্য। এই নৃত্যাংশের ভাবনাটিকে ওড়িশি নৃত্যশৈলী এবং ভাবের দ্বারা ফুটিয়ে তুলেছেন সংস্থার ছাত্রীরা। রাধা চরিত্রে রেশমি রায় স্নিগ্ধ ভাব এবং নৃত্যের মাধ্যমে রাধার কোমল স্বভাবের অভিব্যক্তিকে সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন। সখীদের সঙ্গে ‘শাওন গগনে’ অথবা ‘সুন্দরী রাধে’ নৃত্যগুলি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। অন্য দিকে ‘মরণ রে তুঁহু মম’ গানের সঙ্গে বিরহী রাধার ভাবও অনবদ্য৷ অপর দিকে চন্দ্রাবলী চরিত্রে শ্রীতমা গুপ্ত লাস্য ও শৃঙ্গার রসে মনোরম ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর অভিনীত চরিত্রকে। যে দৃশ্যে শ্রীকৃষ্ণকে প্রেমভরে তাঁর গৃহে নিয়ে যাচ্ছেন চন্দ্রাবলী, সেই দৃশ্যে শ্রীকৃষ্ণরূপী সুবিকাশ মুখোপাধ্যায় এবং চন্দ্রাবলীরূপী শ্রীতমার নৃত্যভঙ্গিমা ও অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। মুদ্রার প্রয়োগও যথেষ্ট নিপুণ।

সমাপ্তি দৃশ্যে রবীন্দ্রনাথের ‘সজনী সজনী রাধিকা’ ও ‘আজু সখী’র সমবেত উপস্থাপনা নজরকাড়া। অভিমানী রাধার চরিত্রে রেশমি রায় এবং রাধিকার মানভঞ্জনের চেষ্টায় শ্রীকৃষ্ণরূপী সুবিকাশ মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় প্রাণবন্ত। এক কথায় নৃত্য, সুরুচিপূর্ণ পোশাক, আলোকপাত... সব কিছু মিলিয়ে একটি সার্থক প্রয়াস। সমগ্র নৃত্যনাট্যটির নৃত্য পরিকল্পনা ও ভাবনায় সুবিকাশ মুখোপাধ্যায়। এই নৃত্যনাট্যে রবীন্দ্রসঙ্গীতে ছিলেন প্রমিতা মল্লিক এবং বিক্রম সিংহ। অষ্টপদী সঙ্গীতে ছিলেন সঙ্গীতা গোঁসাই ও ‘প্রিয়ে চারুশিলে’ সঙ্গীতে বিজয়কুমার বারিক। ভাষ্যপাঠে অমৃতা পণ্ডিত ও সৌরভ চক্রবর্তী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dance Drama Cultural Events Cultural event in Kolkata Rabindra Sadan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy