Opium farming increased in Myanmar, says the UN Office dgtl
Opium Poppy Farming in Myanmar
গৃহযুদ্ধে দীর্ণ দেশ, অমিল খাবার, তার মধ্যেই আফিমচাষের রমরমা! ভারতের পড়শি কি নতুন আফগানিস্তান হওয়ার পথে?
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মায়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের পরস্থিতি উদ্বেগজনক। সে দেশের বহু অংশে ঠিকমতো খেতে পাচ্ছেন না মানুষ। সেখানেই আফিমচাষের রমরমা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত ভারতের পড়শি দেশে গত ১০ বছরের মধ্যে আফিমচাষ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মায়ানমার নিয়ে তেমনটাই জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সকল চাষযোগ্য অঞ্চলে আফিমচাষ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
০২১৮
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে মায়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’।
০৩১৮
পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হয় ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং ‘চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স’ (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), ‘পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ)।
০৪১৮
ইতিমধ্যেই মায়ানমারের ৫০ শতাংশের বেশি অংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশ জানিয়েছে। বস্তুত, রাজধানী নেপিডো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গন এবং আরও কিছু বড় জনপদ-শিল্পাঞ্চলেই এখন জুন্টা সমর্থক সেনার গতিবিধি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের মিজ়োরামেও শরাণার্থী অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর।
০৫১৮
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মায়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের পরস্থিতি উদ্বেগজনক। সে দেশের বহু অংশে ঠিকমতো খেতেও পাচ্ছেন না মানুষ। সেখানে আফিমচাষের রমরমা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
০৬১৮
রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদক এবং অপরাধ দফতরের (ইউএনওডিসি) তরফে মায়ানমারে আফিম নিয়ে করা শেষ সমীক্ষায় উঠে এসেছে, গত বছরের তুলনায় সে দেশে আফিমের চাষ ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
০৭১৮
আগে মায়ানমারে যেখানে ১,১১,৭০০ একর জমি জুড়ে আফিমচাষ হত, সেখানে এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১,৩১,২০০ একর জমি। অনেক আবাদি জমিতেই রমরমিয়ে ফলছে অবৈধ ফসল। তেমনটাই বলছে ইউএনওডিসি-র সমীক্ষা।
০৮১৮
আগে অবৈধ ভাবে আফিমচাষ এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত মাদক তৈরিতে শীর্ষে ছিল আফগানিস্তান। তবে গত কয়েক বছরে আফিমচাষ কমেছে তালিবদের দেশে। অন্য দিকে, মায়নমারে উল্লেখযোগ্য ভাবে আফিমচাষের পরিমাণ বেড়েছে।
০৯১৮
ইউএনওডিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে আফিমচাষ ক্রমাগত হ্রাসের পর মায়ানমারে বৃদ্ধি বিশ্বের অবৈধ আফিমের প্রধান উৎস হিসাবে মায়ানমারের ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করছে।
১০১৮
সম্প্রতি সেই প্রসঙ্গে কথা বলার সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ইউএনওডিসির প্রতিনিধি ডেলফাইন শ্যান্টজ় বলেন, ‘‘মায়ানমারে আফিমচাষের এই রমরমা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, গত কয়েক বছর ধরে সে দেশে আফিম অর্থনীতি কতটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে সেখানে আফিমচাষের পরিমাণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।’’
১১১৮
আফিমের ক্রমবর্ধমান দামই মায়ানমারে আফিমচাষের রমরমা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ২০১৯ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে আফিমের দাম।
১২১৮
ইউএনওডিসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগে যেখানে মায়ানমারে এক কেজি তাজা আফিমের দাম ১৪৫ ডলার ছিল, আজ সেখানে দাম বে়ড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৯ ডলার।
১৩১৮
শ্যান্টজ়ের কথায়, ‘‘মায়ানমারে ক্রমবর্ধমান সংঘাত, বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা এবং আফিমের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে মায়ানমারের কৃষকেরা আফিমচাষের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন। সে দেশে আফিমচাষে আমরা যে বৃদ্ধি দেখেছি তা মায়ানমারের ভবিষ্যতের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।’’
১৪১৮
যদিও ইউএনওডিসি এ-ও জানিয়েছে, ২০২৪ সাল থেকে ২০২৫ সালে মায়ানমারে আফিমচাষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেলেও, প্রতি হেক্টর জমিতে আফিমচাষ থেকে উৎপাদিত আফিমের পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে কম।
১৫১৮
বিশেষজ্ঞদের দাবি, মায়ানমারে আফিমচাষ এবং আফিম উৎপাদনের মধ্যে এই পার্থক্য দেশটির ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে হয়েছে। তীব্র সংঘাত এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে ফসল রক্ষণাবেক্ষণ এবং আফিম উৎপাদন ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে চাষিদের জন্য।
১৬১৮
আফিম গাছ থেকে কুখ্যাত মাদক হেরোইনও পাওয়া যায়। ইউএনওডিসি-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মায়ানমার থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সেই হেরোইন ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি হেরোইন পাচার হত আফগানিস্তান থেকে।
১৭১৮
কিন্তু আফগানিস্তান থেকে উৎপন্ন হেরোইন সরবরাহে ঘাটতির কারণে এখন মায়ানমার সেই জায়গা নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপন্ন আফিমের বিশ্বব্যাপী চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।
১৮১৮
ইউরোপীয় ইউনিয়ন’স ড্রাগস এজেন্সি বা ইইউডিএ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে তাইল্যান্ড থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসা বিমানযাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ কেজি হেরোইন বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। ওই মাদক মায়ানমার এবং এর আশপাশে তৈরি করা হয়েছিল বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।