Miss International India 2023 to CDS rank 2 to joining Indian Army Kashish Methwani’s journey to her true calling dgtl
Kashish Methwani
সেরা সুন্দরী থেকে সুপারমডেল! লেখাপড়ায় তুখোড়, সেই কশিশ এখন সেনাবাহিনীর আধিকারিক
পুণের বাসিন্দা কশিশ মেথওয়ানি। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা মাথায় ওঠে তাঁর। সাবিত্রীবাই ফুলে পুণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন পড়াশোনায় তুখোড় কশিশ। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে নিউরোসায়েন্সে গবেষণাপত্র রয়েছে তাঁর।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:২১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ফ্যাশন র্যাম্পের ঝাঁ-চকচকে গ্ল্যামারাস দুনিয়া থেকে সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়ম ও অনুশাসন। দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর পেশা। দু’টি ক্ষেত্রেই স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে কোনও সমস্যা হয়নি এই তরুণীর। তিনি সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তার সার্থক মিশেল। ‘বিউটি উইথ ব্রেনের’ সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি বললেও অত্যুক্তি হয় না।
০২১৮
কোনও একটি ক্ষেত্রে প্রতিভা সীমাবদ্ধ থাকুক সেটা কখনওই চাননি। জীবনে একাধিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। কেরিয়ার শুরু করেছিলেন এক জন মডেল হিসাবে। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে খেতাবও জেতেন। সেই সুন্দরীই হয়ে গেলেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার। মডেল থেকে ভারতীয় সেনার অফিসার হওয়ার কাহিনি সত্যিই চমকপ্রদ।
০৩১৮
কশিশ মেথওয়ানি। পুণের বাসিন্দা। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা মাথায় ওঠে তাঁর। পুণের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন পড়াশোনায় তুখোড় কশিশ। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে নিউরোসায়েন্সে গবেষণাপত্র রয়েছে তাঁর। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার প্রস্তাবও এসেছিল তাঁর কাছে। কিন্তু সব কিছু ছেড়ে সেনায় যোগ দিলেন মেধাবী তরুণী।
০৪১৮
স্থলসেনার আকাশ প্রতিরক্ষা শাখার যোগ্যতা বাছাই পর্বে সারা ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন কশিশ। মডেলিংয়ের দুনিয়ায় সাফল্যের স্বাদ পাওয়ার পরও কশিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কশিশ পেশা বাছাইয়ের কোনও বিকল্প রাস্তায় হাঁটতে চাননি।
০৫১৮
তিনি একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‘আমি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিততে চেয়েছিলাম। এক জন বিজ্ঞানী, এক জন দক্ষ সেনা অফিসারও হতে চেয়েছিলাম। আমি কোনও একটি ক্ষেত্র বেছে নিতে চাইনি। প্রতিটা ক্ষেত্রেই সফল হওয়ার চেষ্টা করেছি। সব ক্ষেত্রেই দক্ষতা অর্জন করতে চেয়েছিলাম।’’
০৬১৮
কশিশ ২০২৪ সালে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিসেস (সিডিএস) পরীক্ষায় বসেন এবং চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে তাঁর প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হয়। লেফটেন্যান্ট পদে সেনায় যোগ দেন কশিশ। শাখা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কশিশ স্থলসেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা শাখায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই বাহিনীতে কাজ করার জন্য নির্ভুলতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অবশ্যই সাহসের প্রয়োজন।
০৭১৮
১১ মাসের কঠোর প্রশিক্ষণের পর কশিশ সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেছেন। ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস (এনসিসি) এর মাধ্যমে সেনাদলে যোগদানের হাতেখড়ি শুরু হয়েছিল কশিশের। কলেজে পড়াকালীন প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে সর্বভারতীয় ‘সেরা ক্যাডেট’-এর পুরস্কারও জিতেছিলেন।
০৮১৮
কশিশ তাঁর পরিবারের প্রথম সেনা আধিকারিক। তাঁর পরিবারে কারও সরাসরি সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকার নজির নেই। তরুণী সেনা অফিসারের বাবা গুরমুখদাস এক জন বিজ্ঞানী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি দফতরের পরিচালক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেছেন তিনি। মা শোভা ঘোরপদীর সেনা স্কুলের শিক্ষিকা। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পরিবেশ ছিল তাঁর বাড়িতে।
০৯১৮
পড়াশোনা এবং গ্ল্যামার দুনিয়ার এ-হেন মেলবন্ধন সচরাচর দেখা যায় না। আর এখানেই সকলকে বিস্মিত করেছেন কশিশ। কশিশের মা শোভা জানিয়েছেন, স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি।
১০১৮
শোভা জানান, কশিশ কেরিয়ার গড়ার জন্য যে যে পথ বেছে নিয়েছিলেন এবং তাতে যা সাফল্য পেয়েছেন তার নেপথ্যে রয়েছে মেয়ের নিজস্ব উদ্যোগ। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া নিয়ে পরিবারে তেমন উৎসাহ ছিল না। কিন্তু তাঁকে কখনও পরিবারের বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।
১১১৮
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার অংশ নেওয়ার সময় কশিশ সিডিএস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। মডেলিং করার সময়ও এতটুকু লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি কশিশ। সময়কে সঠিক ভাবে কী ভাবে কাজে লাগাতে হয় তার জলজ্যান্ত উদাহরণ কশিশ। সকালে সেনার প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য এবং বিকেলে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিতেন তিনি।
১২১৮
একটি সাক্ষাৎকারে কশিশ জানান, তিনি সব সময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে পছন্দ করেন। লক্ষ্য ছিল বহুমুখী ভাবে নিজেকে গড়ে তোলা। তার পরে এমন একটি দিক বেছে নেওয়া যা তাঁর কাছে সবচেয়ে পছন্দের। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা আমাকে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা শিখিয়েছিলেন। এনসিসির পর, প্রতি দিন কলেজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ত না। তাই আমি ওই সময় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছি।’’
১৩১৮
আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জেতার পর, কশিশ এক জন সুপারমডেল হয়ে ওঠেন। সুপারমডেল থেকে সেনাবাহিনীর পদস্থ আধিকারিক হওয়ার যাত্রাপথটি কেমন ছিল তা জানিয়েছেন মেধাবী এই তরুণী। কশিশ স্বীকার করেন, অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করলেও সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের বিষয়ে ততটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না।
১৪১৮
শারীরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁর মনে কিছুটা সন্দেহ ও দ্বিধা কাজ করেছিল। এনসিসির পূর্ববর্তী প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তা কাটিয়ে ওঠেন। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পর কশিশের উপলব্ধি, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা তাঁকে ভয় না পেতে শিখিয়েছে। এনসিসি তাঁকে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করেছে।
১৫১৮
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী আর কঠোর পরিশ্রমী। স্কুলের প্রতিটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখাতেন কশিশ। মডেল হিসাবে সাফল্য পেয়েছিলেন। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার খেতাবও জেতেন। কেন সেনা আধিকারিকের কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং চাকরি বেছে নিলেন তিনি?
১৬১৮
কশিশের উত্তর, ‘‘যখন আমি এনসিসির ক্যাম্পে ছিলাম, তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে দলবদ্ধ ভাবে থাকা, প্রশিক্ষণ নেওয়া, প্যারেডের প্রতি আমার ভালবাসা সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তখনই আমি প্রতিরক্ষায় কেরিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নিই। চাপের মধ্যে থেকেও নিখুঁত ভাবে কাজ করা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সাহস লাগে এই কাজে। তাই এই বিশেষ পেশা বেছে নেওয়া।’’
১৭১৮
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য লম্বা একঢাল চুলকেও বিসর্জন দিতে দু’বার ভাবেননি। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েও সেই খ্যাতিকে হেলায় সরিয়ে দিয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিতর্ক সভা, শুটিং সবেতেই দড় কশিশ। স্কুলে পড়ার সময় ভরতনাট্যম ও তবলাও শিখতেন তিনি।
১৮১৮
অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতেও প্রতিভার ছাপ রেখেছেন কশিশ। বিতর্ক থেকে শুরু করে খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় একের পর পদক জিতেছেন। আর্মি এয়ার ডিফেন্সে সর্বোচ্চ পদক লাভ করেছেন। শুটিং প্রতিযোগিতায় ‘শিখ লি রেজিমেন্ট’ পদক জিতেছেন। শুটিংয়ে অ্যাকাডেমির মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর এসেছে কশিশের ঝুলিতেই।