Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
who is Shibraj Singh

২২৪০০ কোটির সম্পত্তির মালিক, পোলো খেলতে গিয়ে কোমায় চলে যান, রাজপুত্রের বেঁচে ফেরার গল্প যেন রূপকথা

পোলো গ্রাউন্ডে বিড়লা কাপ চলাকালীন শট মারতে গিয়ে ঝুঁকতেই বিপক্ষ দলের ঘোড়ার আঘাতে ছিটকে পড়ে যান রাজপুত্র। মাথায় আঘাত লেগে কোমায় চলে যান তিনি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩৬
Share: Save:
০১ ২০
Shibraj Singh

ভারতীয় পোলোর মুখ হিসাবে সারা বিশ্বে সুবিদিত ছিল তাঁর নাম। ঘোড়ার পিঠে চাপলে তাঁর রক্তের গতি তাল মিলিয়ে ছুটত বাহনের গতিতে। সেই পোলো খেলাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। যুবরাজ শিবরাজ সিংহের কাছে পোলো শুধু খেলার মাঠেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি ছিল তাঁর নিয়তি।

০২ ২০
Shibraj Singh

শরীরে রাজরক্তের সঙ্গে ধমনীতে বাহিত হত পোলো খেলার পারিবারিক ঐতিহ্য। ২০০৫ সালে পোলো খেলাই তাঁর জীবনকে অন্য খাতে বয়ে নিয়ে যায়। রূপকথার মতো রাজপরিবারে হঠাৎ করেই নেমে এসেছিল বিপদের কালো ছায়া। রাজবংশের উত্তরাধিকারীর জীবনে অভিশাপ ডেকে আনে এই পোলোই।

০৩ ২০
Shibraj Singh

জয়পুরের রামবাগ পোলো গ্রাউন্ডে বিড়লা কাপ চলাকালীন শট মারতে গিয়ে ঝুঁকতেই বিপক্ষ দলের ঘোড়ার আঘাতে ছিটকে পড়ে যান শিবরাজ। প্রচণ্ড আঘাত লাগে মাথায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে দীর্ঘ দু’মাস হাসপাতালের শয্যাতেই কাটান রাজপুত্র। চলে যান কোমায়।

০৪ ২০
Shibraj Singh

সেই সময় রাজপরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। যুবরাজ বেঁচে ফিরবেন, তেমন আশার কথা শোনাতে পারেননি চিকিৎসকেরাও। মারওয়াড়ের রাজকীয় উত্তরাধিকারী আদৌ আর রাজসিংহাসনে বসতে পারবেন কি না, সেই নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল জোধপুর।

০৫ ২০
Shibraj Singh

মারওয়াড় প্রদেশের অংশ জোধপুর স্টেটের রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রাঠৌরদের হাতে। এখনও অবধি রাঠৌরেরাই জোধপুর রাজবংশের ধারক ও বাহক। ১২২৬ থেকে ১৮১৮ অবধি জোধপুর ছিল মারওয়াড় প্রদেশের অধীন। ১৮১৮ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত এই রাজ্যটি ছিল ব্রিটিশ শাসনা

০৬ ২০
Shibraj Singh

রাঠৌর রাজবংশের বর্তমান রাজা দ্বিতীয় গজ সিংহ। তাঁর দুই উত্তরাধিকারী। পুত্র শিবরাজ সিংহ ও কন্যা শিবরঞ্জনী রাজে। জোধপুরের অন্যতম আকর্ষণ উম্মেদ ভবন রাজপরিবারের পারিবারিক আবাসস্থল। তিনটি ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে রাজপ্রাসাদকে।

০৭ ২০
Shibraj Singh

একটি অংশে সপরিবার থাকেন মহারাজা দ্বিতীয় গজ সিংহ। বাকি অংশে আছে রাজপরিবারের সংগ্রহশালা। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত বাসভবনের তৃতীয় অংশটি এখন বিলাসবহুল হোটেল। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে তাজ গ্রুপ। ১৯২৯ সালে এই প্রাসাদ নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন বর্তমান রাজা দ্বিতীয় গজ সিংহের পিতামহ উম্মেদ সিংহ। তাঁর নাম অনুসারেই এই প্রাসাদের নাম উম্মেদ ভবন।

০৮ ২০
Shibraj Singh

১৯২৯-’৪৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ধরে বিদেশি স্থপতি হেনরি ভন ল্যাঞ্চেস্টারের তত্ত্বাবধানে প্রাসাদ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছিল। তৎকালীন এক কোটি টাকার মূল্যে তৈরি করা হয়েছিল রাজভবনটি। ২৬ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে বেলেপাথরের চোখজুড়োনো স্থাপত্যের নিদর্শনটি। ৩৪৭ কক্ষের উম্মেদ ভবন তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল, খরা ও দুর্ভিক্ষে কর্মহীনদের কাজ ও খাবারের সংস্থান করা। ১৯৪৩ সালে এর নির্মাণপর্ব শেষ হয়।

০৯ ২০
Shibraj Singh

রাজতন্ত্র মুছে গেলেও ‘মহারাজা’ উপাধি বহন করে চলেছেন মারওয়াড়ের রাঠৌর বংশ। বংশপরম্পরায় তাঁরা ‘শাসন’ করে আসছেন এই মরুভূমির রাজ্যটি। সেই বংশে ১৯৭৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শিবরাজ সিংহ। মহারাজা দ্বিতীয় গজ সিংহ এবং রানি হেমলতা রাজের একমাত্র পুত্র।

১০ ২০
Shibraj Singh

রাজস্থানের মায়ো কলেজে পড়াশোনা শেষ করেন রাজপুত্র। তার আগে ইংল্যান্ডের ইটন স্কুলে পড়তেন রাজপুত্র। এ ছাড়াও অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী শিবরাজ। পড়াশোনার পাশাপাশি পোলো খেলায় শিবরাজের দক্ষতা বাবা গজ সিংহকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বাবার তত্ত্বাবধানে পোলো খেলায় হাতেখড়ি হয় শিবরাজের। শিবরাজের ঠাকুরদা হনবন্ত সিংহও ছিলেন দক্ষ পোলো খেলোয়াড়।

১১ ২০
Shibraj Singh

জোধপুর ইগলস, জোধপুরের রাজপরিবার এবং স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত পোলো দল। এই দলের নেতৃত্ব দিতেন যুবরাজ শিবরাজ সিংহ। জোধপুর ইগলস এশিয়া মহাদেশ জুড়ে সাফল্য অর্জন করেছিল। মহাদেশের বাইরে ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে ব্রাজ়িলেও ম্যাচ জিতেছিল রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী দলটি।

১২ ২০
Shibraj Singh

মাঠের বাইরে কর্মক্ষেত্রেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছিলেন শিবরাজ। লন্ডন এবং হংকংয়ের দু’টি খ্যাতনামী সংস্থায় কাজ করার পর রাজসম্পত্তি দেখভালের জন্য জোধপুরে ফিরে আসেন শিবরাজ। বাবা গজ সিংহের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্পত্তি আধুনিকীকরণে মন দেন। তাঁর নির্দেশনায় তাজ গ্রুপের সহযোগিতায় উম্মেদ ভবনকে একটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়। তার পরেই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সেই কঠিন সময়ে পরিবার ও ব্যবসার লাগাম হাতে তুলে নেন রাজকন্যা শিবরঞ্জনী।

১৩ ২০
Shibraj Singh

দাদার অনুপস্থিতিতে শক্ত হাতে উম্মেদ ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পারিবারিক ব্যবসাগুলি পরিচালনা করেন কেমব্রিজে পড়া এই রাজকন্যা। একই সঙ্গে মেহরানগঢ় দুর্গের জাদুঘর পুনরুজ্জীবনের দায়িত্বভার এসে পড়ে তাঁর উপর।

১৪ ২০
Shibraj Singh

পরিবারের নিরলস সহযোগিতা ও প্রাণশক্তির প্রাচুর্যের জন্য ধীরে ধীরে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেন রাজকুমার। অবিশ্বাস্য ধৈর্য আর দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা উন্নতি হয় শিবরাজের। সুদীর্ঘ লড়াই ও মনের জোরে উম্মেদ ভবনের দায়িত্বভার আবারও তুলে নেন প্রিন্স অফ জোধপুর।

১৫ ২০
Shibraj Singh

২০১০ সালের মার্চ মাসে, উত্তরাখণ্ডের আসকোটের গায়ত্রী কুমারী পালের সঙ্গে বাগ্‌দান সম্পন্ন হয় ও নভেম্বরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শিবরাজ সিংহ। কনে সেখানকারই এক রাজপরিবারের সন্তান। বিয়ের আসর বসেছিল জয়পুরের রামবাগ প্রাসাদে। অতিথিদের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল আস্ত এক রাজকীয় ট্রেন। ছিল ১৯৩৫ সালের রোল্স রয়েস ফ্যান্টম।

১৬ ২০
Shibraj Singh

রাজকীয় বিবাহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ছিলেন নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র, ভুটানের রানি, কুমারমঙ্গলম বিড়লার মতো শিল্পপতি। স্বামী এবং কন্যা রিয়াকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মুনমুন সেন। অতিথি হিসাবে ছিলেন বলিউড অভিনেতা কবীর বেদীও। ঘোড়সওয়ার, রাজপুতানার ঐতিহ্যবাহী সাজে সজ্জিত বাহিনী আর রাজস্থানি লোকসংস্কৃতির মিশেলের সেই বিয়েতে ছিল খাঁটি রাজকীয় প্রথার প্রতিচ্ছবি।

১৭ ২০
Shibraj Singh

বর-কনের পোশাকেও ফুটে উঠেছিল মারওয়াড়ি রাজপরিবারের ঝলক। শিবরাজ পরেছিলেন জমকালো শেরওয়ানি ও হলুদ রঙের পাগড়ি। বধূবেশী রাজকন্যার পরনে ছিল কারিগরদের হাতে বোনা বিশেষ বিয়ের পোশাক— লাল টকটকে লেহঙ্গা, মুখ ঢাকা মানানসই ওড়না। সঙ্গে রাজপরিবারের সাবেক অলঙ্কার।

১৮ ২০
Shibraj Singh

বর্তমান রাজপুত্র ও রাজবধূর কোল আলো করে এসেছে রাজপরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম। শিবরাজ ও গায়ত্রীর হয়েছে এক পুত্র ও কন্যাসন্তান। ২০১১ সালে জন্ম হয় রাজকুমারী ভারাকুমারী রাজের। যুবরাজ সিরাজদেও সিংহের জন্ম ২০১৫ সালে।

১৯ ২০
Shibraj Singh

জোধপুরের বর্তমান মহারাজা দ্বিতীয় গজ সিংহ রাজা হয়েছিলেন মাত্র ৪ বছর বয়সে। তাঁর বাবা মহারাজা হনবন্ত সিংহ ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯, মাত্র ২ বছর। স্ত্রী রাজমাতা কৃষ্ণকুমারীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৫০ সালে অভিনেত্রী জুবেইদাকে বিয়ে করেন মহারাজা। এর ঠিক দু’বছরের মধ্যেই এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁদের দু’জনেরই মৃত্যু হয়। তার পরই মহারাজা উপাধি পান শিশু গজরাজ।

২০ ২০
Shibraj Singh

বর্তমানে এই রাজপরিবারের উপার্জনের মূল উৎস হোটেল ব্যবসা। জোধপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়চূড়ায় রয়েছে উম্মেদ ভবন। মারকানা মার্বেল-বার্মিজ টিক উডের চোখধাঁধানো অন্দরে ৩৪৭টি কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিশাল ব্যাঙ্কোয়েট হল। এতে প্রায় ৩০০ অতিথির আপ্যায়ন সম্ভব। ২২ হাজার ৪০০ কোটি মূল্যের সেই প্রাসাদের মালিকানা রয়েছে এই রাজপরিবারের সদস্যদের হাতে।

সব ছবি:সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy