একটি অংশে সপরিবার থাকেন মহারাজা দ্বিতীয় গজ সিংহ। বাকি অংশে আছে রাজপরিবারের সংগ্রহশালা। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত বাসভবনের তৃতীয় অংশটি এখন বিলাসবহুল হোটেল। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে তাজ গ্রুপ। ১৯২৯ সালে এই প্রাসাদ নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন বর্তমান রাজা দ্বিতীয় গজ সিংহের পিতামহ উম্মেদ সিংহ। তাঁর নাম অনুসারেই এই প্রাসাদের নাম উম্মেদ ভবন।
১৯২৯-’৪৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ধরে বিদেশি স্থপতি হেনরি ভন ল্যাঞ্চেস্টারের তত্ত্বাবধানে প্রাসাদ নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছিল। তৎকালীন এক কোটি টাকার মূল্যে তৈরি করা হয়েছিল রাজভবনটি। ২৬ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে বেলেপাথরের চোখজুড়োনো স্থাপত্যের নিদর্শনটি। ৩৪৭ কক্ষের উম্মেদ ভবন তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল, খরা ও দুর্ভিক্ষে কর্মহীনদের কাজ ও খাবারের সংস্থান করা। ১৯৪৩ সালে এর নির্মাণপর্ব শেষ হয়।
রাজস্থানের মায়ো কলেজে পড়াশোনা শেষ করেন রাজপুত্র। তার আগে ইংল্যান্ডের ইটন স্কুলে পড়তেন রাজপুত্র। এ ছাড়াও অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী শিবরাজ। পড়াশোনার পাশাপাশি পোলো খেলায় শিবরাজের দক্ষতা বাবা গজ সিংহকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বাবার তত্ত্বাবধানে পোলো খেলায় হাতেখড়ি হয় শিবরাজের। শিবরাজের ঠাকুরদা হনবন্ত সিংহও ছিলেন দক্ষ পোলো খেলোয়াড়।
মাঠের বাইরে কর্মক্ষেত্রেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছিলেন শিবরাজ। লন্ডন এবং হংকংয়ের দু’টি খ্যাতনামী সংস্থায় কাজ করার পর রাজসম্পত্তি দেখভালের জন্য জোধপুরে ফিরে আসেন শিবরাজ। বাবা গজ সিংহের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্পত্তি আধুনিকীকরণে মন দেন। তাঁর নির্দেশনায় তাজ গ্রুপের সহযোগিতায় উম্মেদ ভবনকে একটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়। তার পরেই ঘটে যায় সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সেই কঠিন সময়ে পরিবার ও ব্যবসার লাগাম হাতে তুলে নেন রাজকন্যা শিবরঞ্জনী।
২০১০ সালের মার্চ মাসে, উত্তরাখণ্ডের আসকোটের গায়ত্রী কুমারী পালের সঙ্গে বাগ্দান সম্পন্ন হয় ও নভেম্বরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শিবরাজ সিংহ। কনে সেখানকারই এক রাজপরিবারের সন্তান। বিয়ের আসর বসেছিল জয়পুরের রামবাগ প্রাসাদে। অতিথিদের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল আস্ত এক রাজকীয় ট্রেন। ছিল ১৯৩৫ সালের রোল্স রয়েস ফ্যান্টম।
রাজকীয় বিবাহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ছিলেন নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র, ভুটানের রানি, কুমারমঙ্গলম বিড়লার মতো শিল্পপতি। স্বামী এবং কন্যা রিয়াকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন মুনমুন সেন। অতিথি হিসাবে ছিলেন বলিউড অভিনেতা কবীর বেদীও। ঘোড়সওয়ার, রাজপুতানার ঐতিহ্যবাহী সাজে সজ্জিত বাহিনী আর রাজস্থানি লোকসংস্কৃতির মিশেলের সেই বিয়েতে ছিল খাঁটি রাজকীয় প্রথার প্রতিচ্ছবি।
জোধপুরের বর্তমান মহারাজা দ্বিতীয় গজ সিংহ রাজা হয়েছিলেন মাত্র ৪ বছর বয়সে। তাঁর বাবা মহারাজা হনবন্ত সিংহ ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯, মাত্র ২ বছর। স্ত্রী রাজমাতা কৃষ্ণকুমারীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৫০ সালে অভিনেত্রী জুবেইদাকে বিয়ে করেন মহারাজা। এর ঠিক দু’বছরের মধ্যেই এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁদের দু’জনেরই মৃত্যু হয়। তার পরই মহারাজা উপাধি পান শিশু গজরাজ।
বর্তমানে এই রাজপরিবারের উপার্জনের মূল উৎস হোটেল ব্যবসা। জোধপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়চূড়ায় রয়েছে উম্মেদ ভবন। মারকানা মার্বেল-বার্মিজ টিক উডের চোখধাঁধানো অন্দরে ৩৪৭টি কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিশাল ব্যাঙ্কোয়েট হল। এতে প্রায় ৩০০ অতিথির আপ্যায়ন সম্ভব। ২২ হাজার ৪০০ কোটি মূল্যের সেই প্রাসাদের মালিকানা রয়েছে এই রাজপরিবারের সদস্যদের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy