রকেটগতি থামার লক্ষণ নেই! সোনায় বিনিয়োগ কি বুদ্‌বুদের মতো? ফাটলেই দাম কমবে হু হু করে, কী মত বিশেষজ্ঞের

অনিশ্চয়তা যত বাড়ে, সোনার দামও তত বাড়ে। কারণ সোনা যে কোনও বাজারেই বিক্রি করা যায়। দেশের সীমায় তা আটকানো যায় না। আর আজ কিনে রাখলে ১০০ বছর পরেও তা বিক্রি করা যাবে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে বুদ্‌বুদ ফেটে গেলে দাম ৪০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আবার অনেকে মনে করছেন দীর্ঘমেয়াদে সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

তাই বাজারে সোনার দামের গতিবিধিকে বহু দিন ধরেই অনিশ্চয়তার একটি আপাত সূচক হিসাবে দেখা হয়। তবে এটাও বাস্তব যে খুব কম কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সোনার কিন্তু কোনও ব্যবহারমূল্য নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সোনার কোনও প্রয়োজনই নেই।

ভারতে সোনার দাম করসমেত প্রথম বার লাখ টাকা পেরিয়েছিল চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপরে শুল্ক চাপাচ্ছেন। অন্যান্য দেশও তার পাল্টা দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলেছে। বাণিজ্য-যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। অস্থির বাজারে পড়ে চলেছে শেয়ার সূচক। এই অবস্থায় নিরাপদ লগ্নির গন্তব্য হিসেবে বরাবরই সোনার চাহিদা থাকে। আর সেই চাহিদার হাত ধরেই বিশ্ববাজারে বাড়ছে সোনার দাম। এর প্রভাব পড়ছে ভারতেও।

কিছু বিশেষজ্ঞ আবার আরও দ্রুত সোনার দাম দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকায় পৌঁছোবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাঁদের দাবি, আগামী ছ’বছরের মধ্যেই এটা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এর নেপথ্য কারণ হিসাবে একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। প্রথম কারণ হল ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে যুদ্ধের দামামা থামার লক্ষণ নেই। অন্য দিকে ট্রাম্প-শুল্কের জেরে অস্থির শেয়ার বাজার। আমেরিকায় সুদ কমলে বন্ড-সহ সুদভিত্তিক লগ্নির টানও কমছে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ (স্পেশ্যাল মিলিটারি অপারেশন) চালাচ্ছে রাশিয়া। অন্য দিকে ২০২৩ সাল থেকে গত দেড় বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় ইজ়রায়েলের সঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ লড়েছে হামাস, হিজ়বুল্লা, হুথি এবং ইরান। ইতিহাসের নথি বলছে, যে যে বছরে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেই সেই বছরগুলিতে সোনার দাম চড়তে শুরু করেছে।

) গত ২০ বছরে সোনার দাম ১৫ গুণ বেড়েছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে হলুদ ধাতুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তার পর থেকে এটি ধারাবাহিক ভাবে সর্বকালের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে গিয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে অনেকেই সোনাকে ‘নিখুঁত সময়ে নিখুঁত বিনিয়োগ’ হিসাবে দেখেন। গত কয়েক বছর ধরে এর বিনিয়োগে দুর্দান্ত লাভের প্রভাবের কারণে ধাতুটির প্রতি আগ্রহ বেশি বাড়ছে।

সোনাকে এককালীন বিনিয়োগের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি এসআইপি হিসাবে বিবেচনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞেরা। তাই সোনায় বিনিয়োগের কৌশল পরিবর্তন করে বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে ভালো। স্টক বা রিয়্যাল এস্টেটের তুলনায় সোনা খুব কম বিক্রি হয়। ভারতে বেশির ভাগ পরিবার নগদ অর্থের জন্য সোনা বিক্রি করতে চান না। এই প্রবণতা সোনাকে একটি নির্ভরযোগ্য টেকসই সম্পদ করে তোলে।