Advertisement
E-Paper

ক্যানসারকে হারিয়ে মা হওয়াও স্বপ্ন নয়

কিন্তু কী ভাবে? বলছেন ডা. গৌতম খাস্তগীর। শুনলেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়বয়স মোটে পঁচিশ। মার্কিন সাইক্লিস্ট ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। সেটা ১৯৯৬-এর শেষ দিক। ক্যানসার ধরা পড়ল। স্টেজ থ্রি ছাড়িয়ে গেছে। ঠাণ্ডা মাথায় নিজের স্পার্ম গচ্ছিত রাখলেন ব্যাঙ্কে। অবশ্য পরের বছরই চিকিৎসায় তাঁর ক্যানসার আয়ত্তে আসে। ঠিক তিন বছর পরে সেই স্পার্ম দিয়েই সন্তানের জন্ম দেন ল্যান্স অ্যার্মস্ট্রং। এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ক্যানসার সামলে উঠে অনেকেই সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। ক্যানসার পেরিয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন অনেক বিদেশি তারকা।

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৫

বয়স মোটে পঁচিশ। মার্কিন সাইক্লিস্ট ল্যান্স আর্মস্ট্রংয়ের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। সেটা ১৯৯৬-এর শেষ দিক। ক্যানসার ধরা পড়ল। স্টেজ থ্রি ছাড়িয়ে গেছে। ঠাণ্ডা মাথায় নিজের স্পার্ম গচ্ছিত রাখলেন ব্যাঙ্কে। অবশ্য পরের বছরই চিকিৎসায় তাঁর ক্যানসার আয়ত্তে আসে। ঠিক তিন বছর পরে সেই স্পার্ম দিয়েই সন্তানের জন্ম দেন ল্যান্স অ্যার্মস্ট্রং। এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ক্যানসার সামলে উঠে অনেকেই সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। ক্যানসার পেরিয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন অনেক বিদেশি তারকা। আমেরিকান অভিনেত্রী ক্রিশ্চিনা অ্যাপেলগেটের কথাই ধরা যাক। ২০০৮-এর অগস্টে ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়েছিল ক্রিশ্চিনার। এক মাসের মধ্যে ডাবল ম্যাসটেকটমির (দুই দিকের স্তন বাদ দিয়ে) পর সুস্থ হয়ে ওঠেন ক্রিশ্চিনা। ২০১১-তে জন্ম দেন মেয়ের।

বিদেশের নামী-দামি তারকাই নয়, এখানকার অনেক সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষও ক্যানসার পেরিয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। পুরোটাই আধুনিক চিকিৎসার দৌলতে। যেমন হাওড়ার চান্দ্রেয়ী। বিয়ের পর ওভারিতে টিউমার ধরা পড়েছিল বছর তিরিশের চান্দ্রেয়ীর। অপারেশন করতে গিয়ে দেখা যায় ক্যানসার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। স্বভাবতই জীবন বাঁচাতে দুটি ওভারিই বাদ পড়ে। তাই বলে জীবন থমকে গেল না। চিকিৎসার ধকল কাটিয়ে বছর পাঁচেক পর চান্দ্রেয়ী সন্তানের জন্ম দিলেন ডোনার ওভামের সাহায্যে।

দরকার দৃঢ় মানসিকতা

তবে যতটা সহজে ব্যাপারটা বলা হচ্ছে, বাস্তব মোটেই অত সহজ নয়। ক্যানসার শুনলেই বেশির ভাগ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেখানে নতুন করে আরও একটি প্রাণের জন্ম? অনেকেই ভাবতে পারেন না। তাই বুঝতেই পারছেন এ জন্য দরকার কতটা মানসিক জোর। দক্ষিণ কলকাতার সায়ন্তনের কথাই ধরা যাক। বিয়ের ছয় মাস পর ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়েছিল তাঁর। প্রাথমিক ভাবে ভেঙে পড়লেও সদ্য বিবাহিত সায়ন্তন এক ডাক্তার আত্মীয়ের পরামর্শে নিজের শুক্রাণু ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখেন। বছর দুই হল সায়ন্তনের ক্যানসার সেরে গিয়েছে পুরোপুরি। ওঁকে বলা হয়েছে আরও বছর দুই অপেক্ষা করতে। তার পরই সায়ন্তন অনায়াসেই ভাবতে পারবেন সন্তানের কথা। কিন্তু এই ধরনের পরামর্শ সবাই পান না। বা পেলেও এতখানি এগিয়ে আসার মনের জোরও দেখাতে পারেন না অনেকেই। অথচ আধুনিক চিকিৎসায় অনেক সময়ই ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। স্বাভাবিক জীবনেও অনায়াসে ফেরা যায়। সুতরাং কম বয়সে ক্যানসার হলে সেখানেই শেষ না ভেবে আবার নতুন করে শুরু করার চিন্তা প্রথম থেকেই মাথায় রাখতে হবে।

বছর আটেক আগে স্কুলে পড়ার সময়ই লিম্ফোমা ধরা পড়েছিল নিবেদিতা দত্তর। রেডিয়েশনে ডিম্বাশয়ের ক্ষতি হতে পারে বুঝে ওর ওভারি দু’টো পেটের ভেতরই অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বিয়ের পর নিবেদিতা যখন মা হতে চাইল, দেখা গেল ওভারি দু’টি বহাল তবিয়তে রয়েছে। কিন্তু ফ্যালোপিয়ান টিউব থেকে ওভারির দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় প্রেগন্যান্সি আসছে না। হাল ছাড়েনি নিবেদিতা। নিজের ডিম্বাণু ব্যবহার করেই আইভিএফ-এর সাহায্যে সে মা হয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সম্প্রতি বছর পঁচিশের এক মহিলা এসেছিলেন ক্লিনিকে। বিয়ে হয়নি। মেয়েটির ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়েছে। চিকিৎসা শুরুর আগে মেয়েটির ডিম্বাণু ও তাঁর প্রেমিকের শুক্রাণু নিয়ে সাতটি ভ্রূণ তৈরি করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলে এই ভ্রূণের সাহায্যেই মেয়েটি মা হতে পারবেন। দরকার হবে না দাতার ডিম্বাণুর। আসলে ক্যানসার নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্যানসারের চিকিৎসাই প্রেগন্যান্সির ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন জননাঙ্গের ক্যানসার হলে সেগুলো বাদ দিতে হতে পারে। দরকার হতে পারে রেডিয়েশনের। তাতে ওভাম বা ডিম্বাণুর ক্ষতি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই সময়ের আগেই মেনোপজ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং কমবয়সিদের ক্যানসার ধরা পড়লেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আগেভাগে ছকে রাখা জরুরি। এ সব ক্ষেত্রে ওভারির টিসু সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। সেখান থেকেই সময়মতো বের করে নেওয়া যাবে প্রয়োজনীয় ডিম্বাণু। ইউটেরাস অক্ষত থাকলে সন্তান ধারণ করা যাবে অনায়াসেই। তবে ক্যানসার ইউটেরাসে হলে সে ক্ষেত্রে সাহায্য নিতে হবে সারোগেসির। ২০০৮-এ মার্কিন অভিনেত্রী মারিসা জারেট সারভাইকাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা শেষ হলে জারেট একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সারোগেট মাদারের সাহায্যে।

বিকল্প পদ্ধতি

বেশ কিছু ক্যানসারের চিকিৎসায় শরীরে হরমোনের মাত্রার তারতম্য ঘটে। যার ফলে সহবাসের স্বাভাবিক ইচ্ছে কমে যায়। রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপির ধাক্কাও শরীরে প্রভাব ফেলে। তবে সে সব পেছনে ফেলেও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ফিরিয়ে দেবে স্বাভাবিক যৌনজীবন। পুরুষদের ক্যানাসার হলে স্পার্ম গচ্ছিত রাখা যেতে পারে স্পার্ম ব্যাঙ্কে। কেমোথেরাপি থেকে ক্ষতি হতে পারে টেস্টিসেরও। সে ক্ষেত্রে টেস্টিসের টিস্যু আগেভাগে সংরক্ষণ করে রাখলে পরবর্তীতে তার থেকে সুবিধেমতো স্পার্ম বের করে নেওয়া যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে স্পার্ম তৈরির ক্ষমতা পুরোপুরি চলে যায় না। ওষুধ দিলে ফিরে আসে। তবে এ সব ক্ষেত্রে পরবর্তী সন্তানের জন্য দ্বারস্থ হতে হবে সহযোগী পদ্ধতির। অপেক্ষা করতে হবে পাঁচটি বছর।

অপেক্ষা পাঁচ বছরের

সন্তানের জন্ম দেওয়াই শেষ কথা নয়, তার ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হবে। চিকিৎসার পর এক বার সেরে গেলে ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে কি না, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞরা পাঁচ বছর সময় নেন। তা ছাড়া প্রেগন্যান্সি অবস্থায় ক্যানসার ফিরে এলেও মুশকিল। কেমোথেরাপি থেকে ক্ষতি হতে পারে গর্ভস্থ ভ্রূণেরও। এই পাঁচটি বছর কাটিয়ে দিতে পারলে অনায়াসে সন্তানের কথা ভাবতে পারেন। কারও ক্ষেত্রে দুই বা তিন বছরেও হয়ে থাকে।

সুস্থ বাচ্চা

ক্যানসার নিরাময় হয়ে যাওয়ার পর সন্তানধারণ করলে বাচ্চার কোনও রকম ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এমনকী বাচ্চা ব্রেস্ট ফিডিং-ও করতে পারবে। তবে ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে ম্যাসটেকটমি করা হলে ব্রেস্ট ফিডিং-এর সুযোগ থাকবে না।

যোগাযোগ-৯৮৩০৬৬৬৬০৬

rumi gangopadhyay dr. gautam khastagir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy