স্ত্রী মায়ার সঙ্গে সিদ্ধার্থশঙ্কর
লেজে পড়ার সময় থেকেই নানা যোগ্যতার প্রকাশ দেখা গিয়েছিল তাঁর মধ্যে। খেলার মাঠ, বিতর্কসভা, ছাত্র ইউনিয়ন সবেতেই সিদ্ধার্থশঙ্কর ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়। কলেজের ক্রিকেট টিমে তিনিই ছিলেন ‘তারকা’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে খেলায় তিনি ছিলেন ‘ইউনিভার্সিটি ব্লু।’ ফুটবল খেলেছেন কালীঘাট ক্লাবে। আর টেনিস, ব্যাডমিন্টন খেলার অভ্যেস ধরে রেখেছিলেন সত্তর-আশি বছর বয়সেও। তাঁদের বেলতলা রোডের বাড়ির লনে শীতের সন্ধেয় খেলতে দেখেছি তাঁকে। মজা করে বলতেন, ‘‘তোমরা আমাকে যতই গালি দাও, আমি আসলে জেন্টল্ম্যান। কারণ আ স্পোর্টসম্যান ইজ় অলওয়েজ় আ জেন্টল্ম্যান!’’
লন্ডন থেকে ব্যারিস্টার হয়ে সিদ্ধার্থশঙ্কর দেশে ফেরেন ১৯৪৬-এ। বয়স তখন ছাব্বিশ। জ্যোতিবাবু যেমন রাজনীতি করতেই দেশে ফিরেছিলেন, সিদ্ধার্থবাবুর ক্ষেত্রে তা নয়। প্রথম বছর দশেক ওকালতিই ছিল তাঁর একমাত্র কাজ। প্রথম নির্বাচনে লড়েন ১৯৫৭ সালে। জিতে বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রিসভায় আইন ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব পান। ১৯৬২-তে পরবর্তী নির্বাচনেও জয়ী হন। তবে সে বার কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব হয়ে গিয়েছিল তাঁর। জেতেন নির্দল হিসেবে।
সিদ্ধার্থশঙ্করের পুরনো বন্ধু ইন্দিরা গাঁধী তাঁকে ১৯৬৭-তে কেন্দ্রে নিয়ে যান শিক্ষামন্ত্রী করে। এই পর্বেই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল, রাজনৈতিক টালমাটালের পশ্চিমবঙ্গে, তাঁর হাতে এ রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ। অন্তত এক বছর সেই দায়িত্ব পালনের সুবাদে সিদ্ধার্থশঙ্কর রাজ্যে নিজের ‘ক্ষমতা’ কায়েম করার রাস্তা সুগম করতে কসুর করেননি।
নকশাল আন্দোলন, খুনের রাজনীতি তখন রীতিমতো ত্রাস ছড়িয়েছে। জনজীবন সন্ত্রস্ত। তখনই ঘটে বরাহনগর গণহত্যার মতো কলঙ্কিত ঘটনাও। এর পরে ১৯৭২ সালে ভোট হল বাংলায়। ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে জ্যোতি বসু-সহ বামেরা ভোট চলাকালীন সরে দাঁড়ালেন। কংগ্রেস বিপুল ভোটে জিতে সরকার গড়ল। সিদ্ধার্থ রায় এ বার মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত বলি, অনেক বছর পেরিয়ে নব্বইয়ের দশকে একদিন ওই রিগিংয়ের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম সিদ্ধার্থবাবুর কাছে। জবাবে তিনি দুটি পাতলা বই হাতে দিলেন। বিচারবিভাগীয় কমিশনের দু’টি রিপোর্ট। তার পরে হেসে বললেন, ‘‘শুধু রিগিংয়ের কথাই শুনেছ! এ বার এগুলি দেখো। জ্যোতি ১৯৭৭ সালে সরকারে এসে আমাদের বিরুদ্ধে কমিশন বসিয়েছিল। কিছুই প্রমাণ হয়নি। তাই রিপোর্টও বিধানসভায় পেশ করেনি ওরা।’’
মুখ্যমন্ত্রিত্বের পাঁচ বছর সিদ্ধার্থ রায় রাজ্যের উন্নয়নে বিশেষ কিছু করেননি। হয়তো সেই উদ্যোগও তাঁর ছিল না। তাঁর কার্যকালের অনেকটাই কেটেছে নকশাল-মোকাবিলা এবং জরুরি অবস্থা নিয়ে।
নকশাল আন্দোলনকে ‘মুক্তির পথ’ বলে বিশ্বাস করে যাঁরা তাতে শামিল হয়েছিলেন, তাঁদের একটি বড় অংশ কৃতী, মেধাবী ছাত্রদল। তাঁদের মতাদর্শের ঠিক-ভুল বা বিচ্যুতি নিয়ে বিশ্লেষণের পরিসর এটা নয়। তবে নকশাল আন্দোলনের নামে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি যে সুস্থ সমাজের পরিপন্থী হয়ে উঠেছিল, তাতে সন্দেহ নেই।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর তাকে দমন করতে পেরেছিলেন। কারণ এ কাজে রাষ্ট্রশক্তি অর্থাৎ পুলিশ ছিল তাঁর প্রধানতম হাতিয়ার। তাতে বাড়াবাড়ি অবশ্যই হয়েছিল। ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উগ্র চেষ্টাও। সেই বিতর্ক আজও সজীব। কিন্তু তাঁর প্রশাসনিক দৃঢ়তায় রক্তস্রোত যে বন্ধ হয়েছিল, এটাও অস্বীকার করার নয়। দেড় দশক পরে পঞ্জাবে রাজ্যপাল হয়ে সিদ্ধার্থশঙ্কর সেখানকার তৎকালীন পুলিশ কর্তাকে দিয়ে উগ্রপন্থী খলিস্তানিদের দমন করেছিলেন। তখনও পশ্চিমবঙ্গের নকশাল-অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই তাঁর কাজে সহায়ক হয়। যদিও তিনি নিজে প্রকাশ্য এ কথা মানতেন না। বরং বলতেন, নকশাল এবং খলিস্তানিদের মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না। দুই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, লক্ষ্য ও প্রতিরোধের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা।
সাতাত্তরে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হওয়ার পরে রাজনীতিতে সিদ্ধার্থবাবুর সক্রিয়তা কমে যায়। এমনকি, সাতাত্তরে পর্যুদস্ত হওয়া ইন্দিরা গাঁধী ১৯৮০-তে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরে এলেও সিদ্ধার্থশঙ্করের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ঘোচেনি। রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সিদ্ধার্থবাবু তখন ব্যারিস্টারির সঙ্গে ক্রিকেট প্রশাসনেও যুক্ত হয়ে পড়েন। সিএবি-র সভাপতি ছিলেন ১৯৮২ থেকে প্রায় চার বছর।
এর মধ্যে ১৯৮৪-তে ইন্দিরার মর্মান্তিক হত্যা। প্রধানমন্ত্রী হন রাজীব গাঁধী। সিদ্ধার্থশঙ্করও একটু একটু করে কংগ্রেসে আবার জমি পেতে থাকেন। সেই পর্বেই ১৯৮৫ সালের শেষে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএমের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁকে কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়। বোলপুর আসনটি ঐতিহাসিক ভাবেই কংগ্রেসের পক্ষে কঠিন ছিল। সিদ্ধার্থশঙ্কর হেরেছিলেন প্রায় লাখ দেড়েক ভোটে।
কিন্তু তার পাশাপাশি ছিল আরও একটি কাহিনি। সাংবাদিক হিসেবে খুব কাছ থেকে সেই ভোটপর্ব দেখার সুযোগ হয়েছিল। ফলে দেখেছি, সিদ্ধার্থশঙ্করকে হারাতে রাজ্য কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতারা কী ভাবে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন। এক অর্থে তা ছিল সিদ্ধার্থবাবুর বিরুদ্ধে তাঁর নিজের দলের একটি বড় সংখ্যক নেতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা যেন ‘বদলা’ নিলেন!
কেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নানা কারণে সিদ্ধার্থশঙ্কর তাঁর দল ও মন্ত্রিসভার অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। প্রথমত, সাতাত্তরে তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদ ফুরোতেই তিনি ভোটে না দাঁড়িয়ে সরে গিয়েছিলেন। এই ‘পলায়নপরতা’ তাঁর দলের প্রায় কেউই ভাল চোখে দেখেননি। তাঁকে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড লোকসভায় টিকিট দেওয়ায় বিষয়টি বাড়তি মাত্রা পায়। তখন প্রকৃত অর্থে তাঁর ‘বন্ধু’ ক’জন ছিলেন, বলা কঠিন।
তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্করকে নিয়েও দলে অভিযোগের অন্ত ছিল না। ওয়াংচু কমিশন তার একটি। সিদ্ধার্থ রায় দুর্নীতিপরায়ণ ছিলেন বলে শোনা যায় না। তাঁর গায়ে দুর্নীতির ছিটেফোঁটা কালি কেউ ছেটাতে পারেননি, ঠিকই। কিন্তু নিজের স্বচ্ছতা প্রমাণে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে তিনি নিজেই বিচারপতি ওয়াংচুর নেতৃত্বে কমিশন তৈরি করায় এক বেনজির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এবং সিদ্ধার্থশঙ্করের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে ক্ষোভ তাতেও সীমা ছাড়ায়।
আরও আছে। আগেই বলেছি, তাঁর পছন্দ-অপছন্দের ভেদরেখাটি ছিল মোটা দাগের। শুনেছি, একবার তাঁর বেলতলার বাড়িতে বৈঠকে দলের অনুজ নেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে, তাঁদের কয়েকজনকে তৎক্ষণাৎ পুলিশে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন তিনি। গলা টেপার মতো ঘটনাও নাকি ঘটেছিল সেখানে। সে-ও এক উদ্ভট পরিস্থিতি! মুখ্যমন্ত্রীর দোতলার ঘরে তাঁর দলের নেতারা বসে। আর তাঁদের গ্রেফতার করার জন্য উপর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী মায়াদেবী হাঁকছেন, ‘পুলিশ,পুলিশ… চিফ মিনিস্টার ইজ় বিয়িং কিলড!’
এই রকম অনেক বিষয় মিলিয়ে তাঁর প্রতি কংগ্রেসের অন্দরে চাপা রাগ তৈরিই ছিল। বোলপুরের উপনির্বাচন সেই আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করে। সুদে-আসলে পুরনো হিসেব ‘উসুল’ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান দলের অনেকেই।
পায়ের তলার মাটি কী ভাবে কাটা হয়েছে, সিদ্ধার্থবাবুর তা সম্যক উপলব্ধি হয় ভোট গণনার সময়ে। তার আগে পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, বোলপুরে জিতে তিনি শুধু সাংসদ নন, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও হতে পারবেন। পরে অবশ্য তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘‘আসনটি কংগ্রেসের পক্ষে কঠিন ছিল। তবে বাকি আর যা ঘটেছে, তা রাজীবকে জানিয়েছি।’’
এর পরেই রাজনীতির মূল স্রোত থেকে সরিয়ে রাজীব তাঁকে অশান্ত পঞ্জাবের রাজ্যপাল করার সিদ্ধান্ত নেন। সাড়ে তিন বছর রাজ্যপাল ছিলেন তিনি, ১৯৮৯ পর্যন্ত। বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের জমানায় বছর দুয়েক আবার ঢাকা পড়ে যান সিদ্ধার্থশঙ্কর। ১৯৯১-এ রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন এবং রাজ্যে উত্থান।
কলকাতার অধুনালুপ্ত চৌরঙ্গি কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জিতে বিধানসভায় বিরোধী নেতা হন সিদ্ধার্থবাবু। আর মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। পরিষদীয় রাজনীতির সে এক চমকপ্রদ অধ্যায়। রীতিমতো হোমওয়র্ক করে তথ্যপঞ্জি হাতে নিয়ে শাণিত বক্তৃতা করতেন সিদ্ধার্থশঙ্কর। যা বলতেন, যে সব পরিসংখ্যান পেশ করতেন, তার সব গুছিয়ে তুলে দেওয়া হত সাংবাদিকদের হাতে।
তার চেয়েও বড় কথা, সিদ্ধার্থ রায়ের বক্তৃতার সময়ে সারাক্ষণ সভাকক্ষে বসে থাকতেন জ্যোতিবাবু। মাঝে মাঝেই জমে উঠত চাপানউতোর। আসলে তাঁদের দু’জনের বন্ধুত্ব চল্লিশের দশকের শেষ থেকে। স্মৃতির অফুরান ভাণ্ডার হাতড়ে টুকরো টুকরো মণিমাণিক্য ছড়িয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর। কখনও আবেগ, কখনও বুদ্ধিদীপ্ত কটাক্ষের মিশেলে সেগুলি প্রাণবন্ত হয়ে উঠত।
যেমন, রাজ্যের শিক্ষানীতি নিয়ে বলার সময়ে সিদ্ধার্থবাবু সরকারি চাকুরেদের ‘সরকারি চাকর’ বলায় প্রতিবাদ করেন জ্যোতিবাবু। তিনি বলেন, শব্দটি অপমানজনক। মুচকি হেসে সিদ্ধার্থশঙ্কর স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের উদ্দেশে জানতে চান, ‘‘গভর্নমেন্ট সারভেন্ট কথাটি নিশ্চয় গ্রহণযোগ্য? অভিধানে সারভেন্ট শব্দের বাংলা অনুবাদে চাকর শব্দটি আছে। জ্যোতি তো ইংরেজি শিক্ষাটাই তুলে দিয়েছে। তা হলে বাংলা বলতে আপত্তি হবে কেন?’’ সরকারপক্ষ চুপ।
মনে আছে, রাজনৈতিক আক্রমণ করতে গিয়ে সিদ্ধার্থবাবুকে একবার ‘ট্রেটর’ বলেছিলেন জ্যোতিবাবু। কথা কেড়ে নিয়ে সিদ্ধার্থবাবু উদাহরণ টেনে বলতে শুরু করলেন। যার মোদ্দা কথা ছিল, তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলার আগে জ্যোতিবাবুর ভেবে দেখা উচিত, তাঁর জন্য এই সিদ্ধার্থশঙ্কর কী কী করেছেন!
মানুদা-র কাছে জ্যোতিবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গভীরতার নানা কাহিনি শুনেছি। বিলেত থেকে ফিরে জ্যোতিবাবু যখন ব্যারিস্টারি না করে পুরোদস্তুর বাম রাজনীতিতে নেমে পড়েন, তখন কিছু দিন তাঁকে হিন্দুস্থান পার্কের পৈতৃক বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে থাকতেন প্রতাপাদিত্য রোডের একখানি ঘরে। জ্যোতিবাবুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে কংগ্রেস নেতা সিদ্ধার্থ রায় বলেছিলেন, ‘‘কত কষ্টের ছিল সেই দিনগুলি।তবু জ্যোতির হাসিমুখ, ফিটফাট চলাফেরায় ও কাউকে কিছু বুঝতে দিত না।’’
পঞ্চাশের দশকে একবার জ্যোতিবাবুর সঙ্গী হয়ে ভদ্রেশ্বরে গিয়েছিলেন সিদ্ধার্থবাবু। জ্যোতিবাবুর সভা ছিল সেখানে। মানুদা মজা করে সেখানকার একটি ঘটনা শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘বিলেত-ফেরত ঝকঝকে বাঙালি কমিউনিস্ট জ্যোতির সই নিতে সুন্দরী মেয়েরা গাড়ি ঘিরে ধরল। জ্যোতি কিন্তু কাচ তুলে বসে রইল। সই দিল না। গাড়ি একটু এগোতে ওকে বললাম, সুন্দরীদের সইটুকুও দিতে পারলে না! ও বলল, আমি কি বাংলা লিখতে জানি? ওখানে ইংরেজিতে সই দিলে খুব বাজে হত ব্যাপারটি। বুঝে চলতে হয়।’’
অনুরূপ ঘটনা ১৯৭১ সালে দিল্লিতে। সেটিও মানুদার মুখে শোনা। জ্যোতিবাবু গোপনে ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। মানুদা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন গভীর রাতে নিজে গাড়ি চালিয়ে। গাড়িটিও তাঁর স্ত্রীর। পাছে নিজের গাড়ি কেউ চিনে ফেলে! ফেরার সময় পথ হারিয়ে বিপত্তি। অগত্যা ঘুরতে ঘুরতে একটি থানা দেখতে পেয়ে তিনি বললেন, পুলিশকে গিয়ে বলি। জ্যোতিবাবু ধমক দিলেন, ‘কী বুদ্ধি! পুলিশ তোমাকে-আমাকে চিনে ফেললে আর কারও কিছু জানতে বাকি থাকবে?’ সে বার নাকি দু’-তিন ঘণ্টা চক্কর কেটে বাড়ির রাস্তা খুঁজে পেয়েছিলেন ওঁরা।