Advertisement
E-Paper

ক্যানভাসে দেবদেবী, আলোকচিত্রে নিসর্গ: একটি ডুয়েল

সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে অরুণ ও জয়শ্রী জানার পেন্টিং ও আলোকচিত্রের প্রদর্শনী শেষ হল।

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২৩
আলঙ্কারিক: অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে অরুণ জানার চিত্রকর্ম

আলঙ্কারিক: অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে অরুণ জানার চিত্রকর্ম

কিছু কিছু পেন্টিং দেখলে বোঝা যায় যে, শিল্পী বর্ণের মাহাত্ম্যকে যেমন উপলব্ধি করতে চাননি, তেমনই হয়তো বা বর্ণের পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রাথমিক, মাধ্যমিক বর্ণের গুণাগুণ সম্পর্কেও অবহিত নন। এখানে দুটি ভিন্ন মনোভাবই অনুভূত হয় শিল্পী সম্পর্কে। ভুল হতে পারে একমাত্র সে ক্ষেত্রেই, যেখানে সব জানা সত্ত্বেও তিনি সে পথে হাঁটেননি। তারও কারণ থাকবে। অরুণ জানা কিন্তু পেন্টিংয়ে স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করেছেন প্রায় আড়াই দশক।

সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে অরুণ ও জয়শ্রী জানার পেন্টিং ও আলোকচিত্রের প্রদর্শনী শেষ হল। এক সময়ে মন্দির-স্থাপত্য, বিশেষ করে মন্দিরের সামগ্রিক স্থাপত্যের ভিত্তি-ভাস্কর্য থেকে মন্দির-চত্বর, সিঁড়ি, চুড়ো, গম্বুজ, প্যাটার্ন, আংশিক কক্ষ, গবাক্ষ, দ্বার... সব কিছুরই স্টাডিতে মগ্ন থাকতেন অরুণ। নমনীয়তার পাশে কাঠিন্যও ছিল এ সময়কার কাজে। তা থেকে সরে এসে থিতু হয়েছেন সাম্প্রতিক কালের পেন্টিংয়ে, দেবদেবীর বিবিধ ধারাভাষ্যের আলঙ্কারিক চিত্রময়তায়।

অ্যাক্রিলিকেই ৪৫টি কাজ করেছেন। এই সমগ্র পেন্টিংয়ে শুধু লাল, কমলা, হলুদ, খয়েরি বর্ণের প্রাধান্যে ভীষণ রকম মোনোটোনি তৈরি হয়েছে ছবিগুলিতে। হেন জায়গা নেই, যেখানে তিনি কাজ করেননি। ছাত্রাবস্থায় তাঁর আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে বাছবিচার ছিল না। পরবর্তী সময়ে সে সম্পর্কে কতটা বুঝেছেন, জানা নেই। অথচ গভীর ভাবে ওই ধর্মবিশ্বাস, দেবদেবী, পুরাণ বিশেষত আধ্যাত্মিক চেতনায় ধ্যানমগ্ন এই তরুণ শিল্পী অনেকটা সময়ই ব্যয় করেন এ সব কাজে। ফলে শিল্পকলার শৃঙ্খলা ও পরিমিতি বোধ, প্রকৃত উপলব্ধি ও দর্শন, কম্পোজ়িশনের রূপারোপের ভারসাম্য ও স্পেস, বর্ণের অনুশীলনী ব্যবহার ও কৌশল... এ সব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।

স্টাইলকে নিজের মতো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গুলিয়ে গিয়েছে অনেক কিছুই। তাঁর হাতে ড্রয়িং ছিল না, এমন নয়। কিন্তু ছবি কখন ডিজ়াইনের রূপ নেয়, তুলি কখন পটের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ সূক্ষ্মতার টেক্সচার তৈরি করতে গিয়ে আলঙ্কারিক আবহ তৈরি করে ফেলে, রূপ ও তার বহিরঙ্গের পট তাঁর রচনার গুণ অথবা নির্গুণতায় একটি প্যাটার্ন তৈরি করে ফেলে— এর কোনও কিছুই তিনি বুঝতে পারেননি। তা সত্ত্বেও তাঁর কাজে প্রচুর পরিশ্রমের চিহ্ন আছে। ক্যানভাস জুড়ে অসংখ্য ছোট অবয়বের বিবিধ কর্মকাণ্ড ওই দেবদেবীকে ঘিরে।

কম্পো‌জ়িশনে স্থাপত্যকেও ডিজ়াইনধর্মিতায় ফেলে বা একটি প্যাটার্নের ফর্মেশন তৈরি করে, তার অন্তর্গত স্পেস থেকে বহিরঙ্গের শূন্যতাকেও প্রচুর ঘটনাবলিতে ব্যাখ্যা করেছেন সূক্ষ্ম ড্রয়িংয়ের সামঞ্জস্যে। এতে ডিজ়াইনের প্রাবল্য ও সরলীকরণ হারিয়ে যাওয়া একটি অদ্ভুত জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিচিত্র সব ভাবনা মূর্ত হচ্ছে পৌরাণিক ভাবনার দ্বিমাত্রিক একঘেয়েমিতে। দেবদেবীও একাকার হয়ে, দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে ওই তরল আলোর মোনোটোনিতে। অন্ধকার যেখানে অস্পৃশ্য, নাটকীয় আলোও যেখানে অকস্মাৎ ঢুকে পড়েছে।

তাঁর জগন্নাথের বিবিধ ফর্মেশন দ্বিধাগ্রস্ত। বেশি মাত্রায় একই মহা নাটকীয় পরিস্থিতি কম্পোজ় করতে গিয়ে তিনি নিজেই হারিয়ে গিয়েছেন ওই পৌরাণিক জটিল মায়াজালে। অতি আধ্যাত্মিকতার এই ভয়াবহতা ছবিকে প্রকৃত ছবি তৈরি হতে বাধা দিচ্ছে না তো? পেন্টিংকে সমৃদ্ধ করতে হলে অরুণকে এ সব ভাবতে হবে। যেহেতু তাঁর হাতে এখনও কিছু অস্ত্র ও তার ব্যবহার জানা আছে। গ্রহণ-বর্জন ছাড়াও বুদ্ধিদীপ্ত ভাবনার কম্পোজ়িশনকে সে ভাবে অ্যারেঞ্জ করতে হবে। বিশেষ করে বুঝতে হবে বর্ণ ও তার ব্যবহারকে। কারণ প্রদর্শনীর অনেক কাজে নানা ভাবেই কিন্তু সেই কাঠিন্য বর্তমান।

২০টির মতো আলোকচিত্রে জয়শ্রী জানা নিসর্গকেই বেশি মাত্রায় প্রাধান্য দিয়েছেন। গত পাঁচ বছর তিনি ছবি তুলছেন। তাঁর স্থান ও বিষয় নির্বাচন কিন্তু যথেষ্ট অর্থবহ। প্রকৃতির এত সদর্থক ও নঞর্থক রূপের মধ্যেও থেকে যায় কিছু অভাবনীয় দৃশ্যকল্প। জয়শ্রী কিন্তু জল, আকাশ, জঙ্গল, আলো, দূরত্ব, একাকিত্ব, সূর্যোদয়, দিনের বিশেষ একটি সময়, জীবিকা এবং অবশ্যই মানুষ— এগুলিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এখন প্রদর্শনীর মাধ্যমে আলোকচিত্র গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। জয়শ্রীর মতো অতি সাধারণ এক গৃহবধূর ‘ডি ফাইভ, টু হান্ড্রেড ডি এস এল আর’-এ তোলা এই সব ছবি অনেক বেশি প্রাণবন্ত।

Painting Exhibition Academy of fine Arts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy