Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Free School Street

Free School Street: বাঁশবন কেটে গড়ে উঠেছিল স্কুল, পরে তার সংলগ্ন রাস্তারই নাম হয় ফ্রি স্কুল স্ট্রিট

পরে অবশ্য বিদ্যালয়ের নামটিও পাল্টে যায়। তবে আজও লোকের মনে রয়ে গিয়েছে সাহেবিয়ানার নামটিই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৪৯
Share: Save:
০১ ১০
ছিল বাঁশবন। সেখানেই পরবর্তীকালে গড়ে উঠল স্কুল এবং স্কুলপাঠ্য বইয়ের প্রতিষ্ঠান। তার থেকেই রাস্তার নাম হল ‘ফ্রি স্কুল স্ট্রিট’। পরে অবশ্য সে নামও পাল্টে যায়। তবে আজও লোকের মনে রয়ে গিয়েছে সাহেবিয়ানার নামটিই।

ছিল বাঁশবন। সেখানেই পরবর্তীকালে গড়ে উঠল স্কুল এবং স্কুলপাঠ্য বইয়ের প্রতিষ্ঠান। তার থেকেই রাস্তার নাম হল ‘ফ্রি স্কুল স্ট্রিট’। পরে অবশ্য সে নামও পাল্টে যায়। তবে আজও লোকের মনে রয়ে গিয়েছে সাহেবিয়ানার নামটিই।

০২ ১০
সাবেক কলকাতায় উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে সমস্যায় পড়তেন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই স্কুল খোলার বিষয়ে উদ্যোগী হন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, নিজেদের সন্তানদের লেখাপড়ার যাতে কোনও অসুবিধে না হয়। পরবর্তীকালে নিজেদের কাজের প্রয়োজনেই তাঁরা ‘নেটিভদের’ শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করে।

সাবেক কলকাতায় উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে সমস্যায় পড়তেন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই স্কুল খোলার বিষয়ে উদ্যোগী হন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, নিজেদের সন্তানদের লেখাপড়ার যাতে কোনও অসুবিধে না হয়। পরবর্তীকালে নিজেদের কাজের প্রয়োজনেই তাঁরা ‘নেটিভদের’ শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করে।

০৩ ১০
এই রকমই একজন ব্রিটিশ শিক্ষাদ্যোগী ছিলেন বুর্চিয়ার সাহেব। ১৭৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় একটি স্কুল শুরু করলেন। ব্রিটিশ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় পরিবারের শিশুদেরই সেখানে পড়ার অধিকার ছিল। লালদিঘি এলাকার ঘন বাঁশবন কেটে সাফ করা জনপদেই পথ চলা শুরু করল সেই প্রতিষ্ঠান।

এই রকমই একজন ব্রিটিশ শিক্ষাদ্যোগী ছিলেন বুর্চিয়ার সাহেব। ১৭৩১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় একটি স্কুল শুরু করলেন। ব্রিটিশ এবং অন্যান্য ইউরোপীয় পরিবারের শিশুদেরই সেখানে পড়ার অধিকার ছিল। লালদিঘি এলাকার ঘন বাঁশবন কেটে সাফ করা জনপদেই পথ চলা শুরু করল সেই প্রতিষ্ঠান।

০৪ ১০
কয়েক বছর পরে সেই স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তত দিনে লালদিঘি সংলগ্ন সেই এলাকা আগের থেকে অনেক বেশি জমজমাট হয়ে উঠেছে। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সেখানে ‘ফ্রি স্কুল সোসাইটি’ শুরু করলেন উইলিয়াম বেইলি। মূলত যুদ্ধে নিহত সেনা পরিবারের সন্তানদের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই স্কুল।

কয়েক বছর পরে সেই স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তত দিনে লালদিঘি সংলগ্ন সেই এলাকা আগের থেকে অনেক বেশি জমজমাট হয়ে উঠেছে। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে সেখানে ‘ফ্রি স্কুল সোসাইটি’ শুরু করলেন উইলিয়াম বেইলি। মূলত যুদ্ধে নিহত সেনা পরিবারের সন্তানদের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এই স্কুল।

০৫ ১০
গভর্নর জেনারেল, বারো জন গভর্নর, গির্জার প্রতিনিধি ছাড়াও কলকাতাবাসী তৎকালীন সমাজের মান্যগণ্য মহলের ছ’জন প্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত এই প্রতিষ্ঠান। তারাই স্থির করতেন কারা এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে।

গভর্নর জেনারেল, বারো জন গভর্নর, গির্জার প্রতিনিধি ছাড়াও কলকাতাবাসী তৎকালীন সমাজের মান্যগণ্য মহলের ছ’জন প্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত এই প্রতিষ্ঠান। তারাই স্থির করতেন কারা এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে।

০৬ ১০
গভর্নররা পালা করে এই প্রতিষ্ঠানে আসতেন পরিদর্শনে। কোম্পানির কর্মচারীদের দানের অর্থে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হত। পড়ুয়াদের চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সার্জেনরাও আসতেন এই প্রতিষ্ঠানে।

গভর্নররা পালা করে এই প্রতিষ্ঠানে আসতেন পরিদর্শনে। কোম্পানির কর্মচারীদের দানের অর্থে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হত। পড়ুয়াদের চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সার্জেনরাও আসতেন এই প্রতিষ্ঠানে।

০৭ ১০
এই ‘ফ্রি স্কুল সোসাইটি’ থেকেই রাস্তার নামকরণ হয় ‘ফ্রি স্কুল স্ট্রিট’। কিন্তু নামকরণের পরে প্রতিষ্ঠানটিই স্থানান্তরিত হয়ে যায়। কারণ পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও বড় জায়গার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। ১৯১৪ সালে এর পরিচালকরা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেন, তাঁদের ‘খিদিরপুর হাউস’ দেওয়া হোক স্কুল নতুন করে শুরু করার জন্য। তাঁদের আবেদন মঞ্জুর হয়। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে খিদিরপুর হাউসে শুরু হল ‘ফ্রি স্কুল সোসাইটি’।

এই ‘ফ্রি স্কুল সোসাইটি’ থেকেই রাস্তার নামকরণ হয় ‘ফ্রি স্কুল স্ট্রিট’। কিন্তু নামকরণের পরে প্রতিষ্ঠানটিই স্থানান্তরিত হয়ে যায়। কারণ পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও বড় জায়গার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। ১৯১৪ সালে এর পরিচালকরা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেন, তাঁদের ‘খিদিরপুর হাউস’ দেওয়া হোক স্কুল নতুন করে শুরু করার জন্য। তাঁদের আবেদন মঞ্জুর হয়। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে খিদিরপুর হাউসে শুরু হল ‘ফ্রি স্কুল সোসাইটি’।

০৮ ১০
এই খিদিরপুর হাউস এর আগে ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি লিমেস্টারের বাসভবন। বিতর্কিত মহারাজ নন্দকুমারের মামলায় লিমেস্টার ছিলেন অন্যতম বিচারপতি।

এই খিদিরপুর হাউস এর আগে ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি লিমেস্টারের বাসভবন। বিতর্কিত মহারাজ নন্দকুমারের মামলায় লিমেস্টার ছিলেন অন্যতম বিচারপতি।

০৯ ১০
১৯১৬ সাল থেকে সাবেক খিদিরপুর হাউসেই চলছে সেই স্কুল। ১৯১৭ সালে এর নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব ওঠে। শেষে ১৯২৩ সালে ‘ক্যালকাটা ফ্রি স্কুল’-এর নতুন নাম হয় সেন্ট থমাস স্কুল। স্বাধীনতার পরে এই প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে যায় অ-ইউরোপীয়দের জন্যেও। ৪, ডায়মন্ড হারবার রোডের এই স্কুলটি কলকাতার প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম। এই স্কুলের মতো বড় ক্যাম্পাস কলকাতার স্কুলগুলিতে বিরল।

১৯১৬ সাল থেকে সাবেক খিদিরপুর হাউসেই চলছে সেই স্কুল। ১৯১৭ সালে এর নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব ওঠে। শেষে ১৯২৩ সালে ‘ক্যালকাটা ফ্রি স্কুল’-এর নতুন নাম হয় সেন্ট থমাস স্কুল। স্বাধীনতার পরে এই প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে যায় অ-ইউরোপীয়দের জন্যেও। ৪, ডায়মন্ড হারবার রোডের এই স্কুলটি কলকাতার প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম। এই স্কুলের মতো বড় ক্যাম্পাস কলকাতার স্কুলগুলিতে বিরল।

১০ ১০
প্রতিষ্ঠান থেকে ফিরে আসি আবার রাজপথে। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাবেক ফ্রি স্কুল স্ট্রিট পরিবর্ধিত হয় ধর্মতলা স্ট্রিট অবধি। ১৯৬৯ সালে পাল্টে যায় এই পথের নাম। বিখ্যাত কবি মির্জা গালিবের সাময়িক কলকাতাবাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের নতুন নামকরণ হয় মির্জা গালিব স্ট্রিট। (ঋণস্বীকার: ১. কলিকাতার রাজপথ সমাজে ও সংস্কৃতিতে: অজিতকুমার বসু, ২. কলিকাতা দর্পণ: রাধারমণ মিত্র,৩. এ হিস্ট্রি অব ক্যালকাটাজ স্ট্রিটস: পি থঙ্কপ্পন নায়ার, ৪. টেন ওয়াকস ইন ক্যালকাটা: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, ৫. এ জে ওয়াকার্স গাইড টু ক্যালকাটা: সৌমিত্র দাস) (ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

প্রতিষ্ঠান থেকে ফিরে আসি আবার রাজপথে। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাবেক ফ্রি স্কুল স্ট্রিট পরিবর্ধিত হয় ধর্মতলা স্ট্রিট অবধি। ১৯৬৯ সালে পাল্টে যায় এই পথের নাম। বিখ্যাত কবি মির্জা গালিবের সাময়িক কলকাতাবাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের নতুন নামকরণ হয় মির্জা গালিব স্ট্রিট। (ঋণস্বীকার: ১. কলিকাতার রাজপথ সমাজে ও সংস্কৃতিতে: অজিতকুমার বসু, ২. কলিকাতা দর্পণ: রাধারমণ মিত্র,৩. এ হিস্ট্রি অব ক্যালকাটাজ স্ট্রিটস: পি থঙ্কপ্পন নায়ার, ৪. টেন ওয়াকস ইন ক্যালকাটা: প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, ৫. এ জে ওয়াকার্স গাইড টু ক্যালকাটা: সৌমিত্র দাস) (ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE