Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ফার্স্ট স্লিপ

টনি গ্রেগকে যে কিছুতেই ভুলতে পারি না

বাইশ গজের দশ বন্ধুর গল্প। আজ পর্ব ৭। লিখছেন কিশোর ভিমানী১৯৭২ সাল। টনি লিউসের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের ভারত সফর। সেবারই প্রথম টনি গ্রেগের এ দেশে আসা। লম্বা, প্রাণোচ্ছল, সোনালি চুলের সেই টনি। সিরিজটা অবশ্য ওদের পক্ষে খুব একটা ভাল ছিল না। বেশ কয়েকজন বড় মাপের খেলোয়াড় তখন টিমের বাইরে। বয়কট, লাকহার্স্ট, এডরিচ, স্নো...। অধিনায়কের বয়স চল্লিশের ওপর। ক্যাপ্টেন না হলে অন্য কোনও জায়গায় ওকে বাছা হত কি না, যথেষ্ট সন্দেহ। তখন যাবতীয় উত্তেজনা অজিত ওয়াড়েকরকে ঘিরে। আগের বছর ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে জোড়া বিদেশ সফরে জয়ের মালিক বলে কথা! তার উপর ঘরের টিমের ক্যাপ্টেন।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:২১
Share: Save:

১৯৭২ সাল। টনি লিউসের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের ভারত সফর। সেবারই প্রথম টনি গ্রেগের এ দেশে আসা। লম্বা, প্রাণোচ্ছল, সোনালি চুলের সেই টনি।

সিরিজটা অবশ্য ওদের পক্ষে খুব একটা ভাল ছিল না। বেশ কয়েকজন বড় মাপের খেলোয়াড় তখন টিমের বাইরে। বয়কট, লাকহার্স্ট, এডরিচ, স্নো...। অধিনায়কের বয়স চল্লিশের ওপর। ক্যাপ্টেন না হলে অন্য কোনও জায়গায় ওকে বাছা হত কি না, যথেষ্ট সন্দেহ।

তখন যাবতীয় উত্তেজনা অজিত ওয়াড়েকরকে ঘিরে। আগের বছর ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে জোড়া বিদেশ সফরে জয়ের মালিক বলে কথা! তার উপর ঘরের টিমের ক্যাপ্টেন।

বরাবরের ঐতিহ্য মেনে নিউ ইয়ার্স টেস্টটা ছিল কলকাতায়। ক্রিকেট-লিখিয়ে হিসেবে ওটাই আমার প্রথম টেস্ট। দিল্লি টেস্ট জিতে অতিথি টিম ১-০ এগিয়ে ইডেনে এল।

এই শহরের নৈশজীবন তখন ঠাসা পার্টিতে জমজমাট। ক্রিকেট-পরিবেশেও হাল্কা একটা আলসেমি। সিসি অ্যান্ড এফসি-র বর্ষবরণের লেট নাইট পার্টিতে গিয়ে টনির সঙ্গে আলাপ। হাতে বিয়ার। সবার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ইডেনে তোমার টিমের সুযোগ কেমন বুঝছ? প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে টনি জবাব দিল, “আমরা ২-০ করব।”

খানিকক্ষণ আড্ডা দিলাম ওর সঙ্গে। টনি ওদের স্টার বাঁ-হাতি স্পিনার ডেরেক আন্ডারউড-এর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। আর একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম। চারপাশের মহিলা-সান্নিধ্য বেশ ভালই উপভোগ করছে টনি। তখন ক্রিকেট ‘গ্রুপি’-দের যুগ। গ্রুপি, অর্থাৎ উৎসাহী তরুণীদের এক একটা দল, যারা দেশে-বিদেশে ক্রিকেটের নেশায় ঘুরে বেড়ায়।

ম্যাচ চলছে। প্রেসবক্স থেকে প্লেয়ারদের গেস্ট এরিয়ায় চোখ পড়তে দেখি, গত রাতের পার্টিরই কয়েক জন মহিলা সেখানে বসে!

পরের তিন রাত আমাদের গন্তব্য ছিল বিভিন্ন জায়গায়। স্যাটার্ডে ক্লাব, তারপর পার্ক হোটেলের সদ্য তৈরি হওয়া ডিস্কো ‘ইন অ্যান্ড আউট’। তাছাড়া গোটাকয়েক ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান।

যে সময়ের কথা বলছি, তখন নিরাপত্তা, ম্যাচ গড়াপেটা বা অন্যান্য ঝামেলা-টামেলা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথাই ছিল না। দিনকাল যে কতটা ভাল ছিল, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!

ইংল্যান্ড টিমের সব সফরেই দেখবেন সে দেশের প্রচুর মিডিয়া হাজির হয়। এখানেও তাই হয়েছিল। তবে খেয়াল করে দেখলাম, দলের ক্যাপ্টেনকে খুব ভালবাসলেও টনিকে নিয়ে ওরা যেন একটু সতর্ক।

যাই হোক, কলকাতা টেস্টটা ভারত জিতেছিল। শেষ পর্যন্ত সিরিজটাও। টাইমস-এর খুব জনপ্রিয় একজন ক্রিকেট লিখিয়ে জন উডকক সে বার ইংল্যান্ড ফিরে যাওয়ার সময় আমাকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে কিন্তু এই টনি গ্রেগের নাম তোমরা আরও বেশি শুনতে পাবে।

এর পর গ্রেগের সঙ্গে আমার দেখা ১৯৭৬-এর গ্রীষ্মে। লর্ডস। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফর চলছে। সফরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের ‘মাথা নুইয়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সিরিজটা মোটেও টনির পক্ষে মনে রাখার মতো ছিল না। হোল্ডিং, রবার্টস, রিচার্ডস আর লয়েড মিলে ইংল্যান্ডের যাবতীয় চ্যালেঞ্জ পুরো গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকী সেই হেলমেট-পূর্ব যুগে ইংরেজদের মনে ওরা কম সন্ত্রাস ছড়ায়নি!

সন্ধেবেলা এক বন্ধুর সঙ্গে লর্ডস ট্যাভার্নে গেলাম টনির সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু যে টনিকে দেখলাম, সে মোটেও স্বভাবসিদ্ধ হাসিখুশি সেই টনি গ্রেগ নয়।

এর পর এল ছিয়াত্তরের ভারত সফর। বেশ ঘটনাবহুল। এমনকী বিতর্কিতও। জন লিভারের কারণে বিষেণ বেদী আর গ্রেগের এক প্রস্থ ঝামেলা লেগে গেল। উপলক্ষ— বলে ভেসলিন মাখানো। সেটা ছিল দিল্লিতে সিরিজের প্রথম টেস্ট।

পরের টেস্ট কলকাতায়। সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেল। দেখা গেল, গ্যালারির প্রত্যেকে যেন ওই ‘ভেসলিন’ বিতর্কের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে।

ম্যাচের আগে একটা পার্টিতে টনির সঙ্গে দেখা। ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আন্ডারউড, র্যান্ডেল আর টলচার্ড। ওটা ছিল বোর্ডেরই একটা অনুষ্ঠান।

ক্যাপ্টেন হিসেবে টনি যতটা পাত্তা পাচ্ছিল, ওর আগের কেউই ততটা পায়নি। মনে পড়ে গেল প্রিন্সেস্-এর কোন একটা পার্টিতে কেউ একজন আমাকে টনি প্রসঙ্গে বলেছিল, “ছেলেটা মহা ধড়িবাজ।”

ওর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললাম। তখন স্থানীয় কাগজে আমার টেস্ট ম্যাচ প্রিভিউয়ের প্রসঙ্গ তুলল টনি নিজেই। আমি লিখেছিলাম, ইডেন ভারতকে জিততে দেখতে চলেছে। ঠিক যেমনটা দেখেছিল চার বছর আগে। লিউইসের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। মুখ বেঁকিয়ে টনি বলল, ইডেনের ৭০ হাজারের গ্যালারি দেখবে ভারতীয়রা কী ভাবে ০-২-এ পিছিয়ে পড়ল!

খেলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখতে পেলাম এক্কেবারে নতুন, ধূর্ত এক টনি গ্রেগকে। ক্যাচ বা লেগ-বিফোরের আবেদন করছে না। সোজা বোলারের কাছে গিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরছে। বা উইকেটকিপার অ্যালান নটের হাতে হাত মেলাচ্ছে। আর তার পর অধৈর্য ভাবে আম্পায়ারের দিকে তাকাচ্ছে।

প্রথম প্রথম তো মামসা, ঘটস্কার আর রিপোর্টারের মতো আম্পায়াররা রীতিমতো বোকা বনে গিয়েছিলেন। আর বরাবরের পক্ষপাতদুষ্ট অতিথি সাংবাদিকেরা যে সব কিছুতেই একটা চক্রান্তের গন্ধ পাবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী!

তখন প্রথম বার ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে টেস্ট দেখানো হচ্ছে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে আমাকে বলা হল টনি গ্রেগের সাক্ষাৎকার নিতে।

আম্পায়ারিং বা ভারতীয় স্পিনার, কোনও কিছুরই কোনও প্রশংসা করল না টনি। উল্টে বলল, “আরে, তোমাদের কয়েক জন তরুণ বোলার খুঁজে বার করতেই হবে।” ম্যাচটা জেতা নিয়ে দেখলাম, ও প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী।

সে বার ডেরেক র্যান্ডেল স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে ওর সই করা ব্যাট পাঁচশো টাকায় বিক্রি করবে বলে ঘুরছিল, এ নিয়ে আমার লেখায় সমালোচনা করেছিলাম। ব্যাপারটা নিয়ে টনির ব্যাখ্যা শুনবেন? “তোমাদের সমর্থকদেরই তো সাহায্য করছি ভাই। ওরা আমাদের সই করা ব্যাট আর অটোগ্রাফের জন্য জ্বালাতন করে মারছে।”

পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, আমাদের দেশের কোনও ক্রিকেটার যদি লর্ডসে এ ভাবে ব্যাট বিক্রি করতে বেরোয় সেটা আয়োজকদের কেমন লাগবে? কালো মুখ করে টনির জবাব ছিল, “ওগুলো কেউ কিনবে না।”

এটাকেই কুৎসিত মন্তব্য ভেবে বসে থাকলে সত্যিই ভুল করতাম। অল্প একটু অপেক্ষা, তারপরই মেজাজ হারালে টনি যে কী করতে পারে, সেটা দেখতে পেলাম ম্যাচ শেষ হওয়ার ঠিক এক দিন আগে।

রজার টলচার্ডের সঙ্গে ছ’ঘণ্টা ব্যাট করে টনি ১৪৯ তুলেছিল। ম্যাচ রিপোর্টে তার সমালোচনা করে লিখেছিলাম, ওরা খেলাটাকে গলা টিপে মেরে ফেলছে।

সেই রাতে গ্র্যান্ড হোটেলের বারে রেসিং ড্রাইভার কিনি লালের সঙ্গে বসেছিল টনি। আমাকে দেখেই ঝাঁঝিয়ে উঠল, “তুমি ক্রিকেটের কিস্যু জানো না ভাই। তোমার কথা তোমাকেই গিলিয়ে ছাড়ব আমরা।” শুনে কিনি প্রতিবাদ করে উঠল, “ভারতীয় সাংবাদিককে এ ভাবে অপমান করতে পারো না তুমি।”

টনি যতক্ষণ না আমার কাছে ক্ষমা চাইল, ততক্ষণ ওই রেসিং ড্রাইভার ভদ্রলোক একটা সিগারেটও দেয়নি ওকে। টনি অবশ্য সে দিন ‘সরি’ বলেছিল ঠিকই, তবে যথেষ্ট অনিচ্ছার সঙ্গে।

মাদ্রাজে (তখনকার নাম) সিরিজটা ৩-০ করে দিল ইংরেজরা। ম্যাচ শেষে নিজের হোটেলের ঘরে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে টনি তখন তীব্র ব্যঙ্গাত্মক। বলল, রোলিং স্টোনসের গায়ক মিক জ্যাগার নাকি বেঙ্গালুরুর চতুর্থ টেস্টে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু এই যে ভারত হেরে গেল, এখন আর ও আসবে না।

জ্যাগার বরাবরের ক্রিকেট উৎসাহী। ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেনের বন্ধুও। তা আমি বললাম, “আহা রে, খুব খারাপ খবর। লন্ডনে আমার কলেজে তো ও আমার ক্লাসেই ছিল।” সুযোগ ছাড়ার লোকই নয় টনি। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা দিল, “ওহ! আমি তো বুঝতেই পারিনি তুমি কলেজে পড়াশোনা করেছ!”

বেঙ্গালুরু ম্যাচটা আমরা জিতে গিয়েছিলাম। টনি কিন্তু একগাদা কথার মাঝে দায়সারা ভাবে প্রায় বলেই ফেলল, সিরিজটা জিতে যাওয়ার আত্মতুষ্টিতে ওরা একটু ঢিলে দিয়ে দিয়েছিল, তাই...!

তার পরের বছরই একে একে অনেক ঘটনা। কেরি প্যাকারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল টনি। ইংল্যান্ড নেতৃত্ব হারাল। অস্ট্রেলীয় মিডিয়া টাইকুনের সঙ্গে লন্ডনের আদালতে প্রচুর সময় খরচ করল। এত কিছুর পরেও কিন্তু টনি ছিল বেশ অবিচল।

ওর সঙ্গে আবার দেখা অস্ট্রেলিয়ায়। তখন বেদির টিম ওখানে খেলছে। ও দিকে আবার ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটও চলছে।

টনির প্রাণের ইংরেজ মিডিয়া তখন তাকে নতুন নামে ডাকতে শুরু করেছে। এ ডব্লিউ গ্রেগ তখন ওদের কাছে হয়ে গিয়েছে জে এ ডব্লিউ এস গ্রেগ (পড়ুন জস গ্রেগ)। ‘জে’ মানে জুডাস ইস্কারিয়ট, যে তিরিশটা রৌপ্যমুদ্রার জন্য যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ‘জস্’ আবার হাঙরের ওপর একটা সিনেমারও নাম!

লায়ন অ্যাশিওরেন্সের (টনি গ্রেগকে যে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর করেছিলেন প্যাকার) পার্টিতে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে টনির সঙ্গে দেখা। নিজের নতুন নাম নিয়ে খুব হাসছিল টনি। মনে হল ব্যাপারটাকে ও বিশেষ পাত্তাই দিতে চায় না।

শেষ হাসিটা অবশ্য টনিই হেসেছিল। বছরখানেক পরেই প্যাকারের কাছে হার স্বীকার করে নিয়েছিল ক্রিকেট-প্রতিষ্ঠান!

বিবিসি থেকেও তখন ধারাভাষ্য দেওয়ার আমন্ত্রণ পাচ্ছে টনি। যেটাকে ওর জয়ের স্মারক বললে বোধহয় ভুল হবে না।

ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর বেশ কয়েক বার ভারতে এসেছিল টনি। পুরনো বন্ধুরা ওকে তখন উষ্ণতায় ভরিয়ে দিয়েছিল। কয়েকটা পার্টিতে আমার সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। তখন টনি অবশ্য খুব আন্তরিক।

টনির সঙ্গে আমার সম্পর্কের ক্লাইম্যাক্স বোধহয় ১৯৮৬-তে। অস্ট্রেলিয়ায়। তখন একটা বই লিখছি। যে জন্য সিডনিতে চ্যানেল নাইন কমেন্ট্রি বক্সে ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সাক্ষাৎকার তো দিলই। একসঙ্গে বসে চিল্ড বিয়ারও খেল। মজা করে জিজ্ঞেস করল, “ক্রিকেট লেখার কাজটাজ থেকে তোমাকে এখনও বের করে দেয়নি ওরা?”

বছরদুয়েক আগে টনির প্রয়াণে কম দুঃখ পাইনি। যত বিতর্কিতই হোক না কেন, ক্রিকেটের সেরা চরিত্রের অন্যতম টনি গ্রেগ। ওকে কিছুতেই ভুলতে পারি না।

অনুবাদ: প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kishore bhimani tony greig priyadarshini rakshit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE