India's passenger vehicle market surged in September 2025, driven by festive demand and GST dgtl
GST 2.0 impact on car sale
উৎসবের আবহ, সঙ্গে জিএসটির সঙ্গত, টানা মন্দার পর গাড়ি বিক্রির ঢল! কতটা লাভের মুখ দেখল মারুতি, টাটা, মাহিন্দ্রা, হুন্ডাইরা?
যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি প্রত্যাশিতই ছিল। তার উপরে যোগ হয়েছে উৎসবের মরসুমের স্বাভাবিক চাহিদা। তবে গত বছরে গাড়ির বাজারে যে ভাটার টান ছিল, সেই ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে এ বারের বিক্রির বৃদ্ধি কতটা ক্ষতিপূরণ করতে পারবে সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গাড়িশিল্পের সঙ্গে যু্ক্ত ব্যক্তিরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
উৎসবের মরসুম সঙ্গে জিএসটিতে বেশ বড় অঙ্কের ছাড়। দুইয়ের যুগলবন্দিতে গাড়িশিল্প কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখে উঠতে পারল। জিএসটি ২.০ কাঠামোয় পরিবর্তনের ফলে গাড়িশিল্পের করকাঠামোয় পরিবর্তন এসেছিল। তাই প্রত্যাশা ছিলই। তাকে সত্যি প্রমাণ করে দিল উৎসবের মাস। দেশের প্রায় সব ক’টি প্রথম সারির গাড়িনির্মাতা সংস্থার বিক্রি বেড়েছে অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে।
০২১৮
বিক্রি বেড়েছে মারুতি সুজ়ুকি ইন্ডিয়া, হুন্ডাই, টাটা মোটরসের মতো গাড়ি সংস্থার। নবরাত্রি ও দশেরার আগে শোরুম থেকে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে অধিকাংশ সংস্থার। গত ৩ সেপ্টেম্বরের দীর্ঘমেয়াদি বৈঠকের পর নতুন জিএসটি হার ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন জিএসটি হার কার্যকর করার কথা ঘোষণা করা হয়। ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে করের পরিমাণ একধাক্কায় ১০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়।
০৩১৮
সারা বছর ব্যবসা যতই মন্দা হোক, উৎসবের মরসুমে বরাবর বিক্রি বাড়তে দেখেছে গাড়িশিল্প। সেই প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে কয়েক বছরের পরিসংখ্যান। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যানে প্রকাশিত, লাখ লাখ গাড়ি মজুত হয়ে পড়েছিল শোরুমেই। মূলত গাড়ির দাম বৃদ্ধির কারণেই ছোট গাড়ির চাহিদা ঝিমিয়ে পড়েছে। জিএসটির পরিমাণ কমতেই স্বাভাবিক ভাবে গ্রাহকদের পছন্দের তালিকার উপরের দিকে থাকা গাড়িগুলির দাম কমেছে।
০৪১৮
নতুন কাঠামোয় সোজাসুজি ১০ শতাংশ কমে গিয়ে মোট ১৮ শতাংশ কর দিতে হবে ২০০ সিসির ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন এবং ৪ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের ছোট পেট্রল, এলপিজি ও সিএনজি গাড়িগুলিকে। ১৫০০ সিসি বা তার কম ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ৪ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের ছোট ডিজ়েল গাড়িগুলির ক্ষেত্রেও একই কর প্রযোজ্য ভারতীয় গাড়ির বাজারের মেরুদণ্ড হিসাবে ধরা হয় ছোট গাড়িগুলিকে। সেই গাড়ির দাম কমতেই গাড়ির বাজার আবার চাঙ্গা হতে চলেছে বলে আশাবাদী হয়েছিলেন ডিলার ও গাড়িবিক্রেতা সংস্থারা।
০৫১৮
যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি প্রত্যাশিতই ছিল। তার উপরে যোগ হয়েছে উৎসবের মরসুমের স্বাভাবিক চাহিদা। তবে গত বছরে গাড়ির বাজারে যে ভাটার টান ছিল, সেই ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে এ বারের বিক্রি বৃদ্ধি কতটা ক্ষতিপূরণ করতে পারবে সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গাড়িশিল্পের সঙ্গে যু্ক্ত ব্যক্তিরা। দুর্গাপুজো, নবরাত্রি ও দশেরা পেরিয়ে গাড়ি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে বলে দাবি করেছে নির্মাতা সংস্থাগুলি।
০৬১৮
ভারতের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও বহুলবিক্রিত গাড়ি হিসাবে বরাবরই ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে মারুতি। জিসএটিতে ছাড় পাওয়ার পরই মারুতির গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের বিক্রি হওয়া গাড়ির সংখ্যার ভিত্তিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে মারুতি সুজ়ুকি। সেপ্টেম্বর মাসে সংস্থার অভ্যন্তরীণ গাড়ি বিক্রি ও রফতানি মিলিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৬৫টিতে। নবরাত্রির মাসের প্রথম সপ্তাহে উৎসব উপলক্ষে গাড়ি ডেলিভারির সংখ্যা ১.৬৫ লক্ষ ইউনিট পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
০৭১৮
গত বছরের তুলনায় দেশীয় বাজারে গাড়ির চাহিদা কমলেও ২০২৫ সালে সেপ্টেম্বরে রফতানি সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেই সংখ্যাটা কিছুটা বেড়েছে। চলতি বছরের অগস্টে মারুতি ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৯০৭টি গাড়ি বিক্রি করে। এক মাসের তফাতে রফতানি ও গাড়ি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। জিএসটি হার কমানোর পর সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে নতুন বুকিং দ্বিগুণ হয়েছে।
০৮১৮
তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর যাত্রিবাহী গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৯৯টি। এ বছর তা কমে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৬১টিতে দাঁড়িয়েছে। মূল কারণ হল সংস্থার ইউটিলিটি ভেহিকেল বিক্রিতে তীব্র মন্দা দেখা দিয়েছে। ভারী ও মাঝারি বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি কমেছে। আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়লে এগুলির বিক্রিও বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
০৯১৮
অগস্টে মারুতির ইউভি মডেলগুলির বিক্রি কমে ৪৮,৬৯৫ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ছিল সেই সংখ্যা ছিল ৬১,৫৪৯টি। তবে, রফতানি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ফলে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৪২,২০৪ ইউনিট গাড়ি রফতানি করা হয়েছে, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ২৭ হাজার ৭২৮ ইউনিট।
১০১৮
দেশের মধ্যে টাটা মোটরস ৫৯ হাজার ৬৬৭টি যাত্রিবাহী গাড়ি বিক্রি করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। উৎসবের মাসে এটাই দেশীয় গাড়িনির্মাতা সংস্থা সর্বোচ্চ মাসিক বিক্রি। বিক্রির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪৭% বার্ষিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক বিক্রিত এসইউভিগুলির মধ্যে একটি হল টাটা নিক্সন। শুধুমাত্র নিক্সন কমপ্যাক্টের মতো এসইউভি ২২ হাজার ৫০০ ইউনিট বিক্রি হয়েছে সেপ্টেম্বরে। টাটা গাড়ির এই বিশেষ মডেলটির জন্য একটি নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে এই মডেলের বৈদ্যুতিন সংস্করণটির বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৯,১৯১ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে।
১১১৮
টাটা মোটরস যাত্রিবাহী গাড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেশ চন্দ্রের মতে, সেপ্টেম্বরে যাত্রিবাহী গাড়িশিল্পে চাহিদা তীব্র ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার অন্যতম কারণ হল জিএসটি ২.০। নতুন করকাঠামো চালু হওয়ার পর উৎসবের আবহে ক্রেতাদের গাড়ির কেনার চাহিদাকে আরও উৎসাহিত করেছে। বৈদ্যুতিন গাড়ি মিলিয়ে এই মাসে মোট ৬০ হাজার ৯০৭টি যাত্রিবাহী গাড়ি বিক্রি হয়েছে টাটার। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৪১ হাজার ৩১৩ টি গাড়ি বিক্রি হয়েছিল।
১২১৮
সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিক যানবাহনের বিক্রয় ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩৫ হাজার ৮৬২ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে। এক মাসের মধ্যে দেশের ডিলারদের কাছে গা়ড়ি রফতানির পরিমাণ এক লাফে ১৬ শতাংশ বেড়ে ৩৩ হাজার ১৪৪টিতে দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ২৮ হাজার ৬৩১টি।
১৩১৮
মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা দেশীয় বাজারে ৫৬,২৩৩টি গাড়ি বিক্রি করেছে, যা ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রফতানি-সহ মোট ৫৮,৭১৪টি গাড়ি বিক্রি হয়েছে। গত মাসে ৪৩ হাজার ৬৩২টি গাড়ি বিক্রি হয়েছিল মাহিন্দ্রার। ২০২৪ সালে সেই পরিমাণ ছিল আরও কম। অগস্ট ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান বলছে ৪০ হাজার ৫৫৯টি গাড়ি বিক্রি হয়েছিল এই সংস্থার।
১৪১৮
মাহিন্দ্রার বিক্রির রেকর্ড হুন্ডাইকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। নতুন করের আওতায় আসার ফলে মাহিন্দ্রার এক্সইউভি৭০০ ও থর নামের দু’টি এসইউভির ক্ষেত্রে দাম কমার ফলে এসইউভির চাহিদা বেড়েছে। উৎসবের মরসুমে খুচরো বিক্রিতে এগিয়ে মাহিন্দ্রা তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। নবরাত্রির প্রথম নয় দিনে বিক্রিবাটা ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৫১৮
সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বরে হুন্ডাই ৫১,৫৪৭টি গাড়ির পাইকারি বিক্রির কথা জানিয়েছে। এটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিক্রি হওয়া ৫১,১০১টি গাড়ির তুলনায় এটি ০.৯% বেশি। যদিও অগস্টের ৪৪,০০১টি গাড়ির তুলনায় ১৭% বেশি। উৎসবের মরসুমের চাহিদা এবং জিএসটির সুবিধা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে এমনটাই ইঙ্গিত পেয়েছে সংস্থাটি। হুন্ডাই গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১৩ হাজার ১০০টি গাড়ির তুলনায় এ বছর সেপ্টেম্বরে ১৮ হাজার ৮০০টি গাড়ি রফতানি করেছে।
১৬১৮
সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে ২২ সেপ্টেম্বরের আগে শোরুমগুলি জনশূন্য ছিল। অধিকাংশ ক্রেতাই করছাড়ের সুবিধাগুলি নিয়ে গাড়ি বুকিং করতে চেয়েছিলেন। এর ফলে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন ডিলারেরা। জিএসটি সংস্কারের ফলে বেশ কয়েকটি গাড়ির দাম কমানো হয়েছে এবং সেসও বাতিল করা হয়েছে। যে সব ডিলারেরা পুরনো হারে নির্মাতাদের কাছ থেকে গাড়ি কিনেছিলেন তাঁদের জিএসটি এবং সেস-সমেতই গাড়ি কিনতে হয়েছে।
১৭১৮
আসন্ন উৎসবের মরসুমের কারণে ডিলারেরা যে সব গাড়ি মজুত করে রেখেছিলেন, সেগুলি বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ গ্রাহকেরা কেউই পুরনো দামে গাড়ি কিনতে আসেননি। প্রায় সকলেই ২২ সেপ্টেম্বরের পর শোরুমমুখো হয়েছিলেন।
১৮১৮
ডিলারদের তাঁদের নিজের পকেট থেকে গাড়িগুলিতে ছাড় দিতে হয়েছিল। অনুমান, প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ডিলারেরা। সেই টাকা কী ভাবে ফেরত আসবে সে নিয়ে কোনও সুস্পষ্ট দিশা দেখতে পাচ্ছেন না। উৎসবের মরসুম শেষ হওয়ার পরও যদি একই গতিতে গাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকে তবেই এই ক্ষতি পেরিয়ে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা ডিলারদের।