Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্যথার এ-পিঠ ও-পিঠ

পিঠে ব্যথার উৎস অনেক। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পথ ওষুধ নয়, তা লুকিয়ে আছে সুস্থ জীবনযাপনেপিঠে ব্যথার উৎস অনেক। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পথ ওষুধ নয়, তা লুকিয়ে আছে সুস্থ জীবনযাপনে

মহুয়া গিরি
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

পিঠের ব্যথায় কাবু হয়ে ক’দিন অফিস যেতে পারেননি আবির। পেন কিলার আর জেল স্প্রে লাগিয়েও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কড়া নেড়েছেন চিকিৎসকের দরজায়। ব্যামো তাড়াতে ওষুধের পাশাপাশি প্রেসক্রিপশনে কিছু ব্যায়ামেরও দাওয়াই দিলেন ডাক্তারবাবু। দিন সাতেক পরে দেখা গেল, সত্যি সত্যি ব্যথা উধাও!

এ রকম কমবেশি পিঠের ব্যথায় কে না ভুগেছেন! রাত দিন এক করে কম্পিউটারের সামনে চোখ এঁটে বসে থাকা আবিরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অভ্যাসজনিত। ভুল ভঙ্গিমায় চেয়ারে বসে বসেই বিপদ ডেকে এনেছিলেন তিনি। কিন্তু রাহুল?

নাম করা স্কুলের ক্লাস সেভেনের মেধাবী ছাত্র রাহুলের পিঠে ব্যথার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, ভারী বইয়ের ব্যাগ বয়েই এই দশা। তাও মাত্র ১৩ বছর বয়সেই।

চিকিৎসকেরা বলছেন, পিঠে ব্যথার কোনও বয়স নেই। সাধারণত তিরিশের পরে পিঠে ব্যথার প্রবণতা বাড়ে। তবে আট থেকে আশি— কেউই বিপদসীমার বাইরে নন।

আসলে মেরুদণ্ডকে ঘিরে পেশি, স্নায়ু, তরুণাস্থির জটিল বিন্যাস আমাদের পিঠ জুড়ে। মোটামুটি ভাবে দেখলে, ঘাড়ের পিছনে, পিঠের উপরের অংশে কিংবা নীচের দিকে— ব্যথা হতে পারে এই তিন জায়গার যে কোনও একটিতে।

পিঠে ব্যথা হয় কেন?

চিকিৎসকেরা বলছেন, কারণ অনেক। মেরুদণ্ডের জোরেই আমরা দু’পায়ে সোজা হয়ে চলি। হাড়, স্নায়ু, তরুণাস্থি দিয়ে তৈরি এই মেরুদণ্ড। এর যে কোনও একটিতে চোট লাগলে, টিউমার হলে, জন্মগত ত্রুটি বা যক্ষ্মার মতো কোনও রোগ দেখা দিলে, এমনকী শরীরে ভিটামিন বা মিনারেলের অভাব হলেও ব্যথা শুরু হতে পারে।

তবে অন্য অনেক কারণেও পিঠে ব্যথা হয়। রোগীর এক্স রে, এমআরআই করে বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সমস্যাটা মেরুদণ্ডের নয়। শরীরের অন্য কোনও অংশের। হয়তো অগ্ন্যাশয়, লিভার বা কোলনে সমস্যা, বুকে টিউমার— সে সব ক্ষেত্রেও পিঠে ব্যথার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। একে বলে ‘রেফার্ড পেন’। চল্লিশোর্ধ মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের আগে বা পরে এ ধরনের ব্যথা হতে পারে।

শুধু রোগব্যাধি নয়, আমাদের দৈনন্দিন অভ্যেসের মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে পিঠে ব্যথার হাজারো কারণ। বিশেষ করে ব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত শহুরে মানুষদের মধ্যেই এর প্রকোপ বেশি। অতিরিক্ত ওজন, এক নাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা না থেমে গাড়ি চালানো, ভুল ভঙ্গিমায় বসা, কুঁজো হয়ে হাঁটা— এমন নানা কারণে সাময়িক ভাবে পিঠে ব্যথা শুরু হতে পারে। পেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়লেই এই ব্যথা বাড়ে। চিকিৎসকদের মতে, লাইফস্টাইলে একটু অদল বদল এনে সেগুলিকে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বললেন, ব্যথা বাগে আনতে রোজ কিছুক্ষণ হাঁটুন। দৌড়ান। সাঁতার কাটুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যোগাসন বা প্রাণায়ামও খুব উপকারী। বসার সময় খেয়াল রাখুন, পিঠ যেন সোজা থাকে। সামনে ঝুঁকে বসবেন না। কম্পিউটারের পর্দার সঙ্গে চোখের দূরত্ব এমন রাখুন, যাতে ঘাড় নোয়াতে না হয়।

যাঁরা একটানা চেয়ারে বসে কাজ করেন, দেখে নেবেন চেয়ারের উচ্চতা যেন আপনার উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। পা যেন অবশ্যই মাটিতে ঠেকে।

সুদীপ্তবাবু জানালেন, ‘‘সপ্তাহ তিনেক পরেও ব্যথা না কমলে ফেলে রাখবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি করাতে হতে পারে। ব্যথা বাড়লে সেঁক দিয়ে দেখতে পারেন। আরাম হবে।’’

সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে একমত শল্যচিকিৎসক বিতান মাইতি। তাঁর পরামর্শ, ব্যথা কমাতে জেল স্প্রে বা সেঁক চললেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মালিশ করবেন না। ফল উল্টো হতে পারে। বিতানবাবুর মতে, ধূমপানের কারণেও অনেক সময় পিঠে ব্যথা হয়। যাঁরা একটানা চেয়ারে বসে কাজ করেন তাঁরা তো বটেই, যে সব কাজে শরীরে ঝাঁকুনি বেশি হয়, যেমন কল-কারখানার শ্রমিকের কাজ, দূরপাল্লার গাড়ি চালানো— সে সব ক্ষেত্রেও পিঠে ব্যথার ভয় বেশি।

তবে বিতানবাবুর সাফ কথা, ‘‘কারণ যা-ই হোক না কেন, এই ধরনের সমস্যায় ব্যথা কমানোর ওষুধ কখনওই পাকাপাকি সমাধান নয়। ক্ষণিকের আরাম মাত্র।’’

মডেল: শুচিস্মিতা

মেকআপ: অভিজিৎ পাল

ছবি: অমিত দাস

পোশাক: শপার্স স্টপ, অ্যাক্রোপলিস মল

লোকেশন: হলিডে ইন, এয়ারপোর্ট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Back Pain Office Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE