Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শহুরে বৃত্ত ছেড়ে...

একদিনের ছুটিতেই যাওয়া যেতে পারে মৌসুনি দ্বীপে। আচমকা চোখের সামনে অন্য রূপে ধরা দেবে চির চেনা বঙ্গোপসাগর এ রাজ্যের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে মৌসুনি দ্বীপ। সেখানেই বালিয়াড়া বিচ। তার প্রায় উপরে সারি সারি তাঁবু পাতা। জন কোলাহলের বাইরে এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা!   

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

পর্যটকদের দম চাপা ভিড় নেই, নেই শপিংয়ের জন্য হুড়োহুড়ি। কিন্তু দু’দিন সময় হাতে থাকলেই বেড়িয়ে আসতে পারেন সাগরপারে।

এ রাজ্যের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে মৌসুনি দ্বীপ। সেখানেই বালিয়াড়া বিচ। তার প্রায় উপরে সারি সারি তাঁবু পাতা। জন কোলাহলের বাইরে এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা!

সক্কাল সক্কাল শিয়ালদহ দক্ষিণ স্টেশন থেকে নামখানা লোকাল ধরে ফেলুন। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে নেমে পড়বেন নামখানা স্টেশনে। সেখান থেকে মোটর ভ্যানে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর পাড়ে। সব সময়ই নৌকো পারপার করছে। টুক করে নৌকায় উঠে কয়েক মিনিটেই অন্য পাড়ে। সেখান থেকে টোটো চড়ে দুর্গাপুর ঘাট। দুর্গাপুর ঘাট থেকে নৌকো করে বাগডাঙা ঘাট। এই বাগডাঙা ঘাটই মৌসুনি দ্বীপের প্রবেশদ্বার। ঘাটের কাছেই পাওয়া যায় টোটো আর মোটর ভ্যান। তাতে চড়ে মিনিট ২৫ গেলেই সমুদ্রতট। সকাল ছ’টা নাগাদ কলকাতা থেকে রওনা দিলে বেলা ১২টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন সমুদ্রতটে। আচমকা চোখের সামনে যেন লাফিয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ বঙ্গোপসাগর। দ্বীপের অনেক জায়গাতেই এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। যেখানে যতটুকু বিদ্যুৎ, তা সৌরশক্তির মাধ্যমে।

বালিয়াড়া থেকেই দেখা যায় এ রাজ্যের শেষতম বিন্দু জম্বু দ্বীপকে। আর এক পাশে সাগর দ্বীপ। মৌসুনিতে কিন্তু এখনও হোটেলের ধারণা গড়ে ওঠেনি। বছর কয়েক ধরে হচ্ছে বিচ ক্যাম্পিং। এখন পর্যন্ত তিনটি সংস্থা বিচ ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। শহরের চেনা জীবনের বাইরে এ সম্পূর্ণ অন্য এক জগৎ। প্রায় বিচের উপরেই তাঁবুতে থাকা। সঙ্গে রয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাথরুম। গেলেই ক্যাম্পের কর্তারা এগিয়ে দেবেন ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক — গাছ থেকে পেড়ে আনা ডাবের জল। এর পরে দুপুরের খাওয়াদাওয়া। সেই মেনুতে থাকবে পুকুর থেকে ধরা টাটকা মাছ।

এই বিচ ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের থেকে জমি নিয়ে। এঁদেরই পরিবারের মহিলারা পর্যটকদের খাবারদাবার রান্না করে দেন। তাই রান্নায় থাকে ঘরোয়া ছোঁয়া। হঠাৎই আদুল গায়ের কচিকাঁচারা এসে আলাপ সারতে চাইলে অবাক হবেন না। শহুরে মানুষদের নিয়ে ওদের চোখ ভরা কৌতূহল। হয়তো বা চলে আসবেন গ্রামের বয়স্ক মানুষেরাও। এই দ্বীপের ইতিহাস জানতে পারবেন তাঁদের কাছে।

উষ্ণায়নের প্রভাব এই দ্বীপেও পড়েছে। তার ফলে চাষবাসেরও ক্ষতি হচ্ছে। ইচ্ছে হলে নিজে গিয়েও গ্রামের মানুষজনের সঙ্গে আলাপ জমাতে পারেন। যেতেই পারেন সমুদ্র থেকে মাছ ধরেন যাঁরা, তাঁদের বাড়িতে। অথবা পাখি দেখার নেশা থাকলে মৌসুনি দ্বীপ তার জন্য আদর্শ জায়গা।

বিকেলের দিকে সমুদ্রতট ধরে হেঁটে যান যত দূর ইচ্ছে। কোনও ভিড় নেই। কোনও তাড়াও নেই। বিচ ধরে বাঁ দিকে গেলেই পাওয়া যাবে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। দিনের বেলায় সমুদ্রতট জুড়ে লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ি।

বাড়ির মহিলারা মাছ ধরতে জাল ফেলছেন সমুদ্রে। সব চলছে উত্তেজনাহীন ঢিমে তালে। শহুরে মস্তিষ্ক এমন পরিবেশে অবাক হয়ে যায়।

মৌসুনির সমুদ্রতটে ধীরে ধীরে সন্ধে নামার দৃশ্যও কেমন যেন আবেশ ধরায়। ক্রমশ অসীম জলের মধ্যে ডুবে যায় সূর্য। আকাশের দিকে তাকালে যত দূর চোখ যায় তারায় তারা! যাকে আড়াল করতে নাগরিক আলো এখনও পৌছয়নি। আর চাঁদ উঠলে সমুদ্রের জলেই সেই চাঁদের প্রতিফলন। জ্যোৎস্না ধোয়া রাতে ক্যাম্পফায়ার। সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে দেশি মুরগির বার-বি-কিউয়েরও আয়োজন থাকে।

সমুদ্রের ধারে এক রাত এমন ভাবে কাটিয়ে পরদিনের ভোরও যেন মন কেমন করা। ব্রেকফাস্ট সেরে এ বার ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়া। আবার সেই নাগরিক ব্যস্ততার দিকেই ফিরে আসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mousuni Beach Weekend Trip Travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE