All need to know about Mansa Musa, Ruler of African country Mali and once richest man in the world dgtl
Lost Treasure of Mansa Musa
হাতে ছিল সোনার ভান্ডার, বিলিয়ে বিপদ ডেকে আনেন প্রতিবেশী দেশে! এখনও মাটির নীচে লুকিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনীর সম্পত্তি?
সিংহাসনে বসার আগে মানসার নাম ছিল মুসা কেইটা-১। ১৩১২ সালে মালির সিংহাসনে বসেন তিনি। রাজা হওয়ার পর তাঁর নাম পাল্টে করা হয় মানসা মুসা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:১১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে? নিশ্চয়ই বলবেন আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্ক। আজকের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরটা ভুল না হলেও সর্বকালের সেরা ধনীদের তালিকার শীর্ষে যাঁকে বসানো যেতে পারে তিনি একজন রাজা।
০২২২
সম্পত্তির নিরিখে ইতিহাসের অন্য কোনও রাজা তাঁকে ছুঁতে পারেননি কখনও। কথা হচ্ছে মানসা মুসাকে নিয়ে। সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত মানসার সম্পত্তির পরিমাণ নাকি ছিল ৪০ হাজার কোটি ডলার। তা-ও ৭০০ বছর আগে।
০৩২২
আফ্রিকার দেশ মালির রাজা ছিলেন মানসা। বিশ্বাস হচ্ছে না নিশ্চয়ই? নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন এই ভেবে যে, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম গরিব দেশ মালির রাজা একসময় এত বিত্তশালী ছিলেন!
০৪২২
১২৮০ সালে মালির শাসক পরিবারে মানসার জন্ম। তাঁর দাদা মানসা আবু-বকর ১৩১২ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। ১৩১২ সালে আটলান্টিক সমুদ্রযাত্রায় গিয়েছিলেন আবু-বকর। ২০০০ জাহাজ, হাজার হাজার সেনা, মহিলা এবং দাসের বিশাল বহর নিয়ে অভিযানে গিয়েছিলেন তিনি।
০৫২২
তবে সেই সমুদ্রযাত্রা শেষ করে আর কখনও ফিরে আসেননি আবু-বকর। রহস্যময় ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। ইভান ভ্যান সার্টিমার মতো ইতিহাসবিদদের মতে, ভ্রমণ করতে করতে দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছে গিয়েছিলেন আবু-বকর। কিন্তু এই দাবির সমর্থনে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
০৬২২
আবু-বকর নিখোঁজ হওয়ার পরেই মালির শাসনভার কাঁধে তুলে নেন মানসা। সিংহাসনে বসার আগে মানসার নাম ছিল মুসা কেইটা-১। ১৩১২ সালে মালির সিংহাসনে বসেন তিনি। রাজা হওয়ার পর তাঁর নাম পাল্টে করা হয় মানসা মুসা।
০৭২২
আফ্রিকার মালির মতো এত গরিব দেশের রাজা কী ভাবে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন? ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, সে সময়কার পরিস্থিতি ছিল বর্তমান কালের ঠিক উল্টো। আফ্রিকা তখন ফুলেফেঁপে উঠেছে।
০৮২২
কারণ, মালি সাম্রাজ্য তখন মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। প্রকৃত অর্থেই সোনা ফলত মালির মাটিতে। আর সেই সোনাই মানসাকে সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল।
০৯২২
প্রচুর সোনার খনি রয়েছে মালিতে। মানসা মুসাই প্রথম এই খনির সন্ধান পান। ক্ষমতায় আসার পর নিজের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন মুসা।
১০২২
জানা যায়, টিম্বাকটু-সহ মোট ২৪টি শহর দখল করেছিলেন মানসা। ২০০০ মাইলেরও বেশি বিস্তৃত ছিল তাঁর সাম্রাজ্য। সেনেগাল, গাম্বিয়া, বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজ়েরিয়ার উপরও নাকি আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন মানসা।
১১২২
সোনার পাশাপাশি লবণের ব্যবসা করেও নাকি প্রচুর সম্পত্তি করেছিলেন মানসা। ইতিহাসবিদদের মতে, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ এত ছিল যে, ভবিষ্যতেও তা সহজে ছুঁতে পারা অসম্ভব।
১২২২
মানসার নেতৃত্বে মালি বিশ্বের অন্যতম ধনী এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এ-ও মনে করা হয়, সে সময় বিশ্বের অর্ধেক সোনার সরবরাহ এবং বাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটিয়েছিলেন তিনি।
১৩২২
ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, সম্পত্তির বাইরে শিক্ষা এবং স্থাপত্যক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করেছিলেন মানসা। মালির ঐতিহাসিক শহর টিম্বাকটুকে একটি বিশ্বব্যাপী শিক্ষার কেন্দ্রেও নাকি রূপান্তরিত করেছিলেন তিনি। মানসার রাজত্বকালকে আফ্রিকার সম্পদ, সংস্কৃতি এবং পাণ্ডিত্যের স্বর্ণযুগের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
১৪২২
ইতিহাসবিদদের মতে, ১৩২৪ সালে মুসা মক্কা যাত্রা করেন। ৪ হাজার মাইলের এই যাত্রা ছিল আড়ম্বরপূর্ণ। অফুরন্ত ধনদৌলতের সঙ্গে নিয়েছিলেন বিশাল বাহিনীকে। কয়েক হাজার সেনা, ক্রীতদাস এবং প্রজাদের।
১৫২২
মানসা মুসার সামনে ছিল ৫০০ সেনা, যাঁরা শুধুমাত্র সোনা বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সোনা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজে লাগানো হয় উট এবং ঘোড়াদেরও।
১৬২২
যাত্রাপথের বিভিন্ন জায়গায় ওই সোনা দান করেছিলেন মুসা। ইতিহাসবিদদের দাবি, মিশরের কায়রোয় তিনি এত সোনা দান করেছিলেন যে ভয়ঙ্কর মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছিল। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগেছিল।
১৭২২
কিংবদন্তি অনুযায়ী মক্কায় তীর্থযাত্রা থেকে ফেরার পথে আফ্রিকার কোথাও এক বিশাল সোনার ভান্ডার লুকিয়ে মালি ফিরেছিলেন মানসা। যদি কখনও বিপদে পড়েন বা রাজ্যের প্রয়োজন পড়ে তখন তিনি সেই সোনা কাজে লাগাবেন বলেই নাকি সেই সোনা তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন।
১৮২২
কিন্তু সেই সোনা নাকি কখনও ওই জায়গা থেকে তুলে আনা হয়নি। আফ্রিকার কোথায় সেই সোনা রয়েছে তা-ও নাকি অজানাই রয়ে গিয়েছে। মনে করা হয়, সোনা খুঁজে বার করার জন্য একটি ধাঁধা তৈরি করেছিলেন মানসা।
১৯২২
৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বর্ণরহস্যের সমাধান করতে পারেননি কেউ। মানসার কোটি কোটি টাকার সোনা নাকি থেকে গিয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালেই।
২০২২
১৩৩৭ সালে মানসা মুসা মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র মেঘান-১ রাজা হন। মেঘান-১ও নাকি বাবার সোনার খোঁজ পাননি বলে মনে করা হয়।
২১২২
১৩৩৭ সালে মৃত্যুর সময় মানসার বয়স ছিল ৫৭ বছর। মানসার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্রেরা সাম্রাজ্যকে একত্রে ধরে রাখতে অক্ষম হন। ফলে সেই সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে ধীরে ধীরে। ছোট ছোট রাজ্যগুলি ভেঙে যায়। পরবর্তী কালে আফ্রিকার ওই অঞ্চলে ইউরোপীয়দের আগমনের কারণে মানসার গড়ে তোলা সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
২২২২
১৩৭৫ সালের তৈরি একটি কাতালান অ্যাটলাস মানচিত্র আবিষ্কারের পর দেখা যায়, সেই মানচিত্রে আফ্রিকার এক রাজার ছবি আঁকা রয়েছে। টিম্বাকটুতে একটি সোনার সিংহাসনে বসে রয়েছেন তিনি। হাতেও সোনার টুকরো ধরা। মনে করা হয় ওই রাজা আর কেউ নন, স্বয়ং মানসা।