Advertisement
E-Paper

ছন্দোবদ্ধ নৃত্যসন্ধ্যা

এই সন্ধ্যার নৃত্যানুষ্ঠানের প্রথম উপস্থাপনাটি গুরু অলকা কানুনগোর পরিচালনায় ওড়িশি নৃত্যের মাধ্যমে পরিবেশিত গণেশ বন্দনা ‘খর্ব স্থূল তনু’। এর নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন শিঞ্জন নৃত্যালয়ের তিন নৃত্যশিল্পী অস্মিতা মোহান্তি, স্বরলিপি রায় এবং উর্বশী বসাক—যাঁরা নৃত্যের মাধ্যমে দর্শকমন জয় করেন অনায়াসেই। 

জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
নৃত্যানুষ্ঠান

নৃত্যানুষ্ঠান

মালশ্রী সংস্থা আয়োজিত সেকেন্ড ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল ডান্স ফেস্টিভাল তথা দ্বিতীয় ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য উৎসব ‘প্রেরণা’ অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে। শ্রদ্ধেয় নৃত্যগুরুদের সংবর্ধনা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। এতে যে সব নৃত্যগুরু সংবর্ধিত হন, তাঁরা হলেন অলকা কানুনগো, মাধুরী মজুমদার, পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়, পারমিতা মৈত্র, রিনা জানা, অর্পিতা ভেঙ্কটেশ এবং পৌষালি চট্টোপাধ্যায়।

এই সন্ধ্যার নৃত্যানুষ্ঠানের প্রথম উপস্থাপনাটি গুরু অলকা কানুনগোর পরিচালনায় ওড়িশি নৃত্যের মাধ্যমে পরিবেশিত গণেশ বন্দনা ‘খর্ব স্থূল তনু’। এর নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন শিঞ্জন নৃত্যালয়ের তিন নৃত্যশিল্পী অস্মিতা মোহান্তি, স্বরলিপি রায় এবং উর্বশী বসাক—যাঁরা নৃত্যের মাধ্যমে দর্শকমন জয় করেন অনায়াসেই।

মহুল মুখোপাধ্যায় পরিবেশিত ও ভরতনাট্যম নৃত্য-আঙ্গিকে রচিত দু’টি নৃত্য ‘ভাব্যামি গোপালবালম’ এবং ‘শক্তি’ উচ্ছ্বসিত প্রশংসার দাবি রাখে। গুরু থাঙ্কমণি কুট্টির সুযোগ্য ছাত্রী মহুলের নৃত্যাভিনয় ও ভরতনাট্যম নৃত্যের ছন্দে গ্রথিত পদবিন্যাস দর্শকদের মুগ্ধ করে।

সাউথ গুরুকুল সোসাইটির পাঁচ নৃত্যশিল্পী যথাক্রমে পায়েল মজুমদার মণ্ডল, শুভাশিস আচার্য, মধুপর্ণা মণ্ডল, সৌরভ সামন্ত এবং ঐশানী ভট্টাচার্য শুদ্ধ ওড়িশি নৃত্য ‘পল্লবী’ পরিবেশন করেন। দৃপ্ত পদক্ষেপে তাঁদের ছন্দোবদ্ধ নৃত্যের অপূর্ব ভঙ্গিমা অত্যন্ত নয়নসুখকর। এই নৃত্যটির পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছিলেন গুরু সুতপা তালুকদার। সঙ্গীতে সহযোগিতা করেন পার্থ দেশিকান ও মর্দালায় ছিলেন গুরু বনমালী মহারানা।

পরবর্তী উপস্থাপনা ছিল কুচিপুড়ি কলামাধুরী ডান্স অ্যাকাডেমির তিন নৃত্যশিল্পীর। প্রথমেই কুচিপুড়ি নৃত্যে ‘শিবস্তুতি’ পরিবেশন করেন সাহানা চৌধুরী ও শুভ জেনা। কুচিপুড়ি ধ্রুপদী নৃত্যে তাঁদের দক্ষতা প্রশংসনীয়। এই দুই শিল্পীই কুচিপুড়ি নৃত্যে শিক্ষালাভ করেছেন গুরু ড. মাধুরী মজুমদারের তত্ত্বাবধানে। তাঁদের প্রতিটি নৃত্যভঙ্গি ও মুখের অভিব্যক্তি অপূর্ব। সাগ্নী মজুমদারের নৃত্যশিক্ষাও হয়েছে তাঁর মা ড. মাধুরী মজুমদারের তত্ত্বাবধানে। হিন্দুস্থানি ক্লাসিক্যাল আইটেম তারানার সঙ্গে তাঁর নৃত্য পরিবেশন দেখে ভাল লাগল। বিশেষত তামার থালার উপরে দাঁড়িয়ে সাগ্নীর নৃত্য প্রদর্শন দর্শককে মুগ্ধ করে। ড. মাধুরী মজুমদার যে দক্ষতায় এই হিন্দুস্থানি আইটেমটিকে কর্নাটকী ধ্রুপদী সঙ্গীতে রূপ দিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য।

গুরু ড. পুষ্পিতা মুখোপাধ্যায়ের শিষ্য প্রিয়ঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় নৃত্য পরিবেশন করলেন ‘মোহনা পল্লবী’ এবং অভিনয় ‘ধোনো উথিলু’। ওড়িশি নৃত্য ও অভিনয়ে উভয়তই তিনি দক্ষতার ছাপ রেখে গিয়েছেন। সঙ্গীতে তাঁকে সহযোগিতা করেন ঘনশ্যাম পাণ্ডা ও সুকান্ত কুণ্ডু। মর্দালায় মহাগুরু কেলুচরণ মহাপাত্র ও সুরেন্দ্র মহারানা। নীলোপা মৈত্র পরিবেশিত কত্থক নৃত্যটি ভাল লাগে।

এই সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল মণিপুরী ও ওড়িশি নৃত্যের যুগলবন্দি। সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী দু’টি নৃত্যকলার যে এত সুন্দর যুগলবন্দি করা যায়, তা এই নৃত্য পরিবেশনাটি না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। মণিপুরী নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন পৌষালি চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা তালুকদার, মালবী চৌধুরী ও শতাব্দী মহলানবিশ। মণিপুরী নৃত্যের পরিচালনায় ছিলেন গুরু পৌষালি চট্টোপাধ্যায়— যিনি গুরু দর্শনা ঝাভেরী, গুরু কলাবতী দেবী এবং মণিপুরী নৃত্যের প্রবাদপুরুষ গুরু বিপিন সিংহের সুযোগ্য ছাত্রী। তাঁর পুংবাদন দর্শককে মুগ্ধ করে।

গুরু পৌষালি চট্টোপাধ্যায় ও গুরু দর্শনা ঝাভেরির শিষ্য মালবী। গুরু পৌষালি চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। আর শতাব্দী হলেন মণিপুরী নৃত্যশিল্পী সোমা রায়ের সল্টলেক নর্তনালয়ের ছাত্রী। ওড়িশি নৃত্যে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা হলেন গুরু অর্পিতা ভেঙ্কটেশ, মৌমিতা দত্ত, মধুমিতা দাস এবং রাজর্ষি চক্রবর্তী।

প্রথম নৃত্য ‘মৃদঙ্গমঞ্জিরা’তে মঞ্জিরা পরিবেশিত হয় ওড়িশি নৃত্যের মাধ্যমে। সঙ্গে ছিল মণিপুরী নৃত্যের পুংবাদন। দ্বিতীয় উপস্থাপনাটি ছিল ‘তানুম পল্লবী’। এটি ছিল একটি নিখুঁত নৃত্য পরিবেশনা, যে নৃত্যের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ছন্দোময় পদবিন্যাস ও নৃত্যভঙ্গি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই বিশেষ নৃত্যটিতে ছিল মণিপুরী ‘তানুম’ ও ওড়িশি ‘পল্লবী’র এক মনোমুগ্ধকর যুগলবন্দি। মণিপুরী ‘তানুম’-এর পরিকল্পনা ছিল গুরু বিপিন সিংহের এবং ওড়িশি ‘পল্লবী’ ছিল গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র পরিকল্পিত।

এই সন্ধ্যায় মালশ্রী আয়োজিত ‘প্রেরণা’ নৃত্যানুষ্ঠানটির সুখস্মৃতি বহু কাল দর্শকমনে রয়ে যাবে।

Dance Program Second Indian Classical Dance Festival Satyajit Ray Auditorium
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy