Secret Mission of Six British Soldiers in Mexico Turns Tragic After 7 Days dgtl
Alpazat Cave
না জানিয়ে বিদেশের গুহায় রহস্যময় অভিযান, ‘রুখে দাঁড়ায়’ গুহা! ৭ দিন পর ভয়ঙ্কর অবস্থা হয় ছয় ব্রিটিশ সেনার
মেক্সিকোর আলপাজাত গুহায় অভিযান চালিয়েছিল ব্রিটিশ সেনার দল। তবে সম্পূর্ণটাই গোপনে, অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানত না মেক্সিকোর সরকার! তাতেই হল বড় বিপদ। সাত দিন ধরে রহস্যময় গুহায় আটকে রইলেন ছয় ব্রিটিশ সেনা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
মেক্সিকোর কোয়েটজালান শহরের কাছে পাথরের তৈরি একটি গুহা। এটি আলপাজাত গুহা নামে পরিচিত। এই গুহাকে ঘিরে রয়েছে একাধিক রহস্যময় গল্প। অনেকেই বলেন গুহা থেকে নাকি হামেশাই ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ আর্তনাদ শোনা যায়।
০২২১
আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, আলপাজাত গুহা নাকি সব কিছু ‘শুনতে পারে’, এমনকি ‘বুঝতেও পারে’। আর যখনই গুহার ভিতর অযাচিত কিছু করার চেষ্টা হয়, তখন গুহা নিজে থেকেই নাকি রুখে দাঁড়ায়।
০৩২১
তা হলে কি এমনই কিছু ঘটেছিল ২০০৪ সালে ছয় ব্রিটিশ সেনার সঙ্গে? কেন তাঁরা গিয়েছিলেন আলপাজাত গুহায়? কিসের সন্ধানে?
০৪২১
কথা হচ্ছে ওই বছরের মার্চ মাসের। সে সময় ব্রিটিশ সেনার মোট ১২ জন সদস্য মেক্সিকোর আলপাজাত গুহায় এক বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল। যদিও ১২ জন সদস্যের মধ্যে ছ’জন গুহার ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন।
০৫২১
ব্রিটিশ সেনার এই অভিযানের কোনও তথ্যই ছিল না মেক্সিকো সরকারের কাছে। শুধু সরকার না, ওই দেশের সংবাদমাধ্যম, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে কেউই নাকি কিচ্ছুটি টের পাননি।
০৬২১
সম্পূর্ণ গোপনে পাড়ি দিয়েছিল ব্রিটিশ সেনা ও নৌবাহিনীর মিলিত একটি দল। তাঁদের সঙ্গে ছিল কিছু দিনের মতো খাবার, বন্দুক, টর্চ, ক্যামেরা এবং বিশেষ রেডিয়ো। সঙ্গে কৃত্রিম অক্সিজেনও রেখেছিলেন সেনারা।
০৭২১
যত সময় এগোতে থাকে, ছ’জন সেনা গুহার আরও ভিতরে প্রবেশ করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে অন্ধকার আরও গাঢ় হতে থাকে। হাওয়ার তেজ বাড়তে থাকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
০৮২১
এরই মধ্যে প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়। গুহার মধ্যে জল ঢুকতে শুরু করে। ঘণ্টাখানেকও পেরোয় না, গুহার সঙ্কীর্ণ রাস্তা তখন এক একটি ছোট নদীর সমান হয়ে পড়ে। সেনাদের ফিরে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়।
০৯২১
রেডিয়োয় যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না আর। শেষ বার রেডিয়োয় সেনাদের তরফ থেকে যে বার্তা আসে, তাতে তাঁরা জানিয়েছিলেন যে অক্সিজেন ফুরিয়ে আসছে। ব্যস! এর পর তাঁদের দিক থেকে আর কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
১০২১
বাইরে থাকা ছ’জন সেনাও বুঝে উঠতে পারছিলেন না, ভিতরে কী অবস্থায় রয়েছেন বাকিরা। যে হেতু মেক্সিকোর কেউই এই অভিযানের কথা জানতেন না, তাই ওই রকম দুর্যোগের পরিস্থিতি দেখেও কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারেননি বাইরে থাকা সেনারা।
১১২১
এই ভাবে দু’দিন কেটে যাওয়ার পরও ভিতরে আটকে থাকা সেনাদের কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে বাইরে থাকা সেনারা স্থানীয়দের বিষয়টি জানাতে বাধ্য হন। আর সেখান থেকেই খবর যায় মেক্সিকো সরকারের কাছে।
১২২১
এর পরেই একেবারে হুলস্থুল পড়ে যায়। নড়েচড়ে বসে মেক্সিকো সরকার। সংবাদমাধ্যম ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে। ব্রিটিশ সেনা কি মেক্সিকোয় গুপ্তচরবৃত্তি করছিল— এমন কিছু প্রশ্নকে শিরোনাম করে খবর ছড়িয়ে পড়ে মেক্সিকোর একাধিক সংবাদপত্রে।
১৩২১
অন্য দিকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হয়ে উঠছিল গুহার মধ্যে। বাকি ছ’জন বেঁচে রয়েছেন কি না তা-ও জানার উপায় ছিল না। অবশেষে ব্রিটিশ সেনার উদ্ধারকারী দল যায় ঘটনাস্থলে।
১৪২১
সাত দিন কেটে গেলেও উদ্ধারকারী দল কোনও খোঁজ পাচ্ছিল না তাঁদের। ছ’জনের এক জনকেও দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। হাল ছেড়ে দেওয়ার অবস্থা এসে গিয়েছিল। সকলেরই মনে হচ্ছিল কেউই বেঁচে নেই।
১৫২১
অষ্টম দিন আরও এক বার চেষ্টা চালায় উদ্ধারকারী দল। আর তাতেই চমকে যায় তারা। দেখা যায়, ছ’জন সেনাই বেঁচে রয়েছেন। গুহার এক প্রান্তে একসঙ্গে বসে আছেন তাঁরা। রুগ্ন মৃতপ্রায় অবস্থায় শেষমেশ উদ্ধার করা হয় তাঁদের।
১৬২১
ব্রিটিশ সরকারকে এই অভিযানের আসল কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু মেক্সিকো সরকারকে কোনও সঠিক উত্তরই দিতে পারেনি তারা। শুধু জানিয়েছিল, এটা কেবল একটি প্রশিক্ষণ অভিযান, আর কিছুই না।
১৭২১
এই উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি মেক্সিকো। অনেকের কাছেই এই অভিযান উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা বা নেটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন)-এর কোনও গোপন অভিযান বলে মনে হয়েছিল।
১৮২১
অনেকে আবার ধারণা করেছিলেন, ব্রিটিশ সেনা গোপনে কোনও অভিযান চালাচ্ছিল। তাঁদের মতে, আলপাজাত গুহার ভিতরে বিশেষ কোনও যন্ত্র বসিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।
১৯২১
কিছু দিনের মধ্যেই বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। সেখান থেকে জানা যায়, এই অভিযান কোনও প্রশিক্ষণের জন্য ছিল না। বরং মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মাটির নীচ থেকে বাইরে কী ভাবে যোগাযোগ বজায় রাখা যায়, তা পরীক্ষা করা।
২০২১
সে সময় মেক্সিকোর অনেকেই বলেন, ব্রিটিশ সেনারা ভবিষ্যতে যুদ্ধের সময় এই যন্ত্র ব্যবহার করতে চেয়েছিল, যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে সুড়ঙ্গ দিয়ে যাওয়ার সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়।
২১২১
যদিও সব দাবিই অস্বীকার করেছিল ব্রিটিশ সরকার। শেষমেশ মেক্সিকো সরকারের তরফেও আর কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। তবে, প্রশিক্ষণ হলেও কেন ব্রিটিশ সেনারা আলপাজাত গুহাই বাছাই করেছিল, আর তা-ও আবার মেক্সিকোর অজান্তে, সে সব প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। তবে স্থানীয়দের মতে, আলপাজাত গুহা নিজেই নাকি চায়নি তার রহস্য ভেদ করা হোক। তাই সেনাদের আটকে রেখে ‘রুখে দাঁড়িয়েছিল’ সে।