Advertisement
E-Paper

দর্শককে জমিয়ে রাখে

‘অতিথি’ নাটকটি দেখে এসে লিখছেন মনসিজ মজুমদার।স্বপ্নালুর নাটক ‘অতিথি’ (নাটক ও পরিচালনা: প্রেমাংশু রায়) দেখে দর্শকদের মনে আসবেই দু’টি বিখ্যাত ছবি— তপন সিংহের একটি, অন্যটি সত্যজিৎ রায়ের। অচল সংসারে হঠাৎ এসে পড়ে এক অলৌকিক মুক্তিদাতা। যাকে প্রথমে মনে হয় মূর্তিমান আপদ, কিন্তু সেই অচল সংসারকে সচল করে দিয়ে যায়। এমন গল্প সত্যি হোক বা না হোক এই প্রযোজনা দর্শককে জমিয়ে রাখে আদ্যন্ত।

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৫

স্বপ্নালুর নাটক ‘অতিথি’ (নাটক ও পরিচালনা: প্রেমাংশু রায়) দেখে দর্শকদের মনে আসবেই দু’টি বিখ্যাত ছবি— তপন সিংহের একটি, অন্যটি সত্যজিৎ রায়ের। অচল সংসারে হঠাৎ এসে পড়ে এক অলৌকিক মুক্তিদাতা। যাকে প্রথমে মনে হয় মূর্তিমান আপদ, কিন্তু সেই অচল সংসারকে সচল করে দিয়ে যায়। এমন গল্প সত্যি হোক বা না হোক এই প্রযোজনা দর্শককে জমিয়ে রাখে আদ্যন্ত। নিম্নবিত্ত পরিবারে শাশুড়ি-বৌমার ঝগড়ায় কাক-চিল তিষ্ঠোতে না পারুক, দুজনের ঝাঁঝালো সংলাপে দর্শক মজে যান প্রথম থেকেই। সংসারের সংকট তুঙ্গে ওঠে যখন সঙ্গে পুলিশ নিয়ে এসে হাজির এক অধমর্ণ আগন্তুক। যত দিন না ঋণ শোধ হয়, তত দিন পুলিশের হুকুমে তিনি তাদের অতিথি। নাভিশ্বাস ওঠে সংসারের। বিরতির পর দুর্বিষহ আগন্তুক হয়ে ওঠেন মাননীয় অতিথি, যিনি সংসারের সরল সমাধানের দিশা দেখান।

বিরতির আগে এই বিশুদ্ধ প্রহসন বাস্তবে সম্ভব হলেও মঞ্চে গল্প। বিরতির পর যা ঘটে তা গল্প হলেও মঞ্চে সত্যি। বিশেষ করে যখন স্ক্রিপ্ট, অভিনয়, ও উপস্থাপনার এমন মণিকাঞ্চন যোগ ঘটে। পরিচালক প্রযোজনাকে স্পষ্ট দুটি অংশে ভাগ করেছেন। প্রথমটি বিশুদ্ধ ফার্স, বিরতির পরের অংশ ফ্যান্টাসি ও কমেডির চমৎকার মিশেল। সংলাপে ও পরিস্থিতিতে প্রহসন ও ইচ্ছাপূরণের রসদ থাকলেও এবং সুচারু মাইম নৃত্যে ফ্যান্টাসির আবহ সৃষ্টি হলেও অভিঘাতে যে বাস্তবতার আবেদন আছে তার কারণ প্রত্যেক ভূমিকায় অতি সুষ্ঠু চরিত্রানুগ অভিনয়। বাবা (প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়), মা (রুণা মুখোপাধ্যায়), ছেলে (সৌরভ পালোধি), বৌমা (মিশকা হালিম) এবং মেয়ে সুলেখা (অমিতা সেন), এমনকী একটি ভূমিকায় পূবালী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেকে পূর্ণাঙ্গ চরিত্র হয়ে উঠেছে। অবশ্য সব চেয়ে নজর কাড়া অভিনয় শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের অতিথি এবং মিশকা হালিমের মৌসুমী (বৌমা)।

দু’দশক পরে আবারও

ফুল ফেলার প্রতিবাদ

১৯৯৪-এর ২১ নভেম্বর। মুক্তাঙ্গন রঙ্গালয়ে অভিনীত হয়েছিল উৎসব দাসের এই নাটক। মঞ্চে ধর্ষণের ঘটনা এনে আঙুল তোলা হয়েছিল সমাজের অন্ধকারের সেই দিকটির উদ্দেশে। প্রশংসায় মুখর হয়েছিলেন দর্শকরাও। প্রায় দু’ দশক পরে আবারও মঞ্চে সেই নাটক, সঙ্গে বাড়তি কৌতূহলও। শুধু ধর্ষণের দৃশ্য নয়, এক মহিলার জীবনের সব হারাবার পূর্ব মুহূর্তের কিছু সংলাপে বাকরুদ্ধ হয়ে যান দর্শকরাও।

কী আছে এই নাটকে?

ফেলারাম কৃষক পরিবারের ছেলে হলেও চাষে মন নেই, সর্বক্ষণ মন পড়ে থাকে যাত্রা, পালা গানে তথা অভিনয় করার দিকে। অভিনয়টা ভালোই করে, পাঁচ গাঁয়ের লোক ফেলার অভিনয়ের প্রশংসা করে। এক গ্রামে যাত্রা করতে গিয়ে আলাপ ফুলরানির সঙ্গে এবং বিয়ে। ফেলারামের অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নকে যত্ন করে লালন-পালন করে স্ত্রী ফুলরানিও। ফেলারামকে ঘিরে সেও স্বপ্ন দেখে, বিশ্বাস করে, এক দিন মস্ত বড় অভিনেতা ফেলারাম হবেই। এমন স্ত্রী পেয়ে ফেলারামের আনন্দের সীমা নেই। ফুল-ফেলার সংসার হাসিখুশিতেই চলছে। খুশি আরও বেড়ে গেল যখন ফেলারাম জানতে পারে ফুলরানির গর্ভে তার সন্তান। সেই রাতেই পাশের গ্রামে কলকাতার যাত্রাদলের যাত্রা দেখতে যায় ফুল ও ফেলা। যাত্রা দেখে ফেরার পথে কিছু মদ্যপ চড়াও হয় ওদের উপর। ফেলারামকে গাছে বেঁধে তার সামনেই গণধর্ষণ করা হয় ফুলরানিকে। সমাজের এই কঠিন অসুখের প্রতিকার আজও হয়নি। আবারও তা দেখালেন উৎসব দাস। দু’দশক পরেও।

মঞ্চ-গান ও শেক্সপিয়র

উইলিয়ম শেক্সপিয়র (১৫৬৪-১৬১৬) পেরোলেন জন্মের সাড়ে চারশো বছর। বাঙালির নাট্যসৃজনে শেক্সপিয়রীয় ক্লাইম্যাক্স। রবীন্দ্রনাথের স্বীকার ‘নিয়েছ আসন তব সকল দিকের কেন্দ্রদেশে বিশ্বচিত্ত উদ্ভাসিয়া’। গিরিশ ঘোষের ‘মহাকবি শেকসপিয়র আদর্শ হেথায়’। গিরিশ-প্রস্তাবনা ‘অভিনেতামাত্র আমি, কবির অনুগামী...নাট্যাগারে কবিবরে করিব সম্মান’। ১৮৯৩-এ মিনার্ভা থিয়েটার শুরু হয় গিরিশ রূপান্তরে ‘ম্যাকবেথ’। মঞ্চের গানে গিরিশ লিখলেন ‘ধলা কালিস কটা লালি/ মিলে জুলে চলে আয়’।

মধুসূদন-দীনবন্ধু-গিরিশ পরম্পরায় ঠাকুরবাড়ির জ্যোতিরীন্দ্রনাথের রচনা ‘অশ্রুমতী’ আংশিক রূপ নেয় ‘ওথেলো’র। মঞ্চগানে ‘প্রেমের কথা আর বলো না’। ‘ম্যাকবেথ’-এর ডাইনি কথা রবীন্দ্র-কলমে হয় ‘দ্বিগুণ দ্বিগুণ দ্বিগুণ খেটে/ কাজ সাধি আয় সবাই জুটে’। রূপান্তরের ধারায় ‘কিং-লিয়ার’ হল দ্বিজেন্দ্রলালের ‘সাজাহান’। ‘হ্যামলেট’ হয় নগেন্দ্রনাথ চৌধুরীর ‘হরিরাজ’। চরিত্র-বদল, ভাষা-বদলে শেক্সপিয়রীয় কত কথায় ভোল পালটাল বাঙালি-যাত্রা কথকতার। স্বাধীনোত্তর ভারতেও শেক্সপিয়রীয় মঞ্চে সজীব রয়ে গেলেন উৎপল দত্ত আরও অনেকের রূপান্তরে ভিন্ন আভরণে। দু’শতকের সময়কালে রূপান্তরী মঞ্চ-গানের সংকলন অ্যাকাডেমি থিয়েটারের ‘বাংলার মঞ্চ-গান ও শেক্সপিয়র’ যেন নতুন করে পাওয়া যাবে ৭ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিতে। রচনা ও নির্মাণে দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। নজর থাকে গৌতম হালদার, দ্যুতি ঘোষ হালদার প্রমুখের ‘ওথেলো’ এবং বাংলাদেশের ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদারের ‘ম্যাকবেথ’। এ ছাড়াও ‘হ্যামলেট’ (ইংলন্ড), ‘টেমিং অফ দি শ্রু’ (আমেরিকা), ‘মার্চেন্ট অফ্ ভেনিস’ (ইতালি), ‘কিং লিয়ার’ (রাশিয়া), ‘থ্রোন অফ ব্লাড’ (জাপান) দর্শকদের বাড়তি পাওনা।

anandabazar patrika play manasij majumder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy