Advertisement
E-Paper

গুপ্তধন

চিলেকোঠার ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া ধুলোমাখা কাগজগুলো নাড়াচাড়া করতে গিয়ে আচমকাই আবিষ্কার করলেন ঠাকুর্দার শেয়ার-ডিবেঞ্চারের কাগজ। বা কোনও না-জানা জমির দলিল-পরচা। এমনটা তো হতেই পারে জানালেন অমিতাভ গুহ সরকার। চিলেকোঠার ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া ধুলোমাখা কাগজগুলো নাড়াচাড়া করতে গিয়ে আচমকাই আবিষ্কার করলেন ঠাকুর্দার শেয়ার-ডিবেঞ্চারের কাগজ। বা কোনও না-জানা জমির দলিল-পরচা। এমনটা তো হতেই পারে জানালেন অমিতাভ গুহ সরকার।

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০১:২৫

অনেক পরিবারেই গুপ্তধন রাখা থাকে। কিন্তু তারা খবর রাখে না। সেই গুপ্তধন পরিমাণে ছোট কিংবা অনেক বড় হতে পারে। তবে এর সন্ধান করতে কোনও মানচিত্র লাগে না। দরকার পড়ে না কোনও সাংকেতিক চিহ্ন বা দুর্বোধ্য সূত্রের। কারণ, এগুলো হতে পারে ব্যাঙ্কে পড়ে থাকা কয়েক হাজার কোটি টাকার দাবিহীন জমা, কোনও সংস্থায় পড়ে থাকা দাবিহীন ডিভিডেন্ড এবং আমানতের ছোট ছোট অংশ। কিংবা বহু ‘অপ্রয়োজনীয়’ জিনিসের স্তূপের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বাপ-ঠাকুর্দার আমলের শেয়ার, ডিবেঞ্চারের কাগজ। একটু উদ্যোগী হলে এবং কিছুটা সময় খরচ করলে খুঁজে বার করা যায় ওই সমস্ত হিরে-জহরত।

আসে কোথা থেকে

আপনার নিজের বা আগের কোনও প্রজন্মের সচেতনতার অভাব, ভুল বা নেহাতই কোনও ঘটনার আকস্মিকতা এই সব কিছুই গুপ্তধনের উৎস হতে পারে। কিন্তু কারণ যা-ই হোক, সেটা উদ্ধার করতে পারলে আপনার ঝুলি ভরবে নিশ্চিত।

• অনেকেই তাঁদের আর্থিক সম্পদের বিবরণ পরিবারের কাউকে জানান না। হয়তো নিজের মতো করে লিখে রাখেন কোনও এক জায়গায়। অনেকে আবার লিখেও রাখেন না। তাঁদের লগ্নি সংক্রান্ত সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র মিশে থাকে অন্যান্য কাগজের সঙ্গে। কেউ জানতেও পারেন না। এই ধরনের মানুষের মৃত্যুর পর, তাঁর জমানো এই সব টাকা গুপ্তধনের আকার নেয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো পুরনো কাগজের সঙ্গে বিক্রিও হয়ে যায় এই সব মূল্যবান কাগজ। অতএব সাবাধান!

• কর্মসূত্রে বা নেহাতই সঞ্চয়ের কারণে অনেকেই একাধিক ব্যাঙ্ক আ্যাকাউন্ট খোলেন। কিন্তু পরে ব্যবহার করেন মাত্র একটি বা দু’টি। অন্যগুলি পড়ে থাকে কোনও লেনদেন ছাড়াই। ফলে মর্যাদা পায় ‘ইনঅপারেটিভ’ অ্যাকাউন্ট হিসেবে। তবে ঘটনা হল, বেখেয়ালে ওই সব অ্যাকাউন্টে রয়ে যেতে পারে টাকাও। কাগজের স্তূপে খুঁজে দেখতে হবে এই সব অ্যাকাউন্টের পাসবুক।

• বহু বনেদি পরিবারে অতীতে শেয়ারে লগ্নি করার রেওয়াজ ছিল। পরে হয়তো তাঁদের সন্তানেরা এই সব ব্যাপারে বিশেষ মাথা ঘামাননি। অথচ সেগুলির মূল্য বেড়েছে বই কমেনি। কে বলতে পারে, সেই সব কোম্পানির কাগজ এখনও হয়তো অবহেলিত ভাবে পড়ে আছে পুরনো দেরাজে!

• অনেকেই বিভিন্ন সময়ে অন্যের কথায় কিছু না-জেনেই শেয়ার ও বিভিন্ন লগ্নিপত্রে টাকা ঢেলে থাকেন। পরে বুঝতে পারেন না এ সব নিয়ে ঠিক কী করতে হবে। এই সব লগ্নির মূল্য অনেক সময়ে অজান্তেই বেড়ে ওঠে। তৈরি হয় গুপ্তধন। খুঁজে বার করতে হবে এই সব মূল্যবান কাগজ। উদ্ধার করতে হবে লুকিয়ে থাকা ধন-সম্পদ।

• হয়তো ঠিকানা বদল করেছেন। কিন্তু যে সব জায়গায় লগ্নি করেছেন তাদের জানাননি। ফলে বন্ধ হয়েছে সুদ এবং ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট আসা। আসছে না বোনাস শেয়ারের মতো মূল্যবান কাগজও। আর আপনার অজান্তে জমে উঠছে গুপ্তধন। এই ধন উদ্ধারের জন্য চিঠি লিখতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিতে। জানাতে হবে নতুন ঠিকানা।

• কোনও ব্যাঙ্কে জমা, বিমা অথবা অন্যান্য লগ্নিপত্রে হয়তো আপনাকে নমিনি করা আছে যা আপনার জানাই নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর পর আপনিই সেই সম্পদ বা বিমার উত্তরাধিকারী। একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনি এমন কোনও গুপ্তধনের মালিক হননি তো!

• আপনার ফাইলে হয়তো কিছু পুরনো শেয়ার সার্টিফিকেট বা ফান্ডের ইউনিট আছে। পাড়ার ব্রোকারের থেকে খোঁজ নিয়ে জানলেন ওই সব নামে কোনও সংস্থা অথবা মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প নেই। তবে আর একটু গভীরে গেলে হয়তো দেখতে পাবেন, কোনও কোনও সংস্থার নাম পরিবর্তন হয়েছে অথবা একত্রিত হয়েছে অন্য কোম্পানির সঙ্গে। একই জিনিস ঘটে থাকতে পারে ফান্ডেও। নেট ঘেঁটেও অনেক সময় পাওয়া যায় পুরনো সংস্থা বা প্রকল্পের নয়া নাম। সতর্ক থাকুন।

• আপনার যতগুলি সেভিংস অ্যাকাউন্ট আছে তার সব ক’টির পাসবই বা সাম্প্রতিক স্টেটমেন্ট নিয়ে বসুন। অ্যাকাউন্টগুলিতে পড়ে থাকা টাকার অঙ্ক যোগ করলে হয়তো চমকে উঠবেন মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এতগুলো টাকা পড়ে আছে দেখে। এটাও আপনার গুপ্তধন। উপযুক্ত জায়গায় রাখুন। দেখবেন আরও বেড়ে উঠবে।

• একটু নিজের জমে থাকা কাগজপত্র ঘেঁটে দেখুন। হয়তো পুরনো জীবন বিমা পলিসির মেয়াদ বহু দিন আগেই শেষ হয়েছে। বোনাস-সহ জমা টাকা তোলা হয়নি। একই জিনিস হতে পারে ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যাপারেও।

অতএব...

মোদ্দা কথা হল, গুপ্তধন আমাদের সকলের বাড়িতেই থাকতে পারে। আন্তরিক ভাবে একটু পরিশ্রম করলেই গুপ্তধন উদ্ধার হতে পারে। সাবধান হতে হবে পুরনো কাগজ বিক্রির সময়। যদি পড়ে মাথা-মুণ্ডু কিছু বোঝা না-যায়, তা হলে উদ্ধারের জন্য বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হতে হবে। দৌড়ঝাঁপ করতে হবে বলে থেমে গেলে চলবে না। খুব বেশি হলে, কয়েকটি দফতরে দেখা করতে হবে এবং কিছু চিঠি বিনিময় করতে হবে। আপনিই যে উত্তরাধিকারী তার প্রমাণ দিতে হবে কাগজপত্র তৈরি করে। এইটুকুই তো কাজ। এই পরিশ্রমে হাতে আসতে পারে বড় সম্পদ।

সোনার ঘড়াকে মাটির তলাতেই থাকতে হবে এমন কথা নেই। সোনা হয়তো লুকিয়ে আছে আপনার হাতের কাছেই। যা উদ্ধারের আনন্দই আলাদা।

পরামর্শদাতা বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

bisoy asoy amitava guha sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy