Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Donald Trump on Iran

বিলাসবহুল পণ্য কেনাকাটা নিষিদ্ধ, ঘরে ডেকে ইরানি কূটনীতিকদের পায়ে ‘বেড়ি’ পরিয়ে চরম অপমান ট্রাম্পের!

আমেরিকার বাজার থেকে পণ্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইরানি কূটনীতিকদের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে তেহরান।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৫
Share: Save:
০১ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

এ যেন নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনে চরম অপমান! রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বৈঠক চলাকালীন ‘পয়লা নম্বর শত্রু’ ইরানের সঙ্গে এই ব্যবহারই করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তেহরানের কূটনীতিকদের কেনাকাটার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে বেজায় ক্ষুব্ধ সাবেক পারস্য দেশ। এর প্রভাব অচিরেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশ।

০২ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ইরানি কূটনীতিকদের নিয়ে বিশেষ বিধিনিষেধ প্রকাশ করে আমেরিকার ‘ফেডারেল রেজিস্টার’। সেখানে বলা হয়েছে কস্টকো, স্যাম্স ক্লাব ও বিজে’স হোলসেল ক্লাব-সহ যে কোনও পাইকারি খুচরো বিক্রেতাদের থেকে পণ্য কিনতে পারবেন না তাঁরা। এই ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে আগাম অনুমোদন নিতে হবে তাঁদের। নতুন নিয়মটি তেহরানের কূটনীতিকদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

০৩ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

‘ফেডারেল রেজিস্টার’-এর জারি করা বিধিনিষেধে ইরানি কূটনীতিকদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রে বিশেষ একটি শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে কোনও রকমের ‘বিলাসবহুল’ পণ্য কিনতে পারবেন না তাঁরা। বছরের পর বছর ধরে এই সুবিধা উপভোগ করছিলেন তেহরানের কূটনীতিকদের পরিবারের সদস্যেরা। তাঁদের জন্য এই নতুন নিয়ম সারা বছর ধরেই প্রযোজ্য হবে বলে স্পষ্ট করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

০৪ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

গত ২২ সেপ্টেম্বর এই ইস্যুতে বিবৃতি দেয় মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি, ‘‘চরম দারিদ্র, ভেঙে পড়া পরিকাঠামো, জল ও বিদ্যুতের তীব্র অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ইরানের সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় তেহরানের ধর্মীয় নেতা এবং শাসক দলের গুটি কয়েক ব্যক্তিকে আমরা নিউ ইয়র্কের বিলাসবহুল সামগ্রী কেনার সুযোগ দিতে পারি না। সেই কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’’

০৫ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

সাধারণত রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠক থাকলে ইরানি কূটনীতিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ঢল দেখতে পাওয়া যায়। এত দিন পর্যন্ত সরকারি কাজকর্ম শেষ হলেই নিউ ইয়র্কের পাইকারি খুচরো বিপণিগুলিতে ভিড় জমাতেন তাঁরা। দামি টেলিভিশন, ঘড়ি, গয়না, হ্যান্ডব্যাগ, সুগন্ধি, তামাক, মদ এমনকি গাড়ির মতো বিলাসবহুল সামগ্রী কেনার দিকে ঝোঁক থাকত তাঁদের। এ বার থেকে ওই ধরনের সামগ্রী কিনতে হলে ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদন নিতে হবে তাঁদের।

০৬ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

পারস্য উপসাগরের কোলের দেশটির উপর দীর্ঘ দিন ধরেই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রেখেছে আমেরিকা। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে একরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তেহরানের। নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু সামগ্রীই সেখানকার বাজারে উপলব্ধ নয়। এর জেরে সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলি যুক্তরাষ্ট্রের পাইকারি খুচরো বাজারগুলি থেকে কিনছিলেন সেখানকার কূটনীতিকেরা। নজিরবিহীন ভাবে সেটা এ বার পুরোপুরি বন্ধ করার রাস্তায় হাঁটলেন ট্রাম্প।

০৭ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইরানি কূটনীতিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাজার ডলারের বেশি মূল্যের বিলাসবহুল পণ্য বা ৬০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের কোনও গাড়ি কিনতে হলে আমেরিকার সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এটি খুব সহজে মিলবে বলে মনে করছেন না কেউই। এ ছাড়া রাশিয়া ও চিনের পাশাপাশি তেহরানের ক্ষেত্রে ভিসা নীতিকে ট্রাম্প আরও কঠোর করতে চলেছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

০৮ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

যুক্তরাষ্ট্রের এ-হেন পদক্ষেপের পর পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন ইরানি বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই। তাঁর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার আয়োজক দেশ হিসাবে আমেরিকার এই আচরণ অপ্রত্যাশিত।’’ উল্লেখ্য, তেহরানের কূটনীতিকদের উপর দীর্ঘ দিন ধরেই নানা ধরনের বিধিনিষেধ জারি রেখেছে ওয়াশিংটন। ২০১৯ সালে ম্যানহাটনে রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতর সংলগ্ন এলাকা, কেনেডি বিমানবন্দর, এমনকি পারস্য দেশের দূতাবাসের বাইরে তাঁদের ঘোরাঘুরির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন প্রশাসন।

০৯ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

২০১৯ সালে মার্কিন সফরে গিয়ে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ইরানের সাবেক বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জ়াফরি। নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। ওই সময় সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তেহরানের রাষ্ট্রদূত। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র তাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়। ফলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালটিতে যেতে পারেননি জাভেদ জ়াফরি। তড়িঘ়ড়ি দেশে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। প্রথম দফায় ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন এই ঘটনা ঘটেছিল।

১০ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানকে কোণঠাসা করতে তাদের চাবাহার সমুদ্র বন্দরকে নিশানা করেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট। সংশ্লিষ্ট সমুদ্র বন্দরটি ব্যবহার করলে বিশ্বের অন্য দেশগুলিকে জরিমানা দিতে হবে বলে ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে সেই নীতি কার্যকর করবে আমেরিকা। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মার্কিন বিদেশ দফতর জানিয়েছে, তেহরানের অবৈধ আর্থিক পরিকাঠামো ভাঙতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

১১ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ইরানের পাশাপাশি আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ছে ভারতও। কারণ, সংশ্লিষ্ট সমুদ্রবন্দরটি পরিচালনার জন্য তেহরানের একটি সংস্থার সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি। বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত কারণে চাবাহার কেন্দ্র নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এত দিন সাবেক পারস্য দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ওই এলাকাটিকে তার আওতার বাইরে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্ষীয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে চাবাহার ব্যবহার করলে ওয়াশিংটনকে দিতে হবে জরিমানা।

১২ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে ইরান ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কোনও রাস্তা নেই। সেই লক্ষ্যে তেহরানকে ২০০৩ সালে চাবাহার বন্দর নতুন করে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয় নয়াদিল্লি। এই নিয়ে বেশ কয়েক দফায় আলোচনার পর বিষয়টিতে রাজি হয় সাবেক পারস্য দেশের শিয়া সরকার। গত বছরের ১৩ মে সংশ্লিষ্ট বন্দরটি পরিচালনার জন্য ১০ বছরের চুক্তিতে সই করে দু’পক্ষ।

১৩ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

দক্ষিণ ইরানের চাবাহার থেকে পাকিস্তানের বালোচিস্তান প্রদেশের গ্বদর বন্দরের দূরত্ব মেরেকেটে ১৪০ কিলোমিটার। বর্তমানে এটি নিয়ন্ত্রণ করছে বেজিং। বিশেষজ্ঞদের কথায়, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির জেরে চাবাহারের উপরে ভারত নিয়ন্ত্রণ হারালে আরব সাগরে বাড়বে চিনের আধিপত্য। জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে বিষয়টি নয়াদিল্লির কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের।

১৪ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

গত জুনে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচি ভেস্তে দিতে সে দেশের তিনটি আণবিক কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করে মার্কিন বিমানবাহিনী। তাঁদের ওই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’। এর জন্য কৌশলগত স্টেল্‌থ বোমারু বিমান ‘বি-২ স্পিরিট’কে নামিয়েছিল ওয়াশিংটন। সাবেক পারস্য দেশের ফোরডো, নাতান্‌জ় এবং ইসফাহানে সফল হামলা চালিয়ে নির্বিঘ্নে ঘাঁটিতে ফিরে আসে সেগুলি।

১৫ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

সূত্রের খবর, ইরানি পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে মোট ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ৩০টি ‘টোমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ওই তিন আণবিক কেন্দ্রকে নিশানা করে মার্কিন বায়ুসেনা। তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রগুলি ভূগর্ভস্থ হওয়ায় ‘জিবিইউ-৫৭’ সিরিজ়ের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমাও সেখানে ফেলে আমেরিকা। অভিযান শেষে পারস্য উপসাগরের কোলের শিয়া মুলুকটি আর কখনওই পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে না বলে বিবৃতি দেন ট্রাম্প।

১৬ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১০৩৯-’৪৫) পর ইরানের সঙ্গে যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক ছিল আমেরিকার। ১৯৭৯ সালে ‘ইসলামীয় বিপ্লব’-এর জেরে আমূল বদলে যায় পরিস্থিতি। তেহরানে পতন হয় মহম্মদ রেজ়া শাহ পাহলভির রাজবংশের। সেই জায়গায় ক্ষমতা দখল করেন কট্টরপন্থী শিয়া ‘ধর্মগুরু’ আয়াতোল্লা রোহেল্লা খামেনেই। কুর্সিতে বসেই প্রবল মার্কিন বিরোধিতা শুরু করেন তিনি। সেই সময় থেকেই দু’তরফে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে।

১৭ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

বিপ্লব পরবর্তী খামেনেই সরকারকে কখনওই মানতে পারেনি ওয়াশিংটন। কারণ, পশ্চিমি প্রভাব মুক্ত সরকার তৈরি করতে সক্ষম হন তিনি। পাশাপাশি তাঁর সময় থেকেই কমিউনিস্ট রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করতে থাকে তেহরান। ১৯৮৯ সালে ইরানের ‘সর্বোচ্চ নেতা’র (সুপ্রিম লিডার) পদ পান আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। আমেরিকা ও ইজ়রায়েলকে নিয়ে বহু বার বিষোদ্গার করেছেন তিনি। ওই দুই দেশকে বড় ও ছোট ‘শয়তান’ বলে মনে করেন পারস্য দেশের ওই কট্টরপন্থী শিয়া ধর্মগুরু।

১৮ ১৮
Donald Trump administration bars on luxury shopping of Iranian diplomats

এই পরিস্থিতিতে ইরানি কূটনীতিকদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সংঘাতের আগুনে ঘি ঢালল বলেই মনে করছেন সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ। এর জেরে মস্কো ও বেজিঙের আরও কাছাকাছি যেতে পারে তেহরান। বর্তমানে তাদের অপরিশোধিত খনিজ তেলের সর্বাধিক বড় ক্রেতা হল চিন। এই দু’টি দেশের কূটনীতিকদের উপরেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy